ভাত খাওয়া ক্ষ্যামা দেন


বুরহান উদ্দিন ফয়সল প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৭, ০৫:২০ পিএম
ভাত খাওয়া ক্ষ্যামা দেন

বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় তারকা এখন ’চাল’। তারকাদের যেমন রেকর্ড থাকে আবার রেকর্ড ভাঙার ইতিহাস থাকে, চালও সৃষ্টি করছে নতুন নতুন রেকর্ড। আর এক টাকা বাড়লেই হয়ে যাবে অনেক কাঙ্ক্ষিত একটি রেকর্ড, চেতনার রেকর্ড। কিন্তু কথা হলো এমন রেকর্ড আমরা চাই কি না? যদি না-ই চাই তাহলে আমরা এতদিন চুপ রইলাম কেন? চাল আমদানিতে এত শুল্ক কমানো হলো সেই টাকাগুলো কার পকেটে গেল? এসব ব্যবসায়িরা কি সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী?

এক মাননীয় তো রোজার সময় চিনির দাম বৃদ্ধি নিয়ে বলেছিলেন, ওরা তো সারাবছর ব্যবসা করে না, রমজানে একটু করে, তাই দাম বেড়েছে। এমন কথা যারা বলতে পারেন তারা কি প্রজাতন্ত্রের সেবক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন? নিন্দুকেরা তো নানা কথা বলে। অনেককে নাকি ‘ম্যানেজ’ করতে হয় পণ্যমূল্যের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির সুযোগ নিতে। সেই ’ম্যানেজের’ আর্থিক মূল্য নাকি শত কোটিতে গিয়েও ঠেকে কোনো কোনো সময়। আর এর সুযোগ নিয়ে অসাধুরা হাতিয়ে নেয় কয়েকগুন টাকা।

বড় ব্যবসায়িরা যদি প্রতি কেজি চালে ২ টাকা অতিরিক্ত মুনাফা করে, আর তাদের দৈনিক বিক্রি ও শত টন ছাড়িয়ে যায়, সে হিসেবে এ কয়দিনেই কয়েকশ’ কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। সেক্ষেত্রে তারা একা খান না মাননীয়দেরও হিসাবে রাখতে হয়।

আচ্ছা কেউ কি বলতে পারবেন এখন কেন চালের দাম বাড়লো? এখন কি মাঠে ধান আছে যে বন্যায় নষ্ট হবে? আমদানি করা চালের অজুহাত দেখাবেন তো? সেক্ষেত্রে শুল্ক কমানোর পর তো প্রতি কেজিতে ১৫ টাকার বেশি দাম কমার কথা। আর এখন তো কৃষকের হাতেও ধান নেই যে, তাদের প্রান্তে দাম বাড়ার অজুহাত দেবেন। যা করেছে সবটুকুই মুনাফালোভী ব্যবসায়িরা করেছে।

তাহলে সরকার কী করেছে? চাল যখন সাধারণ মানুষের হার্ট অ্যাটাকের কারণ হতে বসেছে তখন বাণিজ্যমন্ত্রী একজনকে আটকের ফরমান জারি করলেন। হুকুমনামায় চালের গুদামে অভিযানের কথাও বলা হলো। পুলিশ অভিযান চালালো কিন্তু ফলাফল শূন্য। আচ্ছা বলুন তো, ঘোষণা দিয়ে কাউকে আটক করা খুব সহজ কাজ? আর কেউ মজুতদারি করলে তারা প্রকাশ্যে গুদামেই মজুত করবে? ওরা কি এত বেক্কল? আপনার ধরার ইচ্ছা থাকলে আগে কেন ধরলেন না? কোথায় গোয়েন্দা সংস্থা? তারা কি মজুতদারের গোপন গুদাম চেনে না?

সবচেয়ে মজার ঘটনা ঘটেছে ১৯ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। মন্ত্রী বাহাদুরদের সাথে চোখ রাঙারাঙির পর মহান ব্যবসায়িরা ঘোষণা দিয়েছেন তাদের কলিজা দরদে ভরা। প্রতি কেজিতে ২/৩ টাকা দাম কমাবেন তারা। অত্যন্ত দয়ার দিল তাদের।

আচ্ছা তার মানে তারা এতদিন অপরাধ করেছে। কারণ ছাড়াই দাম বাড়িয়েছে। না হলে কমানোর ঘোষণা কীভাবে দেয়? তো, প্রশ্ন হলো বাড়িয়েছে ৮/১০ টাকা, কমাবে ২/৩ টাকা। বাকিটার কী হবে? কোনো জবাব কি আছে?

ওরা এভাবেই পকেট কাটবে আমাদের? জবাব হলো হ্যাঁ কাটতেই থাকবে, পারলে কিছু করেন নইলে ভাত খাওয়া ক্ষ্যামা দেন। 

লেখক: বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সাংবাদিক। 
ইমেইল: bufaisaljn@gmail.com

মতামত বিভাগের আরো খবর