ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

যতটা সম্ভব ঘরে থাকুন, ঘরেই নামাজ আদায় করুন: প্রধানমন্ত্রী


গো নিউজ২৪ | নিজস্ব প্রতিবেদন: প্রকাশিত: মার্চ ২৫, ২০২০, ০৭:৪১ পিএম আপডেট: মার্চ ২৫, ২০২০, ০৭:৫৫ পিএম
যতটা সম্ভব ঘরে থাকুন, ঘরেই নামাজ আদায় করুন: প্রধানমন্ত্রী

এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সব ধরনের জনসমাগম ও অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।একইসঙ্গে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে মুসলিমদের মসজিদে না গিয়ে ঘরেই নামাজ পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।  সবাইকে যতটা সম্ভব ঘরে থাকার অনুরোধও করেছেন তিনি।

বুধবার সন্ধ্যায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে তিনি এ নির্দেশনা দেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি জানি আপনারা এক ধরনের আতঙ্ক ও দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। যাদের আত্মীয়স্বজন বিদেশে রয়েছেন, তারাও তাদের নিকটজনদের জন্য উদ্বিগ্ন রয়েছেন। আমি সকলের মানসিক অবস্থা বুঝতে পারছি। কিন্তু এই সঙ্কটময় সময়ে আমাদের ধৈর্য্য এবং সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হবে। এই ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ আমাদের মেনে চলতে হবে। আমাদের যতদূর সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যারা করোনাভাইরাস-আক্রান্ত দেশ থেকে স্বদেশে ফিরেছেন, সেসব প্রবাসী ভাইবোনদের কাছে অনুরোধ, আপনাদের হোম কোয়ারেন্টিন বা বাড়িতে সঙ্গ-নিরোধসহ যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন। মাত্র ১৪ দিন আলাদা থাকুন। আপনার পরিবার, পাড়াপ্রতিবেশী, এলাকাবাসী এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কয়েকটি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ সহজ হবে। ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাঁচি-কাশি দিতে হলে রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিবেন। যেখানে-সেখানে কফ-থুথু ফেলবেন না। করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন। যতদূর সম্ভব ঘরে থাকবেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। বাইরে জরুরি কাজ সেরে বাড়িতে থাকুন। মুসলমান ভাইয়েরা ঘরেই নামাজ আদায় করুন এবং অন্যান্য ধর্মের ভাইবোনদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের স্বাধীনতা দিবস এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে উদযাপিত হচ্ছে। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে গোটা বিশ্ব এখন বিপর্যস্ত। 

ধনী বা দরিদ্র, উন্নত বা উন্নয়নশীল, ছোট বা বড় সব দেশই আজ কমবেশি নভেল করোনা নামক এক ভয়ঙ্কর ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত। আমাদের প্রাণপ্রিয় বাংলাদেশও এ সংক্রমণ থেকে মুক্ত নয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে আমরা এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস ভিন্নভাবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জনসমাগম হয় এমন ধরনের সব অনুষ্ঠানের আয়োজন থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনসহ সকল জেলায় শিশু সমাবেশ ইতোমধ্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। একই কারণে আমরা মুজিববর্ষের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে জনসমাগম না করে টেলিভিশনের মাধ্যমে সম্প্রচার করেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের স্বাধীনতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দীর্ঘ সংগ্রাম এবং বহু ত্যাগ-তিতীক্ষার ফসল। ১৯৪৮-৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৫৪’র নির্বাচন, ৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ৬৬’র ছয়-দফা-১১-দফা, ৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ৭০’র নির্বাচনের পথ পেরিয়ে আমরা উপনীত হই ৭১’র ৭ মার্চের ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে।

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসমুদ্রে দাাঁড়িয়ে তিনি ঘোষণা দেন : “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনাতর সংগ্রাম। জয় বাংলা”।

বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে সমগ্র জাতি মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করে। বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম স্তব্ধ করে দিতে ২৫-এ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির উপর অতর্কিত হত্যা শুরু করে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৬-এ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পাকিস্তানি সামরিক শাসক তাকে বন্দি করে পাকিস্তানে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালি জাতি ৯-মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাকিস্তানের জেলে ১০ মাস বন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি পেয়ে জাতির পিতা ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে আসেন। শুরু করেন যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনের। স্বাধীনতার পর মাত্র সাড়ে তিন বছর হাতে সময় পেয়েছিলেন তিনি। প্রায় ১ কোটি শরণার্থীকে দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করা, শহীদ পরিবার, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা, নির্যাতিত মা-বোনদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা, তাদের প্রতিষ্ঠিত করা সমস্ত কাজই তিনি করেছিলেন এই সাড়ে তিন বছরে।

তিনি বলেন, জাতির পিতা বলতেন : ‘‘আমার জীবনের একমাত্র কামনা বাংলার মানুষ যেন অন্ন পায়, বস্ত্র পায়, উন্নত জীবনের অধিকারী হয়।” তিনি যখন দেশ পুনর্গঠনের কাজে নিমগ্ন, ঠিক তখনই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকেরা তাকে পরিবারের ১৮ জন সদস্যসহ হত্যা করে। আমরা দু’বোন বিদেশে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা তার ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার দ্বারপ্রান্তে। বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। বাংলাদেশ আজ খাদ্যশস্য, শাক-সবজি-মাছ-মাংস-ডিম উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতুর নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে।

তিনি বলেন, ঢাকায় মেট্রোরেল এবং চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে ট্যানেল নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। রূপপুরে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দোরগোড়ায় এখন আমরা। মহাকাশে আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপিত হয়েছে। গত বছর ৮.১৫ শতাংশ হারে আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। চলতি বছরে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম।

গো নিউজ২৪/আই

জাতীয় বিভাগের আরো খবর
টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

টয়লেটসহ একাধিক সুবিধা নিয়ে দেশে আসছে ছাদখোলা দোতলা ট্যুরিস্ট বাস

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

‘রপ্তানিযোগ্য হারবাল প্রডাক্টের উৎপাদন প্রক্রিয়া ও মান উন্নয়ন’ প্রশিক্ষণ কর্মশালা

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

পাঠ্যবইয়ের সংশোধনসহ সচিবদের একগুচ্ছ নির্দেশনা দিলেন প্রধানমন্ত্রী

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

শাহজালাল বিমানবন্দরে মাসুদের কাছে পাওয়া গেল ৩ কেজি সোনা

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

ইজতেমায় এক বদনা পানি ১০ টাকা!

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়

হজে যাওয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না, দফায় দফায় সময় বাড়াচ্ছে মন্ত্রণালয়