ইয়াবা পাচারে ব্যাংক অফিসার-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ আটক ৫


নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: আগস্ট ১৬, ২০১৮, ০৫:১৩ পিএম
ইয়াবা পাচারে ব্যাংক অফিসার-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীসহ আটক ৫

ঢাকা : ওষুধ ব্যবসার আড়ালে ইয়াবা ব্যবসার অভিযোগে রাজধানীতে ৫ জনকে আটক করেছে র‌্যাব। বুধবার দিবাগত রাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডে দুই বাসায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। বিভিন্ন ধরনের ইলেকট্রিক্যাল সরঞ্জামাদি, ফ্যান, ওয়াশিং মেশিন, এসি ইত্যাদির ভেতরে করে তারা ইয়াবা আদান প্রদান করতো বলে র‌্যাবকে জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক মুফতি মাহমুদ।

আটকৃতরা হলেন- জহির আহাম্মেদ ওরফে মৌলভি জহির (৬০)। ফয়সাল আহাম্মেদ (৩১), মিরাজ উদ্দিন নিশান (২১), তৌফিকুল ইসলাম ওরফে সানি (২১), সঞ্জয় চন্দ্র হালদার (২০) ও মমিনুল আলম ওরফে মোমিন (৩০)।

র‌্যাব জানায়, আটক জহির আহাম্মেদ ওরফে মৌলভি জহিরের টেকনাফে ওষুধের দোকান আছে। কিন্তু এই ব্যবসার আড়ালে তিনি ইয়াবা ব্যবসা করেন। তার সঙ্গে জড়িত তার স্ত্রী, মেয়ে, ছেলে, জামাতাসহ অন্যান্য স্বজন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জহির হলেন ইয়াবা চোরাচালান চক্রটির মূল হোতা। তিনি ও তার বড় ছেলে জহিরুল ইসলাম ওরফে বাবু (২৮) পাঁচ-ছয় বছর ধরে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে বাসা ভাড়া করে ইয়াবা ব্যবসা করছেন। বাবু গত ২৫ এপ্রিল মাদকদ্রব্যসহ ধানমন্ডি এলাকা থেকে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে গ্রেফতার হন। এখন তিনি কারাগারে। ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত জহিরের স্ত্রী, মেয়ে, বড় জামাতা আবদুল আমিন, জামাতার ভাই নুরুল আমিন। জহিরের সঙ্গে টেকনাফের বেশ কয়েকজন জড়িত। এই সিন্ডিকেটে আরও জড়িত পরিবহন খাতে কর্মরত কয়েকজন চালক ও সহকারী, দুটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মচারী, ঢাকার কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা। তাদের সদস্য সংখ্যা ২৫ থেকে ৩০ জন।

র‌্যাব জানায়, জহিরের ইয়াবা ব্যবসার সন্ধান পেয়ে র‍্যাব-২ অভিযানে নামে। অভিযানে বুধবার (১৫ আগস্ট) রাতে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের দুটি বাসা থেকে ২ লাখ ৭ হাজার ১০০টি ইয়াবা উদ্ধার করে। মাদক বিক্রির ১৬ লাখ ৬৪ হাজার টাকাসহ ছয়জন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। র‍্যাব বলছে, উদ্ধার করা মাদকদ্রব্যের মূল্য প্রায় ৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জহির জানান, এই সিন্ডিকেটের মিয়ানমারের প্রতিনিধি আলম ওরফে বর্মাইয়া আলম। তিনি মিয়ানমারের মংডুতে স্থায়ীভাবে বাস করছেন। টেকনাফেও বর্মাইয়া আলমের একটি বাড়ি রয়েছে। তিনি টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা দিয়ে নৌপথে মংডু থেকে ইয়াবা পাচার করে টেকনাফের নাজিরপাড়া, জালিয়াপাড়াসহ টেকনাফের বিভিন্ন এলাকার বাড়িতে ইয়াবা মজুত রাখেন। মজুত করা ইয়াবা জহির ও তার জামাতা আবদুল আমিন, নুরুল আমিন ও মোমিন টেকনাফে বর্মাইয়া আলম কাছ থেকে সংগ্রহ করে থাকেন। পরে তারা টেকনাফ বা কক্সবাজার থেকে ঢাকাগামী বিভিন্ন পরিবহন, কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঢাকায় পাঠান।

উদ্ধারকৃত ইয়াবাগুলো সাত-আট দিন আগে দুটি চালানে কার্টনে এসি ও ফ্যানের ভেতরে ঢুকিয়ে ঢাকায় আনা হয়েছিল। এই সিন্ডিকেটের আবদুল আমিন ও তার ভাই নুরুল আমিন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকায় আছেন।

র‍্যাব বলছে, ফয়সাল আহাম্মেদ জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন, তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে কর্মরত। তিন বছর ধরে ইয়াবা সেবন করে আসছেন এবং ধীরে ধীরে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন।

জিজ্ঞাসাবাদে মিরাজ উদ্দিন জানান, তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে প্রথম সেমিস্টারে পড়েন। গ্রেফতার করা মোমিন ও তার বাড়ি একই অঞ্চলে হওয়ায় পরিচয় সূত্রে তিনি ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি ইয়াবা সেবনকারীও।

জিজ্ঞাসাবাদে তৌফিকুল ইসলাম জানান, তিনি ঢাকায় একটি কলেজে ম্যানেজমেন্টে প্রথম বর্ষে পড়েন। তার কলেজের বন্ধু গ্রেফতারকৃত মিরাজ উদ্দিন নিশানের সূত্র ধরে গ্রেফতারকৃত মোমিনের সঙ্গে পরিচয়। তিনি গত দেড় বছর থেকে ইয়াবা সেবন এবং ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত।

জিজ্ঞাসাবাদে সঞ্জয় চন্দ্র হালদার জানান, তিনি মাদারীপুর একটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বর্তমানে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। তিনি এক বছর ধরে ইয়াবা সেবন করছেন এবং গ্রেফতারকৃত তৌফিকুল ইসলামের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত নিশানের সঙ্গে পরিচয় সূত্রে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি ইয়াবা সংগ্রহ করে শরিয়তপুরে খুচরা বিক্রি করে আসছিলেন।

 

গো নিউজ২৪/আই

জাতীয় বিভাগের আরো খবর