ধেয়ে আসছে ২০০ বছরের ভয়াবহ বন্যা


পাপলু রহমান, নিউজরুম এডিটর প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০১৭, ০২:৪১ পিএম
ধেয়ে আসছে ২০০ বছরের ভয়াবহ বন্যা

ঢাকা: দু্ই শতাব্দির সব রেকর্ড ভেঙে উজান থেকে বাংলাদেশের দিকে ধেয়ে আসছে ভয়াবহ বন্যা। যে বন্যা ১৯৮৮ সালের ভয়াবহতাকেও ছাপিয়ে যাবে। ইতোমধ্যে তার আলামত দেখা গেছে দেশের উত্তরাঞ্চলে।

বাংলাদেশে ধেয়ে আসা এই ভয়াবহ বন্যার পূর্বাভাস দিয়েছে পূর্বাভাসবিষয়ক দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। বন্যার পূর্বাভাসে বলা হচ্ছে, এবার উজানের ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও তিস্তা অববাহিকায় পানির উচ্চতা ৭৫ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। আগামী ১৯ আগস্টের মধ্যেই ওই পানি বাংলাদেশের নদ-নদীগুলো দিয়ে প্রবেশ করতে পারে।

উজানের ওই পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করলে ভয়াবহ পরিস্থিতি দাঁড়াবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোর রেকর্ড ভেঙে ফেলবে এ বন্যা। সংস্থার বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, বন্যার এই ভয়াবহতা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ১৯৮৮ সালের বন্যাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে।

দিনাজপুর

সূত্রমতে, ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ১৪ জেলায়। এসব জেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান, সড়ক ও রেলযোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা, ফসলের ক্ষেত প্লাবিত হয়েছে। পানিতে ডুবে প্রাণহানির সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

তিস্তা, ধরলা, ব্রহ্মপুত্র নদের চরাঞ্চল ডুবে গেছে। চরাঞ্চল ও বন্যার্তদের সতর্ক করতে মাইকিং করা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় উত্তরাঞ্চলে ইতোমধ্যে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। সেনা সদস্যরা বন্যার্তদের উদ্ধার ও বাঁধ রক্ষার কাজ করছে।

রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

সম্প্রতি বৈশ্বিক বন্যা পরিস্থিতিবিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কের কার্যালয় (ইউএনআরসিও) ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ গবেষণাকেন্দ্র (জেআরসি)। গেল ১০ আগস্ট এই সংস্থা বন্যা সম্পর্কে পূর্বাভাস দিয়েছে। 

পূর্বাভাসে উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ভুটান ও নেপালের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার অঞ্চলগুলোতে গত ১১ আগস্ট থেকে পানি বাড়ছে এবং ১৯ আগস্ট পর্যন্ত এই পানি ভাটির দিকে প্রবাহিত হতে পারে। 

পূর্বাভাসে আরো বলা হয়েছে, গেল ২০০ বছরের বেশি সময়ের ইতিহাসে ব্রহ্মপুত্রের অববাহিকার উজানে বন্যার মাত্রা সবচেয়ে ভয়াবহ হতে পারে।

দ্য ইউরোপিয়ান সেন্টার ফর মিডিয়াম-রেঞ্জ ওয়েদার ফোরকাস্টসের (ইসিএমডব্লিউএফ) পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ১০ দিনের মধ্যে হিমালয়ের দক্ষিণাঞ্চলে ২০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এতে করে ব্রহ্মপুত্রের ভারত ও বাংলাদেশ অংশে পানি বাড়বে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত গণমাধ্যমকে বলেছেন, এবার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের কবলে পড়ে চীন ও ভারতে ইতিমধ্যে ভয়াবহ বন্যা শুরু হয়ে গেছে। ওই দুই দেশের ভেতর দিয়ে আসা ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা নদীর পানি স্মরণাতীত কালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালের চেয়ে বড় ও ভয়াবহ বন্যা হতে পারে। এ জন্য তিনি সরকারি-বেসরকারি সব সংস্থাকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে পরামর্শ দেন।

ত্রাণের জন্য অপেক্ষা

এদিকে, আজ সোমবার (১৪ আগস্ট) রাজধানীর মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে আগাম বন্যার প্রস্তুতি সম্পর্কে জানাতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সেখানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এবং মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

মন্ত্রী আরো বলেন, বন্যা মোকাবেলায় আমরা ঘরে বসে নেই। জেলা প্রশাসকদের বলেছি একটি লোকও যাতে খাবারের কারণে কষ্ট না পায় সেজন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে; তাদের চাহিদামত প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্য ও আর্থিক বরাদ্দ দেয়া হবে।

গোনিউজ/এন

জাতীয় বিভাগের আরো খবর