শিগগিরই রাষ্ট্রপতি-প্রধান বিচারপতির বৈঠক


পাপলু রহমান, নিউজরুম এডিটর প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০১৭, ০৬:২৭ পিএম
শিগগিরই রাষ্ট্রপতি-প্রধান বিচারপতির বৈঠক

ঢাকা: সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন মহলে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও বিতর্ক। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এ ব্যাপারে চলছে টানা-পোড়েন। এ রায় নিয়ে সরব রয়েছে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলগুলোও।

গেল ১৩ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (এস কে সিনহা) বাসভবনে গিয়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ও নৈশ্যভোজে অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরদিন ১৪ আগস্ট তিনি বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

মাঝখানে জাতীয় শোক দিবসের সভাতেও এ প্রসঙ্গ আলোচনায় আসে। পরদিন ১৬ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক এবং অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বঙ্গভবনের একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের অসংগতি এবং প্রধান বিচারপতির অসদাচারণের বিভিন্ন বিষয় রাষ্ট্রপতির কাছে তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বঙ্গভবন ওই বৈঠকের আয়োজন। 

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর ওই বৈঠকের পর সবার দৃষ্টি এখন বঙ্গভবন ঘিরে। রাষ্ট্রপতি কী করবেন, সেটাই দেখার বিষয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বঙ্গভবনের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো জানাচ্ছে, খুব শিগগিরই রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার আনুষ্ঠানিক বৈঠক হতে যাচ্ছে। রাষ্ট্রপতির পক্ষ থেকে বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হবে যেকোনো সময়ে।

অপরদিকে, বঙ্গভবনের প্রস্তুতিও চূড়ান্ত পর্যায়ে। বৈঠকে ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আলোচনা যে হবে তা নিশ্চিত। বঙ্গভবনের দায়িত্বশীল সূত্র বৈঠকের প্রস্তুতির বিষয় স্বীকার করেছে।

সূত্রমতে, দেশের সর্বোচ্চ সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠ রাষ্ট্রপতি যেকোনো সাংবিধানিক পদের ব্যক্তি বা কর্মকর্তাকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, তা ‘অবৈধ’ ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় গত ১ আগস্ট প্রকাশ করেন সুপ্রিম কোর্ট।

রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন।

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলসংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হওয়ার প্রায় এক সপ্তাহ নীবর থাকতে দেখা গেছে সরকার ও ক্ষমতাসীন দলকে। তবে গেল ৭ আগস্ট মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনানুষ্ঠানিক আলোচনায় এই রায় নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়। এরপরই রায় নিয়ে প্রকাশ্যে সমালোচনা করে বক্তব্য দেয়া শুরু করেন সরকারের মন্ত্রীরা।

এর আগে ৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সর্বসম্মত রায়ে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে বাতিল এবং অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এই রায়ের ফলে, ৭২ এর সংবিধানে বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদে থাকার যে বিধান বর্তমান সংসদ প্রতিস্থাপন করেছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। এর স্থলে সামরিক শাসনামলে করা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানকে পুনঃস্থাপিত করা হয়।

ওই রায়ে কিছু পর্যবেক্ষণ এবং বিশ্লেষণ রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় সৃষ্টি করে। আদালত চত্বর থেকে রাজনৈতিক মাঠে উত্তাপ ছড়ায়। প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দল বিএনপি এই রায়কে স্বাগত জানিয়ে ঐতিহাসিক হিসেবে চিহ্নিত করে। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সংসদ সদস্যরা ওই রায় নিয়ে ৯ জুলাই সংসদে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায়।

গোনিউজ২৪/এন

এ সম্পর্কিত আরও সংবাদ


জাতীয় বিভাগের আরো খবর