বাংলাদেশের স্থায়ী উন্নতি দেখছেন না ডমিঙ্গো


খেলাধুলা ডেস্ক প্রকাশিত: নভেম্বর ৩০, ২০২১, ১০:০০ এএম
বাংলাদেশের স্থায়ী উন্নতি দেখছেন না ডমিঙ্গো

আরও একটি টেস্ট, আরও একটি হতাশার হারের সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ। রাসেল ডমিঙ্গোর অধীনেও টেস্টে বাংলাদেশের দৈন্য দশা যেন কাটছেই না। সাদা পোশাকের ক্রিকেটে লাগাতার ব্যর্থতায় বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তুললেন ডমিঙ্গো। বাংলাদেশের প্রধান কোচ মনে করেন, ঘরোয়া ক্রিকেটে উন্নতি হলেও সেটা ক্ষণিকের জন্য। 


টেস্ট, হতাশা এবং হার। সর্বশেষ ২০ বছরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ। গত কয়েক বছরে সীমিত ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশ যতটা উন্নতি করেছে টেস্টে যেন ঠিক ততটাই পিছিয়েছে টাইগাররা। যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষেও টেস্ট সিরিজ হার।

সাদা পোশাকের ক্রিকেটে ভালো করতে ঘরোয়া ক্রিকেটে উন্নতি করার বিকল্প নেই। সেখানেই যেন অন্যান্য দেশের তুলনায় যোজন-যোজন পিছিয়ে বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজ শুরু কিংবা শেষ, সবখানেই প্রশ্নের মুখে থাকে বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে। উইকেট নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই।


নতুন অভিযোগ বাজে আম্পায়ারিং কিংবা একপাক্ষিক টুর্নামেন্টের।  বেশিরভাগ মৌসুম শুরুর আগে গুটি কয়েক দল দেশের সেরা তারকাদের নিয়ে দল সাজায়। তাতে করে বিপাকে পড়তে হয় ছোট সারির দলগুলোকে। সেই দলের দুই-একজন পারফর্ম করলেও দল হিসেবে সেই ধরনের প্রতিযোগিতা গড়ে তুলতে পারেনা। 

এই কারণে ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে বড় কোনো চ্যালেঞ্জ কিংবা প্রতিযোগিতা থাকে না। যে কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এসে ভুগতে হয় ঘরোয়া থেকে উঠে আসা ক্রিকেটারদের। কখনও ক্যাচ মিস আবার কখনও আলগা শট খেলে বিপাকে ফেলেন দলকে। চট্টগ্রাম টেস্টে ২০২ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে চতুর্থদিন শেষে বিনা উইকেটে ১০৯ রান সংগ্রহ করেছে পাকিস্তান।

তাতে শেষ দিনে সফরকারীদের প্রয়োজন মোটে ৯৩ রান। হাতে রয়েছে ১০ উইকেট।  দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের উন্নতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন ডমিঙ্গো বলেন, ‘আমি ব্যাপক উন্নতি দেখতে পাচ্ছি কিন্তু আমরা সেটা লম্বা সময়ের জন্য ধরে রাখতে পারছি না। ঘরোয়া ক্রিকেটে সম্ভবত লম্বা সময় ধরে প্রতিযোগিতা নেই। চাপ সামলানোর ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের ঘাটতি রয়েছে। আমরা আমাদেরকে দারুণ একটি পর্যায়ে পেয়েছি কিন্তু তা সম্পূর্ণ করতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিশ্চিত খেলোয়াড়েরাও খুবই হতাশ। আমরা এই ফরম্যাটে উন্নতি করেছি বলে মনে হচ্ছে কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সময়ে গিয়ে আমরা ছোট ভুল করছি। কখনও ক্যাচ পড়ে যাচ্ছে, ব্যাটাররা আলগা শট খেলছে অথবা খারাপ বোলিং স্পেল হচ্ছে। আমরা মনে হয় লম্বা সময় ধরে রাখতে (উন্নতি) পারি না। এটা খুবই হতাশাজনক।’

