ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কিছু স্মৃতি অমলিন


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রকাশিত: এপ্রিল ২৬, ২০১৮, ০৩:৪৭ পিএম আপডেট: এপ্রিল ২৬, ২০১৮, ০৯:৫০ এএম
কিছু স্মৃতি অমলিন

ব্রিটিশ রাজবধূ ডাচেস অব কেমব্রিজ কেইট মিডলটন তৃতীয় সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। শিশুটি ব্রিটিশ সিংহাসনের পঞ্চম উত্তরাধিকারী। লন্ডনের সেইন্ট মেরি হাসপাতালে গত সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ১১:০২ মিনিটে ৮ পাউন্ড ৭ আউন্স ওজনের একটি ছেলে শিশুর জন্ম দেন তিনি। কেনসিংটন প্যালেসের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে মা ও শিশু উভয়ই সুস্থ আছেন বলে জানানো হয়েছে। শিশুটি প্রিন্স উইলিয়াম-কেইট মিডলটন দম্পতির তৃতীয় সন্তান। তাদের যথাক্রমে প্রিন্স জর্জ (৪) ও প্রিন্সেস শার্লট (২) নামে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে আছে--অভিনন্দন রয়েল দম্পতিকে।  

বৃটেনের রাজ্ পরিবারের মানবিক কার্যক্রম, দেশপ্রেম, মানবসম্পদ উন্নয়ন, মানবিক কাজে তাদের সম্পৃক্ততা ও বিশ্বশান্তি কার্যক্রমে সারাবিশ্বে তারা সম্মানিত সর্বজন প্রসংশিত ও সমাদৃত। প্রিন্স উইলিয়াম ডাচেস অব কেমব্রিজ কেইট মিডলটন চমৎকার যুগল সাংসারিক জীবনে তারা সফল ও বিশ্ব নন্দিত। একই সময় মানবিক কার্যক্রমেও বিশ্বে তারা পরিচিত সমাদৃত। ক্যান্সার রোগ, রোগীদের জীবন মান উন্নয়ন, কল্যান ফান্ড সংগ্রহ এমন অনেক মানবিক মূল্যবোধের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন যা শিক্ষিনীয়!

সদ্য তাদের তৃতীয় সন্তানের জন্ম হয়েছে। এই আনন্দঘন শুভক্ষণে ডিউক অব কেম্ব্রিজ প্রিন্স উইলিয়ামের সাথে ১১ বছর পূর্বের আমার একটি স্মৃতি মনে পড়ে গেল যা ছিল ভেরি এক্সসাইটিং যা আপনারদের শেয়ার করতে আর তর সইছে না। আমি লন্ডনে আসার পর থেকেই ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিসে (NHS) এ কাজ করছি। যে হাসপাতালে কাজ করি সেটি হচ্ছে বিশ্ববিখ্যাত ক্যান্সার হাসপাতাল যেখানে, ক্যান্সার রোগের চিকিৎসা হয়। পাশাপাশি ক্যান্সার রোগটিকে কীভাবে নির্মূল করা যায় তা নিয়ে গবেষণা চলছে যুগ যুগ ধরে। দীর্ঘ ১৬ বছরের ও অধিক সময় একটি ডাইভার্স এনভারমেন্টে ননক্লিনিক্যাল স্টাফ হিসাবে স্বাস্থ চিকিৎসা কর্মকান্ডে কাজ করতে গিয়ে অনেক অভিজ্ঞতার সঞ্চার হয়েছে।

ডিউক অব কেম্ব্রিজ প্রিন্স উইলিয়াম আমাদের হাসপাতালের patron প্যাট্রন চেয়ারম্যান। সালটা ছিল ২০০৭, আমার ম্যানেজার অবসপ্রাপ্ত (peter kharkham) পিটার কারকাম এক সকালে আমাকে উনার অফিসে ডাকলেন। বললেন, মিস্টার ইসলাম "গুড নিউজ ফর ইউ, সিটডাউন। বললেন, আগামীকাল সকাল ১০টায় রয়েল ভিজিটর (রাজপরিবারের সদস্য) আমাদের হাসপাতালে আসছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম কে আসছেন? তিনি বললেন প্রিন্স উইলিয়াম (মৃত প্রিন্সেস ডায়ানার ছেলে বৃটেনের ভবিষৎ রাজা)। আমি জিজ্ঞেস করলাম আমাকে কি করতে হবে? তিনি বললেন তোমাকে ওয়েল ড্রেসআপ করে আগামীকাল অফিসে আসতে হবে এবং "এজ এ পার্ট অফ ইনসিডেন্ট টিম তুমি হাসপাতালের ভিতরে প্রিন্স উইলিয়াম ডিউক অফ কেমব্রিজের সফর সঙ্গী হচ্ছ ! আমিতো ভীষণ খুশি!

