ঢাকা মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ, ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের জন্মশত বার্ষিকী


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২, ২০১৮, ১০:১৩ পিএম আপডেট: সেপ্টেম্বর ২, ২০১৮, ১০:১৪ পিএম
মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কের জন্মশত বার্ষিকী

শ্রদ্ধা ভালবাসা কৃতজ্ঞতা হে বঙ্গবীর আপনার তরে!

কমিউনিটি কাজের জন্য লন্ডনের টাওয়ার হেমলেট বারা ও সংশ্লিষ্ট এলাকাটি বাঙালি কমিউনিটির এক তীর্থ স্থান। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজনীতি, সামগ্রিক উন্নয়ন ভবনা প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ সেখানে জড়ো হন, কথা বলেন, কাজ করেন কমিউনিটির কল্যাণে স্ব স্ব অবস্থান থেকে।

প্রয়াত মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী বাংলাদেশের কৃতি সন্তান। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনে তার ভূমিকা বাঙালিকে করেছে চিরঋণী। লন্ডনে প্রয়াত সর্বাধিনায়কের জন্মশত বার্ষিকী উৎযাপন হবে সে লক্ষে কমিনিউটির বিশিষ্টজনের উপস্থিতিতে ইস্ট লন্ডনে এক মতবিনিময় সভায় উপস্থিত হওয়ার নিমন্ত্রণ পেলেও সময় স্বল্পতার কারণে উপস্তিত হতে পারিনি। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আয়োজকদের তরে, তবে এই মহতী কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত রাখতে পেরে এমনই একজন মহান ব্যক্তি সম্পর্কে জানার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে তা এক ভিন্ন আত্মতৃপ্তি।  

করিতকর্মা মহান এই ব্যক্তির জন্মশত বার্ষিকী উৎযাপনের বিশেষ আয়োজনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন আপনারা সকলেই thoughtful ও স্ব-শিক্ষিত। শিক্ষিত হইলেই thoughtful হবেন এমন কোনো গ্যারান্টি নেই। স্ব-শিক্ষিত এই জন্যই বললাম যে, শুধু শুধু সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত গ্রেজুয়েটদের নিয়ে সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন সম্ভব হবে না যতক্ষণ না পর্যন্ত শিক্ষার পাশাপাশি আমাদের মানবিক নৈতিক চারিত্রিক গুণাবলীর সু -সমন্বয় হবে। বিশেষ করে কৃতজ্ঞতাবোধ!       

প্রয়াত জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর সাহেবের বীরত্বগাথা দেশপ্রেম, কর্তব্যনিষ্ঠা, সততা, একাডেমিক যোগত্যা, গৌরবগাঁথা, ঐতিহাসিক কর্মযজ্ঞ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের কাছে অনুকরণীয় অনুসরণীয় ও শিক্ষিণীয় হওয়া উচিৎ। মহান এই ব্যক্তি বাংলাদেশ নামক স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র তৈরিতে, আমাদেরকে ভৌগোলিক ভাবে পরিচয় করিয়ে দিতে, গাঢ় লাল সবুজের রক্তিম পতাকা অর্জনে দীর্ঘ নয় মাস একটি রক্তক্ষয়ী সশস্র আন্দোলন সংগ্রামকে সু-শৃঙ্খল ভাবে পরিচালনা করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমন এক জেনারেলের অবদান ও ভূমিকাকে স্মৃতিপটে ধরে রাখার জন্য লন্ডনের এই আয়োজন হতে পারে এমনই এক ইতিহাসের ঐতিহাসিক দলিল।  

প্রয়াত জেনারেল ও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ককের জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে একটি স্বারক গ্রন্থ প্রকাশ হচ্ছে। সেই গ্রন্থে এই মহান বীর সম্পর্কে কিছু লেখার সুযোগ কে হারাতে চায়। কিন্তু অজ্ঞতা opportunity কে কাজে লাগাতে প্রায়ই অন্তরায় হয়ে কাজ করে। এই মহান ব্যক্তিকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আমি যে সমস্যায় পড়েছি সেটা হল বাংলা সেই প্রবাদের মত " সাধ আছে সাধ্য নেই, প্রয়াত জেনারেল সম্পর্কে আমি যে জ্ঞান আরোহন করেছি তা অতি প্রাথমিক। এমনই একজন ব্যক্তি সম্পর্কে লিখলাম যার সম্পর্কে স্মৃতিচার করতে গিয়ে আজ উপলব্দি করছি এই মহামানবকে নিয়ে আরো বেশি বেশি পড়াশুনা করা উচিৎ ছিল।

