পাশের বাসার ভাবীকে নয়, সময় দিন নিজের সন্তানকে!


ফারজানা আক্তার প্রকাশিত: জানুয়ারি ২১, ২০১৮, ০১:০৫ পিএম
পাশের বাসার ভাবীকে নয়, সময় দিন নিজের সন্তানকে!

"রং নম্বরে প্রেম, কিশোরীর সর্বনাশ " - এই শিরোনামে জাগোনিউজ২৪ অনলাইনে ২০ জানুয়ারি ২০১৮ একটা নিউজ করা হয়েছে। যেহেতু এখন প্রিন্ট কপিতে তেমন একটা নিউজ পড়া হয় না, তাই অনলাইনে আসলেই আগে কিছু নিউজ দেখে নিই। আজকাল ধর্ষণ, প্রেম, সর্বনাশ এসব নিউজ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি। কেন জানি শরীর আর মন এখন এসব প্রতিক্রিয়ার চাপ নিতে পারে না। নিজেকে পাগল পাগল মনে হয়!

এই শিরোনামটা দেখার পর নিজের মনের অজান্তে একটু হাসলাম! ভাবলাম এখনো মানুষ রং নাম্বারে ভুল করে, এখনো রং নাম্বার কারো সর্বনাশ করে যায় ! একটু কেমন দ্বিধাগ্রস্ত হলাম তাই নিউজে ক্লিক করলাম। নিউজটা পড়ে একটা ধাক্কার মতো খেলাম। ভেবেছিলাম ভিকটিম প্রাপ্তবয়স্ক হবেই যে কারণে মনের অজান্তে হেসে উঠা কিন্তু একি! নিউজটা পড়ে ঠিক একটা জায়গায় আটকালাম, সেটা হলো "ভিকটিম মাদরাসায় পড়ুয়া চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী" । আমি আবার কথাটা লিখছি আপনারা প্লিজ একটু ভালো করে দেখুন এবং পড়ুন, "ভিকটিম মাদরাসায় পড়ুয়া চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী"।

কিছু বুঝলেন? ক্লাস ফোরে পড়ে একটা বাচ্চা তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাসা থেকে বের করে নিয়ে আসা হয়েছে। ক্লাস ফোরে পড়ুয়া একটা বাচ্চা প্রেম করছে, বিয়ের স্বপ্ন দেখছে, সংসার করার কথা ভাবছে? কিভাবে? কেমন করে? আমার তো সন্দেহ হচ্ছে এই ভেবে যে এই মেয়ের বয়ঃসন্ধিকাল শুরু হয়েছে তো? যে বয়সে ওই বাচ্চা মিনা কার্টুনের পিছনে ছুটবে, পুতুল কিনবে, পুতুলের বিয়ে দিবে, বাচ্চা ভূতের গল্প পড়বে, সেই বাচ্চা কিনা এক সন্তানের জনকের সাথে ঘর বাঁধার স্বপ্ন নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে! ভাবতে পারছেন? আপনারা কি কিছু টের পাচ্ছেন? 

আমার ঠিক মনে পরে না, আমি যখন ক্লাস ফোরে ছিলাম তখন আমি কি কি বুঝতাম আর কি কি বুঝতাম না! তবে প্রেম, বিয়ে, সংসার যে বুঝতাম না এটা আমি নিশ্চিত। সেই তথাকথিত এক সন্তানের জনককে কিছু বলার জন্য আমি এই লেখা লেখছি না। আমি লিখছি প্রতিটা সন্তানের বাবা -মাকে উদ্দেশ্য করে। বাবা -মা'রা আপনারা কি আমার এই লেখা দেখতে পাচ্ছেন? যদি পেয়ে থাকেন তাহলে ভালো করে একবার পড়ে নিবেন। 