অফিসে আমার কলিগরা আমাকে নাজ বলে ডাকে। আমার ম্যানেজারের সিদ্ধান্তটি জানার পর আমার কলিগরা শালিনতার ভিতরে থেকে আমার অনুপস্তিতে দুই একজন বলেছেন আমি জুনিয়র স্টাফ তাই সিনিয়রদের মধ্যে একজনকে সিলেক্ট করলেই ভাল হত। আমি কিন্তু তখন জুনিয়র স্টাফ ছিলাম সত্যিই। আমার এক আমেরিকান কলিগ পিইটার ম্যাগাবেন বলেছে Oh নাজ ইজ ভেরি জুনিয়র স্টাফ যা শুনে আমি হেসেছি, পিটার ম্যাগাবেন আমার ভাল কলিগ এবং বন্ধুও। যাক, আমরা তো আবার সুযোগ পাইলে সমালোচনা করতে করতে মুখে খৈ ফুটাই সেই বিচারে এগুলো এমন সিরিয়াস কিছু ছিল না।

প্রিন্স উইলিয়ামের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম, হৈ হুল্লা ছাড়াই ডিউক অব কেম্ব্রিজ প্রিন্স উইলিয়াম আমাদের হাসপাতালে আসলেন। তাকে ওয়েলকাম জানালেন হাসপাতালের প্রধান নির্বাহীসহ কয়েকজন কর্মকর্তা। সেখানে ছিল না পুলিশের গাড়ির লাইন, সাইরেন, ঠেলাধাক্কা সেল্ফি বাজদের ভীড়। ছিল না একজন অন্যজনকে ওভারটেক করার প্রবণতা। বন্ধ ছিল না রাস্তাঘাট ও হাসপাতালের কর্ম বিরতি। সবাই স্ব স্ব দায়িত্ব নিয়েই ব্যস্ত ছিলেন প্রতিদিনের ন্যায়। 

পুলিশ প্রশাসন ছাড়া প্রিন্স উইলিয়াম ডিউক অফ কেমব্রিজ হাসপাতালে প্রবেশ করলেন। সাথে ছিলেন তার ব্যক্তিগত অফিসার রয়েল ফটোগ্রাফার, যোগ দিলেন আমাদের হাসপাতাল প্রেস ও কয়েকজন নির্বাহী কর্মকর্তা। মিডিয়া ও অন্যান্য ফটোগ্রাফাররা ছিলেন হাসপাতালের বাইরে। প্রথমেই প্রিন্স উইলিয়াম হাসপাতালের একটি ওয়ার্ড উদ্বোধন করলেন। পরে বিভিন্ন ওর্য়াড ঘুরে ক্যান্সার রোগীদের খোঁজ খবর নিলেন, স্টাফদের সাথে কথা বললেন।

টি স্ন্যাকসের জন্য বোর্ড রুমে আসার পূর্বে গ্রাউন্ড ফ্লোরে ক্যান্সার রোগীদের কল্যাণে বিশ্বের দানশীল ব্যক্তি বিশেষের বিরাট অংকের আর্থিক অনুদানের নামফলক ডিসপ্লে বোডের ফলক উন্মোচন করলেন। নামফলকের পাশেই তার মা ডায়না, প্রিন্সেস অব ওয়েলসের বড় আকৃতির একটা ফটো ফ্রেম ছিল যা এখনো আছে। মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে এমন স্মৃতিচারণ করলেন যা শুনে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছিলাম।
 
হাসপাতাল ভিজিট করতে গিয়ে দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় অনেকেই উইলিয়ামের সঙ্গে ফটোতে বন্দী হয়েছেন। কিন্তু নিজের মোবাইল ফোনে একটা ফটো তোলার লোভ সামাল দেওয়া ছিল বেদনাদায়ক। মনে পড়ছে ক্যাটারিং ডিপার্টমেন্টের এক স্টাফ আমার কাছে এসে বলছে আমি কি একটা ফটো তুলতে পারবো প্রিন্সের সাথে?

প্রিন্স উইলিয়াম ডিউক অফ কেমব্রিজ যখন আমাদের হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যান আমি ছিলাম ডান পাশের একটু পিছনে, সাথে ছিলেন তার ব্যক্তিগত অফিসার ও আমাদের হাসপাতালের চেয়ারম্যান। মিডিয়া ও ফটোগ্রাফাররা ফটো তুলছেন একের পর এক, ফ্লাশিং দেখে মনে হচ্ছিল ভাল আবহাওয়ায় বিদ্যুৎ চম্কাচ্ছে আর নিজেরে তখন একটু একটু সেলিব্রিটি মনে হচ্ছিল।

প্রিন্স উইলিয়াম ডিউক অফ কেমব্রিজ বের হয়ে যাবার পর পরই এক ফটোগ্রাফারের স্বরণাপন্ন হই। বললাম দায়িত্বরত ছিলাম, অনেক আফসোস থাকা স্বত্বেও একটি ফটো তুলতে পারি নাই। বৃটেনের ভবিষৎ রাজার সাথে কে না একটা ফটো স্মৃতি হিসাবে রাখতে চায়? আপনি কি আমাকে একটি ফটো দিবেন? ফটোগ্রাফার বললেন সিউর দিব, এই বলে আমার মেইলিং ঠিকানা নিয়ে নিলেন। ৬ মাস পরে এক সকালে পোস্টম্যান দরজা নক করে একটি ইনভেলাপ ফেলে গেলেন যা খুলে দেখি বৃটেনের ভবিষৎ রাজা প্রিন্স উইলিয়াম ডিউক অফ কেমব্রিজের সাথে আমার ফটো। যা ছিল আশ্চার্য্য ধরনের এক অনুভূতি!!

নজরুল ইসলাম
ওয়ার্কিং ফর ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিস লন্ডন
মেম্বার, দি ন্যাশনাল অটিষ্টিক সোসাইটি ইউনাইটেড কিংডম
আজীবন সদস্য, বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন।
trade.zoon@yahoo.com

গোনিউজ২৪/এআরএম

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