আমাদের সিলেটে একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে "বাড়ির গরু বাড়ির ঘাস খায় না, শুনতে বিশ্রী হলেও ভাবার্থ অর্থবহন করে --আমার বেলায় অনেকটা এমনই হয়েছে। আমরা প্রায়ই আমাদের আসে পাশের ইতিহাস ঐতিহ্যগাঁথা ঐতিহাসিক নিদর্শন, মহান ব্যক্তি বিশেষকে জানতে কৃপণতা করি। ইতিহাস ঐতিহ্য ব্যক্তি বিশেষের মহানুবতা গৌরবগাথা অবদান আত্ত্বত্যাগকে স্বীকার করতে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ থাকতে হয়। আমাদের অর্জিত তথ্য ভিত্তিক সঠিক জ্ঞান ইতিহাস বিকৃতিকে কঠোর হস্তে দমন করতে পারে। জাতির বৃহৎ স্বার্থে ব্যক্তি বিশেষের আত্মত্যাগ নিঃস্বার্থতা দেশপ্রেমকে সম্মান দেখানো সুনাগরিকের দায়িত্ব নয় কি?  

মাঝে মাঝে মনে হয় আমরা বড়ই অকৃতজ্ঞ। তবে ইহা ঠিক প্রকৃতিগতভাবে অধিকাংশ মানুষই আত্ম-সর্বস্ব, অকৃতজ্ঞ ও স্বার্থপর। উপকারীর উপকার স্বীকার করতে সে কুণ্ঠাবোধ করে। নিজের যোগ্যতার বাইরেও সে সব সময় অন্যদের প্রশংসা ও স্বীকৃতির আসা করে। কিন্তু অপরের ক্ষেত্রে সে বড়ই কৃপণ। যার কাছে সে সবচেয়ে বেশি ঋণী তাকেই সে সবচেয়ে বেশি তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করার চেষ্টা করে। এই মহা মানবকে যেভাবে আমাদের স্বরণ রাখা উচিৎ ছিল, যেভাবে তাহার প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধ জানানো উচিৎ ছিল তা আমরা করছিনা কেন সেই প্রশ্নের উত্তর অতি সংক্ষপে আমাদের অকৃতজ্ঞতাবোধ।    

অমরত্ব অর্জন কি খুবই দুঃসাধ্য? না, কোনো ব্যক্তির সৎ সু-কর্ম মৃত্যুর পরও তাকে উপকৃত মানুষের মধ্যে বাঁচিয়ে রাখে। পৃথিবীতে বহু দার্শনিক, বিজ্ঞানী, লেখক, কবি, সমাজ ও ধর্ম সংস্কারক ও পণ্ডিত আছেন যাদের আদর্শ শত শত বছর ধরে মানুষ অবলম্বন করছে। সুতরাং কর্মের মধ্যে বেঁচে থাকাই প্রকৃত অমরত্ব। কোনো ব্যক্তির কর্ম বা আদর্শ যদি প্রজন্ম স্মরণে রাখে বা নিজেদের কর্মে প্রতিফলন ঘটায় তাহলে সেই ব্যক্তি তার কর্মের মাধ্যমে অমরত্ব লাভ করে। প্রয়াত জেনারেল এম এ  জি ওসমানী এমনি এক ব্যক্তিত্ব। দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ মুক্তিযুদ্ধে সমরবাহিনীর প্রধান এই জেনারেলের সুচিন্তিত সমরকৌশল যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য ছিল প্রধান সহায়ক শক্তি।