বাংলাদেশ ছাড়াও দক্ষিণ আফ্রিকার কোচিং প্যানেল কাজ করেছেন ডমিঙ্গো। বাংলাদেশ সেভাবে টেস্ট জিততে না পারলেও সাদা পোশাকের ক্রিকেটে দারুণ এক দল প্রোটিয়ারা। টেস্টে সেভাবে উন্নতি না হলেও বাংলাদেশে কাজ করে  উপভোগ করছেন ডমিঙ্গো। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের ক্রিকেটে উন্নতির ছাপও দেখছেন এই প্রোটিয়া কোচ। 

যদিও প্রশ্ন তুলেন বাংলাদেশের টেস্টের সংস্কৃৃতি নিয়ে। বাংলাদেশে টেস্টের তুলনায় সাদা বলের ক্রিকেটকে বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় বলেও অভিযোগ তাঁর। বেশ কয়েকজন প্রতিভাবান ক্রিকেটার থাকলেও আন্তর্জাতিক মানের ব্যাটার কিংবা বোলার হতে লম্বা পথ পাড়ি দিতে হবে বলেন মনে করেন তিনি। 

সাদা পোশাকের ক্রিকেটে উন্নতি করতে ঘরোয়া ক্রিকেটের দিকে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) নজর দেয়া উচিত বলে জানান ডমিঙ্গো। বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের সবচেয়ে বড় সমস্যার জায়গা সুযোগ আসলেও সেটা লুফে নিতে পারে না। কঠিন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নেয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন তিনি।

ডমিঙ্গো বলেন, ‘আমি এখানে কাজ করে উপভোগ করেছি। বলার অপেক্ষা রাখে না ব্যাপক কিছু উন্নতি হয়েছে। আমি দক্ষিণ আফ্রিকার কোচিং প্যানেলে যুক্ত ছিলাম যারা অনেকগুলো টেস্ট জিতেছে। এটা সত্যিই খুব হতাশার যে আমরা জানছি না, কিভাবে টেস্ট জিততে হয়। টেস্ট সংস্কৃতির উন্নতির প্রয়োজন। আমি সব সময় বিশ্বাস করেছি, আপনি যদি টেস্টে উন্নতি করেন তাহলে আপনার সাদা বলের ক্রিকেটেও উন্নতি হবে। হয়তো বাংলাদেশের টেস্টের চেয়ে সাদা বলের ক্রিকেট বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে। উদ্দীপ্ত কিছু খেলোয়াড় আসছে। যাদের অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে আন্তর্জাতিক মানের ব্যাটসম্যান ও বোলার হতে। যত বেশি ঘরোয়া ক্রিকেট, ‘এ’ দলের সফর হবে তত বেশি জাতীয় দলের উন্নতি হবে। এই মুহূর্তে, ঘরোয়া থেকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া একটি বিশাল পদক্ষেপ। এটা নিয়ে বিসিবির উচিত হবে নজর দেওয়া এবং নিশ্চিত করতে হবে যেন খেলায় এর প্রভাব পড়ে।’

বাংলাদেশের প্রধান কোচ আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের বুঝতে শেখা উচিত যখন আমাদের হাতে মুঠোয় সুযোগ আসে তখন কিভাবে লুফে নিতে হবে। কঠিন পরিস্থিতিতে কাউকে না কাউকে দাঁড়িয়ে সাহসী পদক্ষেপ নিতে হবে। কারো জন্য অপেক্ষা করে থাকা উচিত হবে না মোটেও। কারণ, আমরা টেস্ট ইতিহাসে অনেকগুলো ম্যাচ হেরেছি। সেজন্য আমাদের সেই বিশ্বাস, আত্মবিশ্বাস জোগাতে হবে। নিজেদের কাঁধে দায়িত্ব নিয়ে পথ চলতে হবে।’

খেলা বিভাগের আরো খবর