ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মাদ্রাসার শিক্ষকের মাথায় মল! পুরো জাতি দর্শক!


গো নিউজ২৪ | ফারজানা আক্তার প্রকাশিত: মে ১৫, ২০১৮, ০২:৩৬ পিএম আপডেট: মে ১৫, ২০১৮, ০৮:৩৮ এএম
মাদ্রাসার শিক্ষকের মাথায় মল! পুরো জাতি দর্শক!

আমি যখন স্কুলে পড়াশোনা করেছি, তখন আমাদের পুরো স্কুলে মাত্র দুইজন ইসলাম শিক্ষার শিক্ষক ছিলেন। আমরা ইসলাম শিক্ষার শিক্ষককে হুজুর স্যার বলে ডাকতাম। একজনের নাম ছিলো কেরামত আলী, অন্যজনের নাম পাটোয়ারী। কেরামত স্যার ছিলেন মজার মানুষ।  স্যার খুব হাসতেন আর মজার কথা বলে আমাদেরও হাসাতেন। কেরামত স্যার এখন আমাদের মাঝে আর নেই। আল্লাহ তুমি কেরামত স্যারকে ভালো রেখো, শান্তিতে রেখো। পাটোয়ারী স্যারের কথা আর কি বলবো! স্যারকে দেখলেই আমরা ভয়ে জড়সড় হয়ে যেতাম। স্যার মারতেন কিন্তু আমরা যতটা ভয় পেতাম ততটা না। স্যারের নিজস্ব পার্সোনালিটির কারণে স্যারের চেহারায় সবসময় একটা রাগী রাগী ভাব থাকতো এবং স্যারের চলাফেরায়ও সেটা প্রকাশ পেতো। তাই হয়তো স্যারকে আমরা ভয় একটু বেশিই পেতাম। সবথেকে মজার বিষয় হলো, এই দুইজন আমার বাবা-মায়ের শিক্ষক ছিলেন, আমারও ছিলেন এবং আমার ভাই বোনেরও ছিলেন। 

এই দুইজন শিক্ষক ছাড়াও আমার বাবা মায়ের, আমার এবং আমার ভাই বোনের কমন আরো কিছু শিক্ষক রয়েছেন।  বলেন পারেন তারা সবাই আমাদের পারিবারিক শিক্ষক হয়ে গেছেন। আমাদের বাবা মা থেকে শুরু করে আমাদের সকল ভাই বোনদের শিক্ষা দান করেছেন তারা। আমার কিন্ডার গার্ডেনের একজন শিক্ষক রয়েছেন যার সাথে এখনো আমার যোগাযোগ আছে। তিনি আমার ফেসবুকেও যুক্ত আছেন। সম্প্রতি তিনি একটি স্কুল করেছেন। সেখানে তিনি আমাকে আমন্ত্রণ করেছেন একবার ঘুরে আসতে। আমার সংসার জীবন, চাকরি জীবন, একান্ত নিজের জীবন কেমন চলছে সেই খোঁজ-খবরও দুইদিন পর পর তিনি নিয়ে থাকেন। কথা হচ্ছে একজন শিক্ষক শুধুমাত্র শিক্ষকই নন, তিনি মহামূল্যবান একজন অভিভাবকও।

একজন ব্যক্তি কোন পেশায় নিযুক্ত সেটার আগে তার পরিচয় সে একজন মানুষ। প্রতিটা মানুষের নিজস্ব আত্মসম্মানবোধ আছে। প্রতিটা মানুষ তার নিজস্ব মান সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকে। কোন মানুষকে যাচ্ছেতাই ভাবে অপমান করার অধিকার আমাদের কারো নেই। একজন মধ্যবয়স্ক মানুষকে তো নয় ই। একজন মানুষ, সে মধ্যবয়স্ক এবং মাদ্রাসার শিক্ষক তাকে রাস্তায় ফেলে মাথায় মল ঢেলে অপমান!!! 

যদি সেই শিক্ষক কোন ভুল করেই থাকেন, যদি সেই শিক্ষক কোনো অন্যায় করেই থাকেন তার বিচার করবে আইন, আদালত। এই দেশে আইন আছে, বিচার ব্যবস্থা আছে তারা করবে সেই মানুষটির ভুলের বিচার। কিন্তু এই মানুষগুলো যা করেছে সেটা কি কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ করতে পারে! করা উচিত? কিভাবে সম্ভব? বিবেকের কথা এখানে নিয়ে আসলাম না। শুধু বলবো তাদের কি নূন্যতম জ্ঞানও নেই। আচ্ছা তাদের কেমন শাস্তি হলে মনে হবে তারা তাদের অন্যায়ের উপযুক্ত শাস্তি পেয়েছে? কেমন ধরণের শাস্তি দরকার তাদের জন্য?

হালাল সকল পেশায় সম্মানের। তবে শিক্ষক আর ডাক্তারদের জন্য আমার নিজের মনে আলাদা একটা সফট কর্নার রয়েছে। আমি আমার নিজের শিক্ষকদের দেখলেই বসা থেকে উঠে দাঁড়াই, আমি দেখি আমার শিক্ষককে দেখে আমার বাবা মাও তাই করেন। একজন শিক্ষকের এখানেই সম্মান, এখানেই প্রাপ্তি, এখানেই ভালোবাসা। কিন্তু কিছু। ..(মানুষ বলবো? নাহ! এতবড় স্পর্ধা আমার নেই।  তাহলে কি বলবো? ওরা এতো নিচু আমি কোন কিছুর সাথেই ওদের তুলনা করতে পারছি না। ) কি করলো এটা ? ওরা পরিবার থেকে কি শিক্ষা পেলো? পরিবার ওদের কি শিক্ষা দিলো? ওরা কি কখনো কোনো শিক্ষকের কাছ থেকে কোনো শিক্ষা পায় নাই? ওরা কি কোনো শিক্ষকের ভালোবাসা, মায়া মমতা পায় নাই? ওরা কি কখনো কারো কাছ থেকে সম্মান পায় নাই ? ওরা কি সম্মান, ভালোবাসা এইগুলোর মূল্য বুঝে না। আজকে ওরা রাস্তায় অসহায় অবস্থায় রেখে একটি মানুষকে নিয়ে যে পৈশাচিক আনন্দ করলো, কালকে যদি একই ঘটনা ওদের জীবনে ঘটে! তাহলে কি হবে? সহ্য করতে পারবে তো? মনে হয় পারবে, কারণ পৈশাচিক আনন্দ যারা করতে পারে পৈশাচিক কষ্ট পাওয়ার অধিকার তারা রাখে।

প্রসঙ্গ-লেখকের একান্তই ব্যক্তিগত মতামত।

গোনিউজ২৪/এআর

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