বেদখল: হকারদের হাঁকডাকে সরগরম ফুটপাত


কাহহার সামি: প্রকাশিত: অক্টোবর ১১, ২০১৮, ০৪:০৩ পিএম
বেদখল: হকারদের হাঁকডাকে সরগরম ফুটপাত

রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হকারদের হাঁকডাকে সরগরম ফুটপাত। বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে হকারমুক্ত করা হলেও কিছুদিন পর আবারো হকারদের দখলে চলে যায় পথচারী-সেতুটি। দেখে বুঝার কোনো উপায় থাকে না এটি কোনো ফুটপাত নাকি ব্যবসাকেন্দ্র। রাজধানীর প্রায় সব ফুটপাতের চিত্রটাই এমন।

ফুটপাতের দু’পাশে বসানো পোশাকের দোকান, খাবারের দোকান, টং দোকানসহ নানা ধরনের দোকানের দৌরাত্ম্যের কারণে কোথাও পা ফেলার উপায় নেই। একপ্রকার বাধ্য হয়ে সড়কে নেমে পড়ছে পথচারীরা। আবার অনেক সড়কের ফুটপাতসংলগ্ন অংশ থাকে থেমে থাকা গাড়ির দখলে। যার ফলে, দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে পথচারীদের হাঁটতে হয় রাস্তার প্রায় মাঝখান দিয়ে।

বাইতুল মোকাররমের পশ্চিম পাশের ফুটপাতের দৃশ্য। ছবি: কাহহার সামি।

মাঝ রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকা পথচারী ফাহাদ এলাহীর কাছে জানতে চাওয়া হয় এর কারণ- তিনি বলেন, ‘আমরা যে ফুটপাত দিয়ে হাঁটবো সে রাস্তাটা কোথায়? ফুটপাতের দুই পাশ জুড়ে বসে আছে হকাররা। মাঝে ঘেঁষাঘেঁষি করে থেমে থেমে হাঁটতে হয়। আবার পকেটমারের ভয়টা তো থাকেই। তার উপর রাস্তার পাশজুড়ে থাকে থেমে থাকা গাড়িগুলো। এক প্রকার বাধ্য হয়েই হাঁটতে হয় প্রায় মাঝ রাস্তার পথ ধরে।’ 

সরেজমিনে দেখা যায়, গুলিস্তান, পল্টন, বায়তুল মোকাররম ও ফার্মগেট এলাকার মার্কেটগুলোর সামনে ফুটপাতে দোকান বসিয়ে রমরমা কেনাবেচা চালিয়ে যাচ্ছেন হকাররা। গুলিস্তান এলাকার ফুটপাতের দুই পাশে বসানো দোকানের মাঝ রাস্তা দিয়ে পাশাপাশি দু’জন হাঁটাটা খুব কষ্টের। একই চিত্র পল্টন, বায়তুল মোকাররম এলাকার। 

গুলিস্তান এলাকায় ফুটপাত তো দখলে আছে তার উপর রাস্তার অধিকাংশ জায়গা জুড়ে বসানো হয়েছে দোকান। ছবি: কাহহার সামি।

এদিকে ফার্মগেট এলাকার তেজগাঁও কলেজ সংলগ্ন ফুটওভার ব্রিজও রেহায় পাইনি হকারদের হাত থেকে। ওভার ব্রিজেও বসানো হয়েছে দোকানপাট। এতে ওভার ব্রিজ ব্যবহারে ভোগান্তিতে পড়ছে পথচারীরা। অনেকে রাস্তা পার হচ্ছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। ফুটপাত দখলমুক্ত এবং পুনরায় বেদখল হয়ে যাওয়ার ঘটনায় বিরক্ত নগরবাসী। 

সুমাইয়া নামের এক পথচারী মুখে বিরক্তি ছাপ নিয়ে বলেন, ‘সরকারের চেয়ে কি তাদের ক্ষমতা বেশি? ফুটপাতে দোকান বসানোর ফলে মাঝে সরু রাস্তা বাকি থাকে। যা দিয়ে একজন মানুষ হাঁটতে পারবে। সেই একজনের হাঁটার জায়গায় যদি দুই তিনজন আসা যাওয়া করে আবার মাঝে মাঝে কেউ দাঁড়িয়ে থাকেন তখন কি অবস্থাটা হয় বলেন। অনেকে আছেন সুযোগ সন্ধানি যারা কিনা ইচ্ছা করে গায়ে ধাক্কা লাগে। এমন সব বিরক্তিকর অবস্থা থেকে রক্ষা পেতে বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হয়।’   

বাইতুল মোকাররমের আশপাশের ফুটপাত হকারদের দখলে। ছবি: কাহহার সামি।

বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর ২ লাখ ৬০ হাজার মানুষ ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ব্যবসা করে। তাদের প্রত্যেককে প্রতিদিন গড়ে ১৯২ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। বছরে এ খাতে চাঁদাবাজির পরিমাণ ১ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। এ টাকা চাঁদাবাজ, প্রভাবশালীব্যক্তি ও পুলিশের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়। যার ফলে, ফুটপাত দখলমুক্ত করতে এলে মন্ত্রী-এমপিরা বাধা হয়ে দাঁড়ায় বলে গণমাধ্যমে একাধিকবার অভিযোগ করেছেন ঢাকা দক্ষিণ মেয়র মোহাম্মাদ সাঈদ খোকন। 

বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’র সামনের ফুটপাতে হকারদের উৎপাত, ভোগান্তিতে পথচারী। ছবি: কাহহার সামি।

এক প্রশ্নের জাবাবে গো নিউজকে সাঈদ খোকন বলেন, আমরা চেষ্টা করি ফুটপাত দখলমুক্ত রাখার। কিন্তু কিছু সুবিধাভোগীদের জন্য ফুটপাত দখলমুক্ত রাখা সম্ভব হয়ে উঠে না। তিনি আরো জানান, দখলমুক্ত রাখার পর সেটা রক্ষার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের হলেও তাদের তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যায় না।
**ফুটপাতে হকারদের ভিডিও চিত্র: 

গো নিউজ২৪/কাসা

জাতীয় বিভাগের আরো খবর