ওরা আপনার বেতনভুক্ত কর্মচারী, আপনার কেনা গোলাম নয়‍‍!


ফারজানা আক্তার প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০১৭, ০৩:৪৪ পিএম
ওরা আপনার বেতনভুক্ত কর্মচারী, আপনার কেনা গোলাম নয়‍‍!

আমরা যখন পার্কে বেড়াতে যাই তখন ছোট ছোট বাচ্চারা ভিক্ষা চাইতে আসে। আমরা অনেক সময় অনেক বাচ্চার সাথে গল্প করি।  জিজ্ঞেস করি তার বাসায় কে কে আছে, এই টাকা নিয়ে সে কী করবে? কী খাবে? ইত্যাদি ইত্যাদি। অনেক বাচ্চা বলে তাদের মা নেই অথবা বাবা নেই অথবা কেউই নেই! অনেক বাচ্চা বলে, “বাপে আরেকটা বিয়া কইরা গেছে গা” অথবা বলে, “মা-ই অন্য একডা বেডারে বিয়া করছে, হেই আমারে খাইতে দেয় না”! এসব কথা শুনে আমাদের মন হু হু করে উঠে। আমরা দুইটা টাকা বেশি দেই অথবা ভালো কিছু একটা কিনে দেই।

ঠিক এই বয়সীই কিছু বাচ্চা আমাদের বাসা-বাড়িতে কাজে আসে। তাদেরও অনেকের বাপ ‘আরেকটা বিয়া কইরা গেছে গা অথবা মা বিয়া কইরা আলাদা থাকে’ অথবা কেউ একজন জীবিত আছে অথবা কেউ জীবিত নাই। অনেকে আবার কোনো উপায় না দেখে সংসারের ভার নিজের কাঁধে তুলে নেয়। আচ্ছা বলেন তো, এই পার্কে বাচ্চাটার গল্প শুনে আপনার মনটা যেমন হু হু করে উঠেছিলো, আপনার বাসায় কাজ করতে আসা বাচ্চাটার জন্য কি আপনার একই অনুভূতি হয়েছিলো?

আপনার বাসায় কাজ করতে আসা বাচ্চাটাকে আপনার রোবট মনে হয়। তার কোনো ক্লান্তি নেই, কোনো ইচ্ছা নেই, কোনো অনুভূতি নেই, কোনো অসুখ নেই, কোনো ব্যথা নেই। তাকে যেমন ইচ্ছে তেমন করেই মারা যায়, পোড়ানো যায়, তাই না? আপনার বাসায় কাজ করতে আসা বাচ্চাটা তো ফেরেশতা! তার কোনো কাজে ভুল হতে পারবে না- কারণ বাসাটা তো আপনার! আপনারা কখনো কোনো কাজে ভুল করেন নাই, করেন না এবং করবেনও না!

আমি জানি, বুঝি এবং মানি কাজ করতে এসে তারা অনেক ভুল করে, খাবার চুরি করে, সুযোগ বুঝে টাকা-পয়সা, গহনা যা পায় তাই নিয়ে যায়। টাকা-পয়সা, গহনা, আপনার দামি ফোন সামলিয়ে রাখার দায়িত্ব আপনার নিজের।

গরীব মানুষ ওরা, এমন লোভনীয় জিনিস চোখের সামনে থাকলে চুরি করাটাই স্বাভাবিক। যদি আপনার খাবার চুরি যায় বা ওদের কাজ যদি পছন্দ না হয় আপনি ওদের বিদায় করে দেন। আপনি যদি ওদের লাখ টাকা বেতন দেন, আই রিপিট আপনি যদি ওদের লাখ টাকা বেতনও দেন তাও ওদের আগুনের ছ্যাঁকা দেয়া বা পিটিয়ে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলার অধিকার নেই। ওরা আপনার বেতনভুক্ত কর্মচারী, আপনার কেনা গোলাম নয়। মাইন্ড ইট!

মতামত বিভাগের আরো খবর