আজ অনেকেই, বিশেষ করে বর্তমান প্রজন্ম আমরা ভুলে যেতে বসছি প্রয়াত এই জেনারেলের মৃত্যু ও জন্ম বার্ষিকী। ভুলে যেতে বসেছি একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠায় এই মহা মানবের অবদান আত্মত্যাগের বীরত্বগাঁথা। আমার কাছে প্রায়ই মনে হয় সারা জীবন এই মহান ব্যক্তির প্রতি আমরা নিম্নতম কৃতজ্ঞতাবোধ দেখাতে পারিনি। দায় ছাড়া ভাবে কয়েক জন মিলে তার জন্ম বা মৃত্যু দিবসে হজরত শাহজালালের মাজারে মিলাদ মাহফিল ফিরনি বিতরণ বা কবর জিয়ারত আয়োজন করলেই কি মুক্তিযুদ্ধে সমরবাহিনীর প্রধান এই জেনারেলকে নতুন প্রজন্মের কাছে অমর রাখা সম্ভব? ভাবতে হবে কৃতজ্ঞতাবোধে দায়িত্ববোধ থেকে কিভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে এমন কীর্তিগাঁথা ব্যক্তিত্ত্বের বীরত্বগাঁথা ইতিহাস সঠিক ভাবে উপস্থাপন করা যায়। ইতিমধ্যে নতুন প্রজন্ম ভুলে যেতে বসেছে মাওলানা ভাসানী, তাজউদ্দীন আহমদ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ দেশের অনকে কৃতি সন্তানকে। আমাদের মনে রাখতে হবে শেকড় ভুলে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা কেবল ব্যর্থতায় পর্যুবসিতই হয় না সংকরায়নও ঘটায়।

জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর একাডেমিক শিক্ষা সাফল্য কৃতিত্ব আমাকে ভাবিয়ে তুলেছে। নিঃসন্দেহে তিনি ছিলেন একজন জ্ঞানী গুণী আলোকিত ব্যাক্তিত্ব। বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী এবং মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ১৯১৮ সালের ১ নভেম্বর সুনামগঞ্জে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৩৪ সালে তিনি সিলেট সরকারি হাইস্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৩৮ সালে আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৩৯ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ফেডারেল পাবলিক সার্ভিস কমিশনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সাফল্য লাভ করেন।

একই সময়ে তিনি রাজকীয় সামরিক বাহিনীতে জেন্টলম্যান ক্যাডেট নির্বাচিত হন। ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে যোগ না দিয়ে তিনি ১৯৩৯ সালের জুলাই মাসে দেরাদুনে ব্রিটিশ ভারতীয় সামরিক একাডেমী থেকে সামরিক কোর্স সম্পন্ন করে অক্টোবর ১৯৪০ রাজকীয় বাহিনীতে কমিশন্ড অফিসার হিসেবে যোগ দেন। ১৯৪১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ক্যাপ্টেন পদে উন্নীত হন। ১৯৪২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ওসমানী মেজর পদে উন্নীত হয়ে ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তিনি বার্মা রণাঙ্গনে ব্রিটিশ বাহিনীর অধিনায়করূপে যুদ্ধ করেন। ১৯৪৭ সালে সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসার কোর্স সম্পন্ন করার পর ওসমানী লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে নিয়োগের জন্য মনোনীত হন।

ভারত বিভাগের পর ১৯৪৭ সালের ৭ অক্টোবর তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং পরদিনই লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন। ১৯৪৮ সালে তিনি কোয়েটা স্টাফ কলেজ থেকে পিএসসি ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৪৯ সালে তাকে সেনাবাহিনীর চীফ অব দি জেনারেল স্টাফের সহকারি নিয়োগ করা হয়। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ওসমানী পর পর চতুর্দশ পাঞ্জাব রেজিমেন্টের নবম ব্যাটালিয়নে রাইফেল কোম্পানির পরিচালক, পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের অতিরিক্ত কম্যান্ডান্ট এবং সেনাবাহিনীর জেনারেল স্টাফ অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৬ সালে তিনি কর্নেল পদে উন্নীত হন। এরপর তিনি আর্মি হেডকোয়ার্টারে জেনারেল স্টাফ ও মিলিটারি অপারেশনের ডেপুটি ডিরেক্টর নিযুক্ত হন। ১৯৬৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত দীর্ঘ দশ বছর তিনি এ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

আতাউল গণি ওসমানী ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। সত্তরের সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হিসেবে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মুজিবনগরে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হলে ওসমানী বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী ও মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তিনি বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর জেনারেল পদে উন্নীত হন এবং তার এ পদোন্নতি ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর করা হয়। ১৯৭২ সালের ৭ এপ্রিল সেনাবাহিনীতে জেনারেল পদ বিলুপ্ত হওয়ার পর তিনি সামরিক বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এরপর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হন এবং জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ ও বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেন।

