সিলেট: সিলেটের দক্ষিণ সুরমার শিববাড়ি এলাকায় 'আতিয়া মহল' নামে পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে বলে ২৩ মার্চ (বৃহস্পতিবার) মধ্যরাতে খবর পায় পুলিশ। সে দিন রাত থেকেই বাড়িটি ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। চট্টগ্রামের সিতাকুণ্ড থেকে আটক দুই জঙ্গিরা কাছ থেকে আতিয়া মহলের জঙ্গি আস্তানার খবর পায় পুলিশ।
২৪ মার্চ সকাল ৮টার দিকে আতিয়া মহলের ভেতর থেকে বাইরের দিকে গ্রেনেড ছোড়া হয়। ফলে ওই বাড়িতে অভিযান চালাতে ঢাকা থেকে পুলিশের বিশেষায়িত ইউনিট সোয়াটকে পাঠানো হয় ঘটনাস্থলে। আর অভিযানে নেতৃত্ব দিতে রাত ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছান কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম।
তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো ইউনিট। ২৫ মার্চ শনিবার ভোরে আতিয়া মহলে অভিযান শুরু করে সোয়াট ও সেনাবাহিনীর প্যারা কমান্ডো বাহিনী।
প্রথমে সোয়াট এ অভিযানের নাম দিয়েছিল 'অপারেশন স্প্রিং রেইন'। এরপর সেনাবাহিনী এর নাম দেয় 'অপারেশন টোয়াইলাইট'। শনিবার সকাল থেকে অভিযান শুরুর পর দুপুর নাগাদ ভবনের ভেতর থেকে ৭৮ বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে আনে।
অভিযান নিয়ে শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে আতিয়া মহল থেকে আধা কিলোমিটার দূরে সেনাবাহিনীর প্রেস ব্রিফিং চলাকালে পাঠানপাড়া এলাকার জামে মসজিদের কাছে দুই দফা বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ ছয়জন নিহত হন। আহত হন র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানসহ অন্তত ৫০ জন।
বিস্ফোরণের ঘটনার পর 'আতিয়া মহল' আশপাশের এলাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসন। ঘটনাস্থলে সাংবাদিকসহ সবার প্রবেশ নিষিদ্ধ।
রবিবার (২৬ মার্চ) বিকালে প্রেস ব্রিফিংয়ে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ফখরুল আহসান অভিযানের বিষয়ে অগ্রগতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'অভিযানে এখন পর্যন্ত দুজন পুরুষ জঙ্গি নিহত হয়েছে। চরম ঝুঁকির মধ্যে আতিয়া মহল থেকে ৭৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে বের করা গেছে। আমাদের কমান্ডোরা ভালো কৌশল প্রয়োগ করতে পেরেছে। ওরা আশা করেছিল আমরা সামনে দিয়ে যাব। কিন্তু আমরা গিয়েছি ওপর দিয়ে। এ জন্য তারা বাসিন্দাদের বের করার মিশন সম্পর্কে টের পায়নি। '
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী লক্ষ্য করেছে, জঙ্গিরা বাড়ির নিচতলা, সিঁড়ি ও ভবনে ঢোকার পথে আইইডি লাগিয়ে রেখেছে। তাই কমান্ডোরা পাশের বাড়ি থেকে মই লাগিয়ে পাঁচতলা ভবনের ছাদের ওপর নামেন। বাসিন্দাদের বের করে নিয়ে আসার পর তারা ফায়ার করলে জঙ্গিরাও পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে।
তৃতীয় দিনের মতো অভিযান চলছে। থেমে থেমে গুলি ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।