এই যে বাবা আপনাকে বলছি, সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আপনি মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, নিজের শখ মাটি দিয়ে আদরের সন্তানটির সব আবদার পূরণ করছেন। এলাকার দামি ফ্লাটটি ভাড়া নিয়েছেন, সন্তানকে সবথেকে দামি স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। দায়িত্ব কি শেষ বাবা? নিজের সন্তানের সকল আবদার পূরণ করা ততটা জুরুরি না, যতটা জুরুরি সন্তানকে সময় দেওয়া, সন্তানের বন্ধু হওয়া এবং সন্তানের প্রকাশ্য গোপন সকল খোঁজ খবর রাখা।  ক্লাস ফোরে পড়ুয়া একটা বাচ্চার হাতে কিভাবে ফোন গেলো? কিভাবে একটা বাচ্চা ফোনে কথা বলেই প্রেমে পরে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো? তার অর্থ বাচ্চাটি বন্ধুর মতো মেশার মতো হয়তো কাউকে পায় নি, নিজের মনের মতো কারো সাথে মিশে কথা বলতে পারে নি। বাচ্চাটা পরিবারের সদস্যের কাছে তেমন মূল্য পায় নি, তাই ফোনে যখন ওই লোকটি তাকে প্রাধান্য দিয়ে কথা বলেছে, বাচ্চাটা সেই লোকটিকে ভরসা করেছে। এটাই তো?

এই যে মা আপনাকে বলছি, সন্তানের জন্য সবথেকে বেশি ত্যাগ স্বীকার তো আপনিই করেন। মা তো সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়েই সন্তানদের নাড়ি নক্ষত্রের খবর বলে দিতে পারে। বয়ঃসন্ধিকালের সময়টাতে আপনার সন্তানের যে আপনাকে খুব বেশি দরকার পরে সেটা কি আপনি জানেন না, বুঝতে পারেন না ? টিভি সিরিয়াল আর পাশের বাসার ভাবীর সাথে গল্প করার থেকে আপনার সন্তানকে সময় দেয়া সবথেকে বেশি জুরুরি মা। সচরাচর বাবারা মেয়েদের সব বিষয়ে কথা বলতে কমফোর্ট ফিল করে না, সেখানে মা আপনিই তো ভরসা। পাশের বাসার ভাবীর সন্তানের থেকে সবসময় নিজের সন্তানের সাফল্য বেশি কামনা করেন, সেই সাফল্য কি ওই ভাবীর সাথে গল্প করলে আসবে? নাকি নিজের সন্তানের বন্ধু হয়ে তার মনের কথা জানলে, তাকে একটু বেশি সময় দিলে আসবে বলেন তো? ভাবীদের সাথে এতো এতো সমীকরণ করেন আর এইটুকু বুঝেন না?

আমি যখন ইন্টার পরীক্ষা দিয়ে মেডিকেল কোচিংয়ের জন্য ভর্তি হলাম তখন আমার হাতে ফোন আসে। এর আগে আমি আমার হাতে ফোন পাই নি। বন্ধুবান্ধব কারো সাথে কথা বলার দরকার হলে আম্মার ফোন দিয়ে তাদের সামনে বসেই কথা বলতে হয়েছে। সে জন্যই হয়তো আমার ছোটবেলা বই পড়ে, কার্টুন দেখে, পুতুল নিয়েই কেটে গেছে এবং সেই সাথে সুন্দর একটি শৈশব পেয়েছি। আমাদের বাবা মা'রা  সচেতন ছিলো তাই আমাদের শৈশব আনন্দময় ছিলো, বর্তমানের বাবা মা খুব বেশি ব্যস্ত তাই তাদের বাচ্চাদের শৈশব ফোনে আর ট্যাবে সীমাবন্ধ আর ফলাফল সবার জানা! প্লিজ বাবা -মা'রা আপনারা সচেতন হোন, সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল হোন, আপনাদের কোয়ালিটি সময় তাদের খুব বেশি দরকার, অনেক বেশি প্রয়োজন।

গো নিউজ২৪/এবি

মতামত বিভাগের আরো খবর