গাজীপুরে ভোটের যত হিসাব-নিকাশ


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: জুন ২৩, ২০১৮, ০৬:০০ পিএম
গাজীপুরে ভোটের যত হিসাব-নিকাশ

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আর মাত্র তিনদিন বাকি। ভোটারদের পক্ষে টানার জন্য প্রধান দলগুলোর মধ্যে চলছে নানা ধরণের কৌশল ও হিসাব নিকাশ।

উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনে প্রচার প্রচারণা করেছেন প্রার্থীরা। এরই মধ্যে এবারের এ নির্বাচন বেশ জমে উঠেছে। প্রার্থীরা ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা রোদ বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন ছুটছেন ভোটারদের কাছে।

গাজীপুরের এ নির্বাচনে মেয়র পদের তালিকায় সাত প্রার্থীর নাম ও প্রতীক থাকলেও সবার দৃষ্টিই এখন প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত দুই মেয়র পদপ্রার্থীর দিকে। উভয় জোটের নেতা-কর্মীরা নিজেদের অস্তিত্বের লড়াইয়ে নানা পরিকল্পনায় এলাকায় গণসংযোগ করছেন।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে ফেলবে এমন ধারণায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট এবং বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এ নির্বাচনকে অধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই নিজেদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল মিটিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রধান এ দুই জোটের নেতা-কর্মী ও সমর্থকরা নির্বাচনী মাঠে নেমেছেন।

তাঁরা নিজ জোটের মনোনীত মেয়র পদপ্রার্থীকে বিজয়ী করতে সমর্থন আদায়ের জন্য ভোটারদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন। তাঁরা নানা কৌশলে ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের মন জয় করার চেষ্টা করছেন।

মোট ৫৭টি ওয়ার্ড নিয়ে সিটি করপোরেশন গঠিত। ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন। পুরুষ ও নারী ভোটারের সংখ্যা প্রায় সমান-সমান। ভোটকেন্দ্র ৪২৫টি। এর মধ্যে ৩৩৭টি কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেই হিসাবে গাজীপুর সিটিতে গড়ে ৭৯ দশমিক ২৫ শতাংশ ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিতে আছে। এছাড়া ৮৮টি ভোট কেন্দ্রকে ঝুঁকিমুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

সর্বশেষ ২০১৩ সালে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা বেড়েছে। গত নির্বাচনে গাজীপুরে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র ছিল মোট ভোট কেন্দ্রের ৬০ শতাংশ। এবার গাজীপুরে আরও ১৯ শতাংশ কেন্দ্র ঝুঁকির তালিকায় যুক্ত হলো।

গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাসেল শেখ জানান, গাজীপুরের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এই প্রথমবারের মতো প্রতিটি ওয়ার্ডে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের অধীনে একটি করে ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকছে। নির্বাচনের আগে ও পরে মোট চারদিনে  (২৪ জুন হতে ২৭ জুন পর্যন্ত)  ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। এ ছাড়া আরো ১০ জন অতিরিক্ত হিসেবে সর্বমোট ৬৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। আর একই সময়ের জন্য প্রতি তিনটি ওয়ার্ড মিলে একজন করে মোট ১৯ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট থাকছেন। সিটি নির্বাচনে এবার স্মরণকালের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

রাসেল শেখ বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকছেন পর্যাপ্ত সংখ্যক বিজিবি, পুলিশ, আনসার ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য। ৪২৫টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ৩৩৭টির প্রতিটিতে আনসার ও পুলিশ ২৪ জন করে এবং ৮৮টি সাধারণ কেন্দ্রের প্রতিটির জন্য ওই সংখ্যা হবে ২২ জন। সর্বমোট ১০ হাজার পুলিশ ও আনসার মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া র‍্যাবের ৫৭টি ওয়ার্ডের ৫৭টি টিম এবং একটি রিজার্ভ টিম থাকবে। যার প্রতিটি টিমে সদস্য সংখ্যা থাকবে ১০ জন করে। প্রতি তিনটি ওয়ার্ডে এক প্লাটুন করে মোট ১৯ প্লাটুন বিজিবি থাকবে, প্রতি প্লাটুনে ২০ জন করে বিজিবি সদস্য থাকবে। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা এসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৪২৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা,  র‍্যাবের ৫৮ জন মোবাইল ফোর্স, স্ট্রাইকিং ফোর্স টিমের ২০ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষিত করা হয়েছে। এ ছাড়া নির্বাচনী এলাকায় পেট্রল, মোবাইল পার্টিসহ  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহল টিম থাকবে।

*** যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ***

২৫ জুন দিবগত রাত ১২টা থেকে ২৬ জুন দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত ট্যাক্সিক্যাব, বেবি ট্যাক্সি, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ ভ্যান, প্রাইভেটকার, বাস, ট্রাক, ট্যাম্পু ইত্যাদির ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

২৪ জুন দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২৭জুন সকাল ৬টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় মোটরসাইকেল চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

**** বহিরাগতদের ওপর নিষেধাজ্ঞা ****

বহিরাগতদের জন্য এলাকার বাসিন্দা নয় বা ভোটার নয় তাদের ২৩ জুন দিবাগত রাত ১২টার আগেই নির্বাচনী এলাকা ত্যাগ করতে হবে।

**** বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন ও নিষিদ্ধকরণ ****

গাজীপুর সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৯ জুন হতে ৩ জুলাই পর্যন্ত সব আগ্নেয়াস্ত্র মালিকদের অস্ত্র বহন অথবা অস্ত্রসহ চলাফেরা করার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন জেলা প্রশাসক।

**** নির্বাচনী প্রচারণা নিষেধাজ্ঞা ****

আইনশৃঙ্খলা পরিবেশ বজায় রাখতে ২৪ জুন দিবাগত রাত ১২টা থেকে ২৮ জুন দিবাগত মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায়  নির্বাচনী জনসভা  আহ্বান,  কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান বা মিছিল, শোভাযাত্রা সংগঠিত করতে পারবে না।

**** গুজবরোধে নজরদারি *****

ভোটগ্রহণের দিন বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সমন্বয় সাধন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা, জঙ্গি তৎপরতার গুজব রটানোরোধে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) বলতে যা বুঝায় নির্বাচনে সেটি নিশ্চিত করা হবে।

 গো নিউজ২৪/এমআর

জাতীয় বিভাগের আরো খবর