ওসমানী ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং নতুন মন্ত্রিসভায় ডাক, তার ও টেলিফোন, যোগাযোগ, জাহাজ চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ ও বিমান চলাচল মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন। ১৯৭৪ সালের মে মাসে ওসমানী মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন। ১৯৭৫ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে দেশে একদলীয় সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনের বিরোধিতা করে তিনি যুগপৎ সংসদ-সদস্য পদ এবং আওয়ামী লীগের সদস্য পদ ত্যাগ করেন।

১৯৭৫ সালের ২৯ আগস্ট রাষ্ট্রপতি খোন্দকার মোশতাক আহমদ তাকে রাষ্ট্রপতির প্রতিরক্ষা বিষয়ক উপদেষ্টা নিয়োগ করেন। কিন্তু ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে চার জাতীয় নেতার হত্যাকান্ডের পরেই তিনি পদত্যাগ করেন। জেনারেল ওসমানী ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় জনতা পার্টি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন এবং দলের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ১৯৭৮ সালে গণতান্ত্রিক ঐক্যজোট মনোনীত প্রার্থী রূপে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ১৯৮১ সালে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রার্থী হিসেবে পুনরায় তিনি রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।

দেশ স্বাধীনের প্রায় অর্ধশত বছর পরেও আজকে মুক্তিযুদ্ধের যেমন বিরোধীতা হচ্ছে তেমনি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে ব্যবসা বাণিজ্য হচ্ছে। প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা রয়েই যাচ্ছেন পর্দার আড়ালে। না খেয়ে না পরে বিনা চিকিৎসায় কতোশত মুক্তিযোদ্ধা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অসম্মান নিয়ে স্বাধীন দেশে স্বাধীনতার অর্জনকে ভোগ করে অনেক মুক্তিযুদ্ধা ইহলোক ত্যাগ করতে পারেননি।    
 
দুঃখ জনক হলেও সত্য যে, বাংলাদেশে স্বাধীনের পরবর্তী মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস প্রামান্য দলিল তৈরি করতে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত সরাষ্ট্রীয় ভাবে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চর্চা প্রায় বন্ধ ছিল, যা চলত তাও রাষ্ট্রীয় ভাবে বিকৃত। ঐ সময়টাতে বাংলাদেশে যারা বড় হয়েছে তারা জানে না বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস। জানে না প্রয়াত জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানী সহ অনেক বীরের বীরত্বগাথা। আফসোস হয় স্বাধীনতার প্রায় অর্ধশতাব্দী পরও বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন নতুন তালিকা করতে হয়। শুনতে হয় নব্য মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা। বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি তাই মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রজন্ম ও বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে দৃষ্টিভঙ্গিগত অমিল হওয়াটা স্বাভাবিক। স্বাধীনতার মূল চেতনা, মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগ, পাকিস্তানি বাহিনীর অবর্ণনীয় নির্যাতন, শহীদদের সম্মান ও মর্যাদা ইত্যাদির ব্যাপারে কোনো দ্বিমতই গ্রহণযোগ্য নয়- তা মেনে নেয়াটাই কস্টকর।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশেই অনেক রক্তাক্ত ও সশস্ত্র সংগ্রাম হয়েছে। যার মধ্য দিয়ে অনেক দেশ স্বাধীনও হয়েছে। কিন্তু সেসব দেশে স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর মাঝে বিভক্তি পরিলক্ষিত হয়নি, যেমনটা বাংলাদেশে দেখা যায়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিসংগ্রাম নিয়ে অনেক মিথ্যাচার রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্মকে মুক্তি সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের বিকৃত ইতিহাস শিক্ষা উপহার দেয়ার অপচেষ্টা হয়েছে।

দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল এক্ষেত্রে একে অপরকে আজওবধি দোষারোপ করেই আসছে। আমার কাছে প্রায়ই মনে হয় দেশের রাজনৈতিক দল গুলোর আদর্শিক ভিত্তি অতিরিক্ত দুর্বল হওয়ার কারণে এরা ধর্ম, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতার চেতনাও সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে জনগণের কাছে ভিড়তে চায়। এগুলোকে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের হাতিয়ার হিসাবে পরিচিত যা মোটেই কাম্য নয়।

