সবার যেমন বাবা থাকে, আমারো একজন বাবা আছে। আয়েশা খাতুনেরও একজন বাবা আছে তবে পালিত বাবা। বাবারা কেমন হয় ? বাবারা অনেকটা ছাতার মতো, অনেকটা পলিথিনের মতো, অনেকটা মোমের মতো আর সবটা জুড়ে রাজার মতো। ছাতার মতো রোদ - বৃস্টি থেকে বাঁচাবে, পলিথিনের মতো নিজে ভিজবে কিন্ত সন্তানকে ভিজতে দিবে না, মোমের মতো নিজে জ্বলে - পুড়ে শেষ হয়ে যাবে কিন্ত সন্তানকে আলো দিয়ে যাবে আর নিজের সন্তানকে রাজপুত্র, রাজকন্যা বানাতে নিজে রাজার মতো হয়ে যাবে।
সবার মধ্যে আয়েশা খাতুনও পরে তারপরেও কেনো ওর নাম আলাদা করে নিলাম ? কারণ আয়েশা খাতুনের বাবা হজরত আলী নিজের রাগ - ক্ষোভ, অভিমান আর এই সমাজের প্রতি ঘৃণা রেখে চলে গেছেন অচিন দেশে ! চলে গেছেন নাকি চলে যেতে বাধ্য করা হয়েছে আমি বুঝতে পারছি না । আপনি পারেন কিনা দেখুন তো ! না না, তিনি একা যান নাই, নিয়ে গেছেন নিজের রাজকন্যাকে। সন্তানকে যখন একটা মশা কামড় দেয় তখন সেই কামড় গিয়ে লাগে বাবা - মার গায়ে। সেই সন্তানকে নিয়ে যে লোকটা আত্মহত্যা করলো তার মনের অবস্থাটা তখন কেমন ছিলো ? জানতে ইচ্ছে করে আপনাদের ? আমারো !
আগে জানেন আয়েশা খাতুন কে এবং তার কি হয়েছিলো ? প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণির ছাত্রী ছিল আয়েশা এবং বয়স ৮। নিজের ছোট বোন বা মেয়ের চেহারাটা চোখে ভেসে উঠছে তাই না ? প্রায় দুই মাস আগে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে তাকে তুলে নিয়ে যায় তিন নরপিশাচ। সন্ধ্যায় রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েকে পান বাবা হজরত আলী। হজরত আলীর কোনো সন্তান ছিলো না, ৩মাস বয়সী আয়েশাকে পালক নেন, তারপর নিজে রাজা হয়ে রাজকন্যাকে নিয়ে দিন পার করছিলেন। সেই বাবা যখন রক্তাক্ত অবস্থায় মেয়েকে পান তখন তার বুকে কত কিলোমিটারে ঝড় হয়েছিলো ? জানতে ইচ্ছে করে আপনাদের ? আমারো !
বাবা হজরত আলী থানায় অভিযোগ করেন। তিনি স্থানীয় ইউপি সদস্যদের কাছেও বিচার চান। সম্মানিত ইউপি সদস্য তাদের বলেন এক হাজার টাকার বিনিময়ে এই ঘটনার মীমাংসা করে ফেলতে। বাচ্চা একটা মেয়ে, নিশ্চয় এই বয়সী তার কোনো আত্মীয় বা নিজের মেয়েও থাকতে পারে, এই কথাটা বলার আগে কি তার সেই আত্মীয় বা মেয়ের চেহারাটা ভাসে নাই চোখে !! ভাসবে কেমন করে ওদের কি চোখ আছে ? এমন মানুষ আমাদের দায়িত্ব নিয়ে বসে আছে যাদের কাছে সম্মানের দাম হয় তাও ১হাজার টাকা। বাহ্ বাহ্ .... !!
হজরত আলী বিচার তো পান নাই, উল্টা তার ওপর নেমে আসে নির্যাতন। একদিন তার গরু নিয়ে যায় তো. অন্যদিন ছাগল। এইদিকে তার মেয়েটাকেও তুলে নিয়ে যাবার হুমকি দিচ্ছে। সে মেয়েকে লুকিয়ে রাখে এই নরপশুদের ভয়ে। না শেষ পর্যন্ত দম আটকিয়ে আসছিলো হজরত আলীর! মেয়েকে বললো বেড়াতে নিয়ে যাবে। বেড়াতেই নিয়ে গেলো মেয়েকে তবে ট্রেনে চড়ে না, ট্রেনে চাপা পরে।
হজরত আলী মেয়ের হাত শক্ত করে ধরে ঝাঁপ দিলেন ট্রেনের নিচে। মেয়েটা জানতো বাবা শক্ত করে হাত ধরে তাকে বিপদমুক্ত রাখবে, কিন্ত বাবা যে তাকে নিয়ে জীবন দিয়ে দিবে সেটা কি মেয়ে কখনো বুঝতে পেরেছিলো ? একটা ৮বছরের বাচ্চার নিরাপত্তা নাই যে দেশে, যে সমাজে ! একটা অন্যায়ের বিচার নাই যে দেশে, যে সমাজে ! একটা অন্যায়কে নিয়ে আপোষ করার জন্য যে নেতারা ১হাজার টাকা অফার করে, সে দেশ ডিজিটাল হয় কি করে ?? ডিজিটাল করবেই বা কাদের জন্য ? আগামীতে যারা নেতৃত্ব দিবে তাদের নিরাপত্তা নাই, তাদের প্রতি করা অন্যায়ের বিচার নাই , তাহলে ডিজিটাল কি শুধু মনুষত্ববিহীন নেতা আর নরপিশাচদের জন্য ? এই প্রশ্ন কাকে করবো ? তাই প্রশ্ন নিজের মনে রেখে দিছি তবে চোখ বন্ধ করলে দেখতে পাই হজরত আলী ঘৃণা নিয়ে আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে আর বলছে, "আমি আমার বুকের মানিককে নিয়ে চলে এসেছি, তোরা তোদের ওই ১হাজার টাকার নরকে থাক।"