ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাবা,তুমি কাঁদতেছ যে!


গো নিউজ২৪ | ফারজানা আক্তার  প্রকাশিত: জুন ৪, ২০১৮, ১২:০১ পিএম
বাবা,তুমি কাঁদতেছ যে!

মেয়েদের জীবনে তিন ধরণের পুরুষ খুব বেশি প্রভাব ফেলে।  এক : বাবা, দুই : স্বামী, তিন : নিজের পেটের ছেলে। প্রতিটা মেয়েকে তার বাবার রাজকন্যা বলা হয়।  মেয়েরাও নিজেদেরকে তাদের বাবার রাজকন্যায় মনে করে। ভুল তো কিছু মনে করে না! প্রতিটা বাবার কাছেই তার মেয়ে রাজকন্যা।  বাবার রাজকন্যারা স্বামীর ঘরে রাজরানী হয়ে প্রবেশ করে। এই রাজকন্যারা আবার নিজের ঘরে রাজপুত্রের জন্ম দেয়। জীবনটা সুন্দর, এবং প্রতিটা সম্পর্ক চক্রাকারে এভাবে ঘুরতে থাকে। 

একটা অডিও প্রকাশ হয়েছে।  যাদের সাহস খুব বেশি তারা হয়তো পুরোটা শুনেছেন। আমার মতো দুর্বল হৃদয়ের মানুষ ১-২মিনিট শুনেই কাত! তবে আমি বিরতি দিয়ে দিয়ে পুরোটা শোনার চেষ্টা করেছি। স্বামীকে কলে পাওয়ার জন্য একজন স্ত্রী যখন অনবরত দোয়া পড়ে যাচ্ছিলেন, সেইটুকু শোনার পর আমি পরের অংশটুকু শোনার সাহস করি নি। সাহস করি নি কথাটা না হয়ে হয়তো হবে আমার শরীর, মন সেই ধকলটা নিতে পারে নি।  

আমি একজন কন্যা। আমার বাপের বড় কন্যা। একরামুল হকের পরিবারের সাথে আমার পরিবারের খুব মিল রয়েছে।  তার বড় দুই কন্যা, পুত্র সবার ছোট। আমার বাপেরও বড় দুই কন্যা, পুত্রটা সবার ছোট। একরামুল হক রাজনীতি করতেন, আমার বাবাও করেন। একরামুল হক কতটা সাহসী ছিলেন আমার জানা নেই, তবে তিনি যে সাহসী ছিলেন সেই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।  একটা মানুষ সাহসী না হলে মৃত্যুমুখেও নিজের মেয়েকে ঘুমিয়ে যেতে বলতে পারে না! একটা মানুষ সাহসী না হলে মৃত্যুমুখেও মেয়ের ফোন বারবার রিসিভ করে কথা বলে যেতে পারে না!  তবে আমার বাবা সাহসী বটে। অন্যায়ের সাথে আপোষ না করে প্রতিনিয়ত হুমকি ধামকিকে তোয়াক্কা না করে নিজের সততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছেন। আমার বাবা যতক্ষণ ঘরের বাহিরে থাকেন ততক্ষন আমাদের কলিজা শুকিয়ে এইটুকু হয়ে থাকে।  তিনি ঘরে ফিরলেই যেন আমাদের স্বস্তি।  যেহেতু আমি বাসায় থাকি না, তাকে প্রতিদিন ফোন দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করতে হয়, 'আব্বু বাসায় গেছেন? কখন যাবেন?'

'আব্বু, ভালো আছেন' এই প্রশ্নটা প্রায় তাকে আমি জিজ্ঞেস করি না। কিন্তু  'আব্বু বাসায় গেছেন? কখনো যাবেন?' এই প্রশ্নটা দুনিয়াতে যত যাই হয়ে যাক আমি জিজ্ঞেস করি।  হয়তো সেই জন্যই একরামুল হকের মেয়ের জায়গায় আমি নিজেকে খুব সহজে কল্পনা করতে পারছি।  ওই মেয়েটারও বাপের মতো সাহস! তা না হলে এমন ভয়ঙ্কর এক কলের সাক্ষী হয়েও এখনো টিকে আছে! আমি হলে তো সাথে সাথেই নাই হয়ে যেতাম।  কি ভয়ঙ্কর এক ঘটনার সাক্ষী হলো একটি পরিবার! দুইটি কন্যাসন্তান! একজন স্ত্রী!

এই দেশে তো পিতৃহত্যার বিচার করা হয়।  একরামুল হকের মেয়েরা পাবে তো তাদের বাবার হত্যার বিচার? নাকি পিতৃহত্যার বিচার শুধু উপরের মহলের মানুষদের জন্যই! সাধারণ মানুষদের জন্য শুধু কান্না আর বুক ফাটা আর্তনাদ! আমি ধরে নিচ্ছি ক্ষমতার গদিতে যারা বসে আছেন তারা সবাই বিচক্ষণ এবং যোগ্য মানুষ। একজন বিচক্ষণ, শিক্ষিত এবং জ্ঞানী মানুষ যখন বলেন এমন বড় অপারেশনে দুই -একটা ভুল হতেই পারে ! তখন কি সেই কথা মেনে নেওয়া যায়? আমার একটি ছোট্ট প্রশ্ন সেই মানুষদের কাছে। অপারেশনে যাওয়ার আগে আপনারা কি রোগীর রোগ ভালো করে পর্যবেক্ষণ করেন নি? আপনারা রোগীর অতীত, বর্তমান ভালো করে যাচাই বাছাই করেন নি ? আপনার ভাষ্যমতে আপনাদের অপারেশন অনেক বড়, তাহলে সেই বড় অপারেশেনর প্রিপারেশন কোন খোঁজ খবর না নিয়েই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন? 

অনেক বড় অপারেশনে মহাভুল করে ফেলেছেন। কাজ যত বড় হবে, তার সফলতা এবং ব্যর্থতাও তত বিশাল হবে। 'এমন দুই একটা ভুল হতেই পারে!' কথাটা আপনি কি মনে করে বলেছেন সেটা তো জানি না। তবে কথাটা আমার কাছে খুব হালকা লেগেছে। "It is better that ten guilty persons escape than that one innocent suffer" - এই কথাটার অর্থ জানেন নিশ্চয় আপনি? আমরা সাধারণ মানুষ তাই এর ব্যাখা আর করতে গেলাম না।  মাননীয় মন্ত্রী আপনার কাছে অনুরোধ, প্লিজ এমন ভুল আমরা দেখতে চাই না।  একজন স্ত্রীর আর্তনাদ, একজন কন্যার হাহাকার আপনারা বুঝবেন না। দুই একটা মুখ ফসকে শব্দ বের করে সেই আর্তনাদ আর হাহাকারের সাথে ঘৃণার পাল্লাটা ভারী করে দিবেন না প্লিজ।

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