মোঘলদের তৈরি দৃষ্টিনন্দন মিঠাপুকুর বড় মসজিদ


ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  প্রকাশিত: অক্টোবর ২০, ২০১৭, ০৩:৪৭ পিএম
মোঘলদের তৈরি দৃষ্টিনন্দন মিঠাপুকুর বড় মসজিদ

রংপুর: নয়নাভিরাম সবুজ শ্যামল প্রকৃতির সাথে মিশে যাওয়া মেঠোপথ। ওই পথের দু’পাশে সারি সারি গাছগাছালি। রয়েছে ধানের ক্ষেত। দূর থেকে দেখতে যেন রং-তুলিতে আঁকানো রুপসী বাংলা। পথ ধরে সামান্য হাটতেই চোখে পড়বে দিগন্ত জোড়া ধানের ক্ষেতের মধ্যে ভাসমান একটি মসজিদ। এটি রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার সবচেয়ে প্রাচীন স্থাপনারগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। 

দৃষ্টিনন্দন এই মিঠাপুকুর বড় মসজিদটি নির্মিত হয়েছে মোঘল আমলের শেষ দিকে। প্রায় ২০৬ বছর আগে নির্মিত মসজিদটি বাংলাদেশের প্রাচীন স্থাপনাগুলোর মধ্যে অন্যতম এক নির্দশন। ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত মিঠাপুকুর উপজেলার ৬৯৫টি মসজিদ রয়েছে। এর মধ্যে লতিফপুর  ইউনিয়নে এই মসজিদটি দাঁড়িয়ে রয়েছে।

রংপুর নগরী থেকে ২৪ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং মিঠাপুকুর উপজেলা  সদর  থেকে  আধা  মাইল  উত্তর-পশ্চিমে রংপুর ও বগুড়া মহাসড়কের পাশে এই মসজিদটি অবস্থিত। 

মসজিদের প্রবেশ দ্বারে সাঁটানো তথ্য থেকে জানা যায়, হিজরী ১২২৬ মোতাবেক বঙ্গাব্দ ১২১৭ শুক্রবার এবং খ্রি ১৮১১ সাল জনৈক শেখ মোহাম্মদ মোয়াজ্জম এর প্র-পুত্র শেখ মুহাম্মদ আসিন পিতা শেখ মোহাম্মদ সাবের কর্তৃক এটি  নির্মিত হয়।

মসজিদের চারপাশে রয়েছে সুরম্য গেটসহ অনেক পুরোনো বাউন্ডারি দেয়াল। দেয়ালের অভ্যন্তরে রয়েছে খোলা আঙ্গিনা। মসজিদের চার কোনায় পিলারের ওপর রয়েছে চারটি মিনার। মিনারগুলো আট কোনাকারে নির্মিত। মিনারগুলো ছাদের কিছু ওপরে ওঠে গম্বুজ আকৃতিতে শেষ হয়েছে।

মসজিদে প্রবেশের জন্য রয়েছে কারুকার্য খচিত তিনটি প্রবেশ দ্বার। মসজিদের মাঝের প্রবেশদ্বারের দু’পাশের পিলারের ওপরও রয়েছে ছোট দু’টি মিনার। সামনের অংশে পোড়া মাটির কারুকার্য মসজিদটিকে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন করে তুলেছে। মসজিদের ভেতরে সামনের দরজা বরাবর পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে তিনটি মেহরাব।

চারপাশের কৃষি জমি বেষ্টিত মসজিদটি অনন্য দৃষ্টিনন্দন স্থাপনায় পরিণত হয়েছে। মসজিদটির প্রবেশ দ্বারেও রয়েছে কারুকাজের ছাপ। মসজিদের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো কন্দকারে নির্মিত সুবিশাল তিনটি গম্বুজ। গোলাকার গম্বুজ দ্বারা আচ্ছাদিত মসজিদটির প্রথম প্রবেশদ্বার বাংলাদেশী স্থানীয় সংস্কৃতির আদলে তৈরি। 

এছাড়া ৪ কোণের উঁচু ছাদ। এখানে তিনটি অংশে মসজিদ ভাগ করে ৩ সেমি বৃত্তাকার গম্বুজ ও প্যারা-পুলি দেওয়াল নির্মিত হয়। গম্বুজগুলো সুন্দর প্যানেল, লতাপাতা, ফুল, জ্যামিতিক আকারের সঙ্গে পরিকল্পিত। দেখতে ড্রামস এবং দেয়ালের সাপের শিলালিপির মতো। 

এখানে আসতে হলে প্রথমে বাস বা অটোরিক্সায় করে মিঠাপুকুর গড়েরমাথা নামক জায়গায় আসতে হবে। এরপর সেখান থেকে পশ্চিম দিকে যে রাস্তাটি চলে গেছে বিরামপুর ও দিনাজপুর মহাসড়ক ধরে হেটে গেলে ৫ মিনিট আর রিক্সায় গেলে ২ মিনিটেই যেতে পারবেন মিঠাপুকুর বড় মসজিদে। রাস্তা থেকেই বাম দিকে বা দক্ষিণ দিকে তাকালেই দেখতে পারবেন মেঠোপথ বেয়ে সবুজের বুকে ভাসমান এই সুন্দর মসজিদটি ।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত এ দৃষ্টিনন্দন মসজিদটি প্রাচীনকাল থেকে মিঠাপুকুরকে ইসলামী জনপদ হিসেবে পরিচিত করে তুলেছে। আর এই ঐতিহাসিক মসজিদকে ঘিরে প্রতিদিনই কোন কোন স্থান থেকে দর্শনার্থী ও পর্যটকের আগমন ঘটছে।

গোনিউজ২৪/পিআর

পর্যটন বিভাগের আরো খবর