দেশে ৫০ হাজার করোনা সংক্রমণ এ মাসেই হতে পারে


নিজস্ব প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ২৭, ২০২০, ০৮:১৩ পিএম
দেশে ৫০ হাজার করোনা সংক্রমণ এ মাসেই হতে পারে

বাংলাদেশে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা, ৮০ তম দিনে এসেও আমরা বুঝতে পারছি না করোনা সংক্রমণের গতিপ্রকৃতি। এটা যে বাড়ছে তা বুঝতে কোন সমস্যা না হলেও এই বৃদ্ধি কতদিন থাকবে তা অনুমান করা নানা কারণেই কঠিন হয়ে গেছে।

বাংলাদেশে ঈদের কারণে গত দুইদিনে পরীক্ষা কম হয়েছে। তবে পরীক্ষা কম হলেও শতকরা হিসেবে তা ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে। গত দুইদিনে বাংলাদেশে প্রায় ২০ শতাংশ নতুন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। আর বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৪ ভাগের বেশি। এই কারণে এখনো বাংলাদেশ যে সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেনি তা অনুমান করতে কষ্ট হয়না।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছানোর পর তা ধীরে ধীরে কমতে থাকে- এটা হচ্ছে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ। কিন্তু বাংলাদেশে যে বাস্তবতা তাতে এই বিশ্লেষণ প্রযোজ্য নাও হতে পারে। এর আগে বিশেষজ্ঞরা প্রক্ষেপণ করেছিলেন যে বাংলাদেশে মে মাসের শেষ পর্যন্ত সংক্রমণ বাড়তে থকাবে এবং জুন থেকে এটা আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে জুনের শেষ নাগাদ গিয়ে আমাদের করোনা পরিস্থিতি সহনীয় পর্যায়ে আসবে।

কিন্তু বর্তমান বাস্তবতা বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে, করোনা রোগীর সংখ্যা কতদিন পর্যন্ত বাড়তে থাকবে তা এখন আর প্রক্ষেপণ করা সম্ভব নয়। কারণ অনেকগুলো ঘটনা ঘটেছে। যখন করোনার পিক সিজন শুরু হয়, যখন সর্বোচ্চ সংক্রমণ শুরু হয় তখন সামাজিক মেলামেশা বন্ধ এবং ঘরবন্দি থাকতে হয় এবং সব দেশগুলো এটাই করেছে।

এর মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ বন্ধ হয় এবং আস্তে আস্তে তা কমতে থাকে। কিন্তু আমাদের যখন করোনার সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে এপ্রিলের শেষ সপ্তাহ থেকে, তখন থেকেই আমাদের গার্মেন্টস, দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে, বাজারহাটে মানুষ অবাধে চলাফেরা করছে, অনেক অফিস-আদালতও খোলা হয়েছে। যার ফলে বাংলাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা কতদিন পর্যন্ত বাড়বে বা কি পরিমাণ বাড়বে সেটার কোন পরিসংখ্যান এখন আর করা সম্ভব হচ্ছেনা।

এখন মানুষ ঈদে বাড়ি চলে গেছে, ফলে সারাদেশে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আবার লোকজন ঢাকায় ফেরত আসবে, এর ফলে আরেক দফায় সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হবে। কাজেই বাংলাদেশে এখনই যদি কঠোর লকডাউন বা কারফিউ জারি করা না যায় তাহলে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ কতদিন থাকবে বা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সে সম্পর্কে কোন সঠিক ধারণা দেওয়া সম্ভব নয়।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে, ঈদের পরে এখন যদি সরকার ১০ থেকে ১৪ দিনের জন্য কঠোর লকডাউন দেয় তাহলে হয়তো বাংলাদেশে আগামী ৭ দিন পর করোনা পরিস্থিতি চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনিত হবে এবং চুড়ান্ত পর্যায়ের পরে আস্তে আস্তে কমতে শুরু করবে এবং জুনের শেষ নাগাদ কমে যাবে।

কিন্তু সেরকম পথে না হাঁটলে দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়তেই থাকবে এবং সেটা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা কেউ বলতে পারছে না।কতদিন পর্যন্ত এই সংক্রমণ থাকবে সেটাও প্রক্ষেপণ করা সম্ভব হবেনা।

এখন বাংলাদেশে করোনা রোগীরা সংখ্যা হচ্ছে ৩৮ হাজার ২৯২ জন। এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫১২ জনের পরীক্ষা করা হয়েছে। এই রোগীর সংখ্যা কত হবে সেটাও জনগণের কাছে আতঙ্কের প্রশ্ন। কারণ রোগীর সংখ্যা যত বাড়বে তত সাধারণ হাসপাতালগুলোতে চাহিদা বাড়বে, হাসপাতালগুলোতে ভিড় হবে এবং অন্যান্য সাধারণ রোগীরা সংক্রমিত হবে। ফলে হাসপাতালগুলো হয়ে যাবে করোনার হটস্পট। বাংলাদেশে ৬০ থেকে ৭০ হাজার সরকারি হাসপাতালের শয্যা রয়েছে। এখন করোনার এমন বৃদ্ধি হতে থাকলে চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে যাবে। তাই করোনা রোগীর সংখ্যা কত হতে পারে সেই প্রক্ষেপণও বাংলাদেশে জরুরী।

এর আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রক্ষেপণ করা হয়েছিল যে, ৫০ থেকে ৬০ হাজার করোনা রোগী শনাক্ত হবে এবং খুব বেশি হলে এটা ১ লাখে পৌঁছাতে পারে।

কিন্তু এখন বিশ্লেষকরা বলছেন যে, বাংলাদেশে করোনার যে পরিস্থিতি তাতে ৫০ হাজার সংক্রমণ এই মাসেই হতে পারে এবং বেশি করে পরীক্ষা হলে তা আগেই অতিক্রান্তহতো। আর এখন যেভাবে সংক্রমিত হচ্ছে তাতে বাংলাদেশে ১ লাখ তো ছাড়াবেই, আরো বেশি ছাড়িয়ে যেতে পারে রোগীর সংখ্যা।

কিন্তু করোনা রোগীর সংখ্যা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানভিত্তিক প্রক্ষেপণ এখন সম্ভব নয় এবং বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, আমরা একটি অন্ধকারে হাতড়াচ্ছি। আমরা জানি না যে কি পরিমাণ আক্রান্ত হবে, সেই অনুযায়ী আমাদের প্রস্তুতি বা কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবো তা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আবার আমরা জানি না যে, করোনা রোগী কত হবে, সেটার উপর নির্ভর করছে আমাদের স্বাস্থ্যগত প্রস্তুতি, অর্থনৈতিক প্রস্তুতিসহ অন্যান্য প্রস্তুতি। কাজেই এই সামগ্রিক বিষয়গুলো নিয়ে যে জটিলতা তৈরি হচ্ছে, যে জটিলতার প্রতিক্রিয়া শুধু স্বাস্থ্যগত বিষয়ের উপর পড়বে না, সামগ্রিক অর্থনীতির উপরে পড়তে বাধ্য।

গোনিউজ২৪/এন

জাতীয় বিভাগের আরো খবর