একটি দেশের ইতিহাস রচনার দায়িত্ব প্রকৃত অর্থে রাজনীতিবিদদের নয়, ইতিহাস রচনা করবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, ঐতিহাসিকবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা। দুর্ভাগ্য আমাদের, এদেশের বুদ্ধিজীবীদের বড় একটি অংশ রাজনীতিবিদদের চেয়েও বড় রাজনীতিবিদ, দলীয় কর্মীদের চেয়েও অধিক চাটুকার, দলীয় নেতা কর্মীদের চেয়েও একটু বেশি দলবাজ ধান্ধাবাজ।

যারা জাতীয় স্বার্থের চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়েছে, যারা যুদ্ধের নামে নিজেদের ভাগ্য গোছাতে ব্যস্ত ছিল ,যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, যারা পাকিস্তানের হত্যা, লুটপাট, ধর্ষণের সহযোগী থাকার পরও স্বাধীনতার পর পরই ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ খেতাব নিয়েছিল তারাই প্রকৃত ইতিহাসকে ভয় পায়। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে অনেক তথ্য বিভ্রান্তি হয়েছে। কিন্তু সত্য হচ্ছে, অসীম ত্যাগ ও রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। রক্ত দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতা আমাদের অহংকার, আমাদের আবেগ ও নতুন প্রজন্মের পথচলার পাথেয়। তালিকা অনুযায়ী দেশে এখনও লক্ষাধিক মুক্তিযোদ্ধা জীবিত আছেন। যারা প্রত্যেকেই ইতিহাসের সাক্ষী।

এদের একেকজন ব্যক্তির মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাসেরও একেকটি অংশের মৃত্যু ঘটবে। যে সরকার -ই  ক্ষমতায় থাকবে মনে রাখতে হবে দায়িত্বে থেকে দায় এড়ানো দায়িত্বহীনতা। সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও উদ্যোগের মাধ্যমে অচিরেই মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের নির্মহ চিরন্তন শ্বাশত ইতিহাস তৈরিতে এগিয়ে আসা সময়ের দাবি।

দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি উন্নয়ন ধারা প্রবাহমান। দেশ সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে তর্ক বির্তক করতে চায় না ,শুনতে ও চায় না। স্বাধীনের অর্ধশতাব্দী পরে একটি সুখী সমৃদ্ধ আত্মমর্যাদা সম্পন্ন স্বাধীন স্বনির্ভর দেশ ও জাতি হিসাবে বিশ্বের বুকে বাঙালী মাথা উঁচু করে নিজেকে বাঙালী হিসাবে পরিচয় দিবেন তুন প্রজন্ম তাই চায়।

মহান এই ব্যক্তির জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে তাহার স্মৃতিচারণ ও তাকে শ্রদ্ধাবনত চিত্তে সম্মান জানতে গিয়ে আমার অগোছালো প্রাসঙ্গিক আলোচনার জবানিপাত করতে হবে। পরিশেষে একটি দাবিই রেখেই শেষ করতে চাই, মহান ঐ ব্যক্তিটির জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি বিশেষ দিন নির্ধারণ করলে শুধু তাহার প্রতি সম্মান দেখানো হবে না মুক্তিযুদ্ধের প্রতিও সম্মান দেখানো হবে, বিষয়টি যথাযত কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছি।   

আজীবন অকৃতদার জেনারেল আতাউল গণি ওসমানী ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা অনন্য সমরকৌশলী মহান ব্যক্তিত্বপ্রয়াত এম এ জি ওসমানীর ১০০ তম জন্মশত বার্ষিকীতে স্মরণ করি বিনম্র শ্রদ্ধায়। সাথে সাথে পরম করুণাময়ের কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন এই মহান ব্যক্তিকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করেন, আমিন।

নজরুল ইসলাম
কলামিস্ট ,ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস, লন্ডন
আজীবন সদস্য ,বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন
মেম্বার, দি ন্যাশনাল অটিষ্টিক সোস্যাইটি ইউনাটেড কিংডম।

গোনিউজ২৪/এআরএম

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