কী খেতে পারবো কি পারবো না- আপনারাই বলেন!


ফারজানা আক্তার প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৩, ২০১৭, ০৫:২৯ পিএম
কী খেতে পারবো কি পারবো না- আপনারাই বলেন!

আমাদের একটা পরিচয় ছিলো ‘মাছে-ভাতে বাঙালি’। ‘ছিলো’ শব্দটি এ কারণে ব্যবহার করলাম যে, এখন আর এই পরিচয় আমাদের নেই। বাঙালির আরো একটা পরিচয় ছিলো ভোজনরসিক হিসেবে। তবে সে পরিচয়ও বিলুপ্তির পথে। ভোজনরসিক মানুষের মুখে হয়তো স্বাদ আছে, তবে সেই স্বাদের ডাকে সাড়া দেয়ার আর সাধ্য নাই। অতীতের পরিচয় মুছে আমাদের বর্তমান পরিচয় হচ্ছে ডিজিটাল জাতি।

আপনি মাছের বাজারে গেলেন। কোন মাছটা সস্তায় কিনতে পারছেন? জাতীয় মাছ ইলিশ। শেষ কবে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়া এ মাছ কিনতে পেরেছেন? ইলিশ মাছ ছেড়ে মানুষ রুই মাছ খাওয়া শুরু করলো। এখন রুই মাছের দামও লাগামছাড়া। আপনার ছেলে-মেয়ে চিংড়ি মাছ খুব পছন্দ করে, না? গলদা চিংড়ি কত করে কেজি বিক্রি হয় বাজারে?

ছাড়েন তো মাছের কথা। চলেন মাংস খাই। তা কিসের মাংস খাবেন? গরুর মাংস খাবেন না কি খাসির? আচ্ছা খাসি; গরু বাদ দেন। না, মুরগিই খাই চলেন। দেশি মুরগির কেজি কত আর মাংস হয় কতটুকু? এখন তাহলে ব্রয়লারই শেষ ভরসা। যারা ব্রয়লার খেতে পারেন না, তাদের মাংস খাওয়া ভুলে যাওয়াই ভালো।

চলেন কাঁচা বাজারে যাই। খাতা কলমে আমাদের দেশ সবুজের দেশ। সবুজ শাক-সবজিতে ভরপুর থাকার কথা আমাদের দেশের। আমরা তো স্বপ্ন দেখতেই পারি কাঁচা বাজারে গিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবো। কিন্তু আমরা তো এখন আর সবুজের দেশে নেই। আমরা এখন ডিজিটাল দেশে। তাই সবজি বাজারেও আমাদের দীর্ঘশ্বাস বের হয়।

আর কত? এবার চলেন যাই চালের বাজারে ( ঘরের চালা নয় কিন্ত, চাউল)। মাছ, মাংস, সবজি দিয়ে না হোক পানি দিয়েও তো ভাত খাওয়া যাবে! কিন্ত না। একি! চালের বাজারেও আগুন। হে ক্ষমতাশালীরা, আপনারা কি বলবেন আমরা গরীব মানুষেরা খাবোটা কী তাহলে? কী খেয়ে বাঁচবো আমরা? ডিজিটাল শব্দটা?

আপনাদের যখন যা মনে চাচ্ছে, ঠিক যেমনটা মনে চাচ্ছে সেটাই করে যাচ্ছেন। নিজেদের স্বার্থের জন্য অন্যের পেটে লাথি মারছেন? আমাদের দেশ কতটা উন্নত, বেশিরভাগ মানুষের সামর্থ্য কেমন সেটা চিন্তা না করেই যখন তখন নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। কেন এমনটা করছেন আপনারা?

হে প্রিয় ক্ষমতাশালী ব্যক্তিগণ, আমরা তো শুধু ভাত-মাছ খেয়েই বাঁচতে চাচ্ছি। আমাদের কষ্টের টাকায় আপনারা বিদেশ থেকে যে দামি দামি খাবার নিয়ে আসেন, আমরা তো সেখান থেকে কোনো ভাগ চাই নি। আমরা আমাদের নিজের টাকায় খাবো, আপনারা শুধু আমাদের এই গরীবদের বাজারে ডাকাতি করাটা বন্ধ করেন, প্লিজ।

আরেকটা কাজ করতে পারেন। যেহেতু আপনাদের মর্জি মতোই আমাদের চলতে হয়, খেতে হয়; সেই কবেই তো ইলিশ মাছ, গরুর মাংস, খাসির মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন। তারপর কাঁচাবাজারে হাত দিয়েছেন।  এখন দিয়েছেন চালে।

তো, আপনারাই বলে দেন আমরা কী খেতে পারবো আর কী খেতে পারবো না। শুধু শুধু বাজারে গিয়ে ঘুরে ফিরে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আসা থেকে আপনারা যা বলে দেবেন, সেটাই কিনে নিয়ে আসবো। সেটাই ভালো না? কি দরকার এক বাজার করতে গিয়ে সব দীর্ঘশ্বাস শেষ করে ফেলা। সামনে আর কত ঘটনা দেখার বাকি। তখন আবার কোথায় পাবো দীর্ঘশ্বাস! সব যদি এক বাজার করতে গিয়েই শেষ করে ফেলি।

মতামত বিভাগের আরো খবর