ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বর্ষা থাকুক, বৃষ্টি নামুক


গো নিউজ২৪ | মো. মামুন উদ্দীন প্রকাশিত: অক্টোবর ২১, ২০১৭, ০৪:৫৫ পিএম আপডেট: অক্টোবর ২১, ২০১৭, ১০:৫৫ এএম
বর্ষা থাকুক, বৃষ্টি নামুক

অদ্ভুত বর্ষা। আর অদ্ভুত বৃষ্টি এবার। থামতেই চায় না যেন। এ যেন রসিক আকাশের নিরন্তর রসের খেলা। নদী নালা, খালবিল সব উপছে পড়ছে। তবুও থামার ফুরসত নেই নীল আকাশের। নীল নাকি বেদনার প্রতীক। ভুল। আমার কাছে নীল সৌন্দর্যের আধার। বর্ষাও আমার কাছে বরাবরই প্রিয়। আকাশ ছুঁতে পারি না। সেই আকাশ থেকে বৃষ্টি নামে। তাকে তো ছোঁয়া যায়! তাই অঝোর ধারায় বৃষ্টির ফোটা পড়ুক। টুপ টুপ শব্দে আকাশ কেঁদে কেঁদে সারা হোক। এ আমার ব্যাকুল হৃদয়ের আকুল প্রার্থনা। প্রতিটি মুহূর্তই আমার কাছে হাজির হাজির হোক সুখের আবেশ নিয়ে।

বর্ষা নিয়ে আমার শ্রদ্ধেয় স্কুল শিক্ষক হরিবিলাশ স্যার কবিতা লিখেছিলেন। ছোট্ট কিন্তু দারুণ আকুতি ভরা কবিতার সব কথা। প্রেমের আকুতি। ভালবাসার আকুতি। আকাঙ্খা, অবশ্যই তোমাকে নিয়ে। হেমন্তের উষালগ্নেও বৃষ্টির রসিকতা দেখে আজ মনে পড়ছে কবিতার সেই কথাগুলো,

‘বর্ষা নেমেছে আজ
তুমি যদি আসতে
মোর কবিতা হয়ে
পাশে বসে থাকতে!

নির্জন একা ঘরে
বাহিরে বাদল ঝরে
মন চায় সবকথা 
তোমারেই বলতে।’

কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ তার প্রিয়তমাকে আহবান করেছেন বর্ষার গানে গানে। অভিবাদন করেছেন প্রতিটি পঙক্তিতে হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসার আকাক্সক্ষায়,

‘যদি মন কাঁদে
তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়।

এসো ঝর ঝর বৃষ্টিতে
জল ভরা দৃষ্টিতে
এসো কোমল শ্যামল ছায়।

যদিও তখন আকাশ রবে বৈরী
কদম গুচ্ছ হাতে নিয়ে আমি তৈরি।
উতলা আকাশ মেঘে মেঘে হবে কালো
ছলকে ছলকে নাচিবে বিজলী আলো।

তুমি চলে এসো, চলে এসো
এক বরষায়।’ (গীতকবিতা : যদি মন কাঁদে)

আমি আমার হারিয়ে যাওয়া প্রতিটি মুহূর্ত ফিরে পেতে চাই। দুর্দান্ত সময় কাটানো শৈশবের সেই মুহূর্তগুলো। বৃষ্টি হচ্ছে অবিরত। কোনো দিন খোলা বিল আবার কোনো দিন খোলা স্কুল মাঠে ফুটবল খেলা। একাগাদা পানিতে বল নিয়ে দৌড়াদৌড়ি। চিৎপটাং করে কেউ একজন পড়ে গেল। তার উপর আরো একজন। এরপর আরো পাঁচ সাতজন। কাদা ছোড়াছুড়ি, মাখামাখি। সেই কাদা নিয়ে আবার পুকুর পানে দৌড়। এখানেও চলত লাফালাফি, বল নিয়ে কাড়াকাড়ি। মাঠে ফুটবল (পা বল) আর পুকুরে হ্যান্ডবল। 

