সড়কে দুর্ঘটনা ও সড়ক নিরাপত্তা আইন নিয়ে কথা বলতে গিয়ে সম্প্রতি ইলিয়াস কাঞ্চনের মুখোশ উন্মোচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন সাবেক নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।
গত রোববার তিনি বলেছেন, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের চেয়ারম্যান ইলিয়াস কাঞ্চনকে আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই- আপনি যে দেশ-বিদেশ থেকে কোটি কোটি টাকা এনজিও এর নামে এনেছেন, তা দিয়ে কয়টা প্রতিষ্ঠান খুলেছেন? সেখানে কতজন ড্রাইভারকে ট্রেনিং দিয়েছেন?
এসময় ইলিয়াস কাঞ্চন নামে-বেনামে নানা অনিয়ম করেন উল্লেখ করে জনসম্মুখে তার মুখোশ উন্মোচনের ঘোষণা দেন তিনি।
এর প্রেক্ষিতে এবার শাজাহন খানকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন।
বুধবার সকালে প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে শাজাহান খানকে অভিযোগের স্বপক্ষে প্রমাণ হাজির করতে হবে। অন্যথায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
আরো পড়ুন<<>>ইলিয়াস কাঞ্চনের মুখোশ উন্মোচনের ঘোষণা শাজাহান খানের
লিখিত বক্তব্যে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘শাজাহান খান নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের একটি অনুষ্ঠানে আমাকে এবং নিরাপদ সড়ক চাইসহ আমার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে নির্লজ্জ মিথ্যাচারের মাধ্যমে অসত্য, বানোয়াট ও উদ্ভট কিছু প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। আমার চরিত্র হরণের চেষ্টা চালিয়েছেন। তিনি এসব প্রশ্ন যখন করেছেন, তখন আমি বিশেষ প্রয়োজনে ভারতে অবস্থান করছিলাম। তাই তাৎক্ষণিকভাবে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হতে পারিনি। তবে নিসচার পক্ষ থেকে ওই দিনই প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। শাজাহান খানের বক্তব্যের জন্য তাকে ২৪ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। হয় তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করুণ, নতুবা ক্ষমা প্রার্থনা করুন। গত ২৪ ঘণ্টাতেও শাজাহান খান তার বক্তব্যের সপক্ষে কোনো প্রমাণ হাজির করেননি এবং ক্ষমাও চাননি।’
শাজাহান খানের বক্তব্য প্রসঙ্গে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমি যখন দেশের বাইরে ছিলাম, তখন এসব প্রশ্নের কেন অবতারণা? এটা পেছন থেকে ছুরিকাঘাতের শামিল। যদি সেই সৎসাহস থাকে, তাহলে সামনে এসে প্রমাণ নিয়ে বসুন। প্রয়োজনে লাইভ টক শো হবে। পুরো জাতি দেখবে।’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমি কারও পক্ষে বা বিপক্ষে নই। আমি আপামর মানুষের স্বার্থে কথা বলি। কিন্তু শাজাহান খান বলেন, আমি নাকি সাধারণ মানুষের কাছে পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে কথা বলে নেতিবাচক আবহ তৈরি করি। আমি সব সময় বলি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অনিয়মের বিরুদ্ধে। আমি বলি, বিশৃঙ্খল পরিবেশের বিরুদ্ধে। আর সেটা যদি কারও বিপক্ষে যায়, তাহলে কি খুব বেশি অন্যায় হবে?’
ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘আমরা কখনো চালক-মালিকদের প্রতিপক্ষ ভাবি না। কিন্তু তিনি (শাজাহান খান) বারবার এই চালক-মালিকদের আমার, আমার সংগঠন, পরিবার ও নিসচার সদস্যদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তুলছেন। যার ফলে আমি আমার জীবন, পরিবার, সংগঠন ও সংগঠনের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের জীবন নিয়ে শঙ্কিত। সরকারের কাছে আমাদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আহ্বান জানাই।’
ইলিয়াস কাঞ্চনের ভাষ্য, শাহাজাহান খান শুধু নিজের দুর্বলতা ঢাকার জন্য এমন মিথ্যাচার করেছেন। তিনি এই সব মানহানিকর কথা বলেছেন জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য। সেই সঙ্গে সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ বাধাগ্রস্ত করতে উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে শাহাজাহান খান অবান্তর প্রশ্ন করেছেন। ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, এই বক্তব্যের জবাব তাকে দিতে হবে এবং এমন কাজের জন্য তাকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। না হলে এই বক্তব্যের প্রতিবাদে রাজপথে নামতে বাধ্য হবে নিসচার কর্মীরা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের পর এক সাংবাদিকের প্রশ্নে জবাবে ইলিয়াস কাঞ্চন জানান, ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রথম ১২ বছর তার টাকাতেই সংগঠনটি পরিচালিত হয়। এরপর থেকে ১৫ হাজার নিবন্ধিত সদস্য, ৫৫ কার্যকরী সদস্য, ১২০টি শাখা সংগঠনের মাসিক-বাৎসরিক চাঁদায় এবং দেশীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সহযোগিতায় সংগঠনটি চলছে। আন্তর্জাতিক নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে নিসচা ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এনজিও হিসেবে নিবন্ধিত হয়।
ইলিয়াস কাঞ্চন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি কোনো বিদেশি সংগঠনের টাকায় নিসচা চালাই না। এটা দেশের মানুষ ও দেশীয় প্রতিষ্ঠানের অর্থায়নে পরিচালিত হয়।’
গো নিউজ২৪/আই