সত্যিকারের সব্যসাচি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও বর্ষায় আকুল হতেন। হতেন নস্টালজিক। বর্ষাকে তিনি দেখেছেন বহুরূপে, ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে। বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর কবিতায় তিনি স্মৃতিকাতর হয়েছেন। স্মৃতিকাতর করেছেন অসংখ্য ভাবী বর্ষাপ্রেমিককে।

‘বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে
ছেলে বেলার গান
বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর
নদে এল বান।’

‘বর্ষার দিনে’ কবিতায় রবীন্দ্রনাথ বলেছেন:

‘এমন দিনে তারে বলা যায়
এমন ঘনঘোর বরিষায়-
এমন মেঘস্বরে বাদল-ঝরঝরে
তপনহীন ঘন তমসায়।

সে কথা শুনিবে না কেহ আর,
নিভৃত নির্জন চারিধার।

দুজনে মুখোমুখো গভীর দুখে দুখি,
আকাশে জল ঝরে অনিবার-
জগতে কেহ যেন নাহি আর।

সমাজ সংসার মিছে সব,
মিছে এ জীবনের কলরব।

কেবল আঁখি দিয়ে আঁখির সুধা পিয়ে
হৃদয় দিয়ে হৃদি অনুভব-
আঁধারে মিশে গেছে আর সব।’

বৃষ্টি হচ্ছে। অঝোর বৃষ্টি। টিন ফুটো হবার উপক্রম যেন। ওদিকে মা হরেক রকম ডাল দিয়ে কড়ই ভাজছেন, চাল ভাজছেন। নারকেল দিয়ে চালের কড়ই খাওয়ার সে কি মজা! নগর সভ্যতার ব্যস্ত মানুষগুলোর কাছে হয়তো বা তা বাড়াবাড়ি ঠেকবে বৈকি। গাঁয়ের কবি, পল্লীকবি জসিমউদ্দীন। তার কবিতায়ও বর্ষা বন্দনা হয়েছে। বিচিত্র উপমা নিয়ে তিনিও বর্ষাকে রূপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। 

‘আজিকে বাহিরে শুধু ক্রন্দন ছল ছল জলধারে
বেণু-বনে বায়ু নাড়ে এলো কেশ, মন যেন চায় কারে।’

গাঁয়ের মেঠোপথ বেয়ে, বৃষ্টিতে ভিজে বড় হয়েছেন অথচ মাছ ধরেননি এমন কেউ কি আছেন? উত্তর সম্ভবত না। আকাশে গর্জন চলছে। তার ডাকে সাড়া দিয়ে পুকুরের সব কৈ মাছ বের হয়ে যাচ্ছে। সেই মাছগুলো ধরার সীমাহীন আনন্দ খাওয়ার চেয়েও শতগুণ বেশি ছিল। স্রোতের পানির বিপরীতে জাল বসিয়ে, জাল মেরে শত শত মানুষের একসাথে মাছ ধরার অনুভূতি এ প্রজন্মের কয়জনকেই বা আলোড়িত করবে? জমি, জলাধার কিংবা খাড়িতে বৃষ্টির পানি কমে গেলে ধরা পড়ত কতশত মাছ। স্কুল পালিয়ে বিলেঝিলে দিনভর মাছ ধরা আর একগাদা কর্দমাক্ত শরীরে ফিরে এসে পুকুরে লম্ফঝম্প। সেই সব স্মৃতি, আবেগ বারবার ফিরে যাওয়ার অনুভূতিকে আলোড়িত করে। স্মৃতিকাতরতায় আক্রান্ত হই। ফিরে যেতে চাই, ফিরে পেতে চাই . . .। বর্ষা থাকুক, বৃষ্টি নামুক।

মো. মামুন উদ্দীন
প্রভাষক
জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ
মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

গো নিউজ২৪/এবি
 

মতামত বিভাগের আরো খবর
নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

নারীরা,মনের দাসত্ব থেকে আপনারা কবে বের হবেন?

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

আন্তর্জাতিক শিক্ষা দিবস ও আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

সুচন্দার কষ্টে আমরাও সমব্যথী

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

প্রিন্টমিডিয়ার অন্তর-বাহির সংকট

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ানো দরকার যেসব কারণে

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ

সিলেটের শীর্ষ শিল্প উদ্যোক্তাদের নিয়ে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