মরিশাসে দুঃখে আর কষ্টে কাটছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রোজা


দ্বীপ শাহাদাত মরিশাস থেকে প্রকাশিত: জুন ১৯, ২০১৭, ০৫:৫৮ পিএম
মরিশাসে দুঃখে আর কষ্টে কাটছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের রোজা

আফ্রিকার বিচ্ছিন্ন দ্বীপরাষ্ট্র মরিশাস। এটি পূর্ব আফ্রিকার একটি দ্বীপ রাষ্ট্র। এর রাজধানীর নাম পোর্ট লুইস। ছোট্ট এ দেশটির চারপাশ ঘিরে আছে ভারত মহাসাগরের জলরাশি। নির্মল আবহাওয়া, স্বচ্ছ পানি ও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যাবস্থাপনা এবং চমৎকার পরিবেশের কারণে এ দেশের গড়ে উঠেছে অসংখ্য শিল্প কল কারখানা।

মরিশাসে শ্রমবাজার উন্মুক্ত থাকায় প্রতিদিন বাড়ছে বাংলাদেশী নারী ও পুরুষ শ্রমিকের সংখ্যা। এদের বেশির ভাগ গৃহকর্মী, নির্মাণকাজ, টেক্সটাইল, গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত।

দেশটির মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ মুসলমান। সংখ্যায় কম হলেও গোটা মুসলিম জাহান যখন ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য ‍দিয়ে পবিত্র রমজান মাস পালিত হচ্ছে তখন মরিশাসের মুসলিমরাও যথারীতি রোজা পালন করছে।

তবে মরিশাস প্রবাসী বাংলাদেশীদের অভিযোগ রমজান মাসে মুসলিম দেশ গুলোতে কাজের সময় সীমা কিছুটা পরিবর্তন হয়ে থাকে। কিন্তু মরিশাসের রমজান মাসেও পূর্বের নিয়মে কাজ করতে হচ্ছে। ফলে নামাজ রোজা ও ইফতার করতে সমস্যা হয়।

মরিশাসে বেশীর ভাগ কোম্পানীতে বারো ঘন্টা থেকে চৌদ্দ ঘন্টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। ফলে রমজান মাসেও একই নিয়মে চলতে থাকে। বেসিক বেতন কম থাকার কারনে অতিরিক্ত কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে এখানের বাংলাদেশী শ্রমিকদের।

মরিশাসে বাংলাদেশী নির্মাণ কাজের শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা গেলো তাদের দু:খের কথা। তারা বলেন, মরিশাস সময় সকাল ৭ থেকে আমাদের কাজ শুরু হয়। কোন সময় রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। কাজ শেষ করে বাসায় আসতে আরো ১ ঘন্টা সময় লাগে। ফলে গোসল করে খেতে এক ঘন্টা সর্বমোট ১৪ থেকে ১৫ ঘন্টা ডিউটির মধ্যে চলে যায়। আবার ভোর ৪টায় সেহরীর খেতে উঠতে হয়। সেহরী এবং ফজরের নামাজ শেষ করে অল্প সময়ে আর ঘুমানো সম্ভব হয়না। আবার ডিউটির জন্য রেডি হতে হয়।

তারা বলেন, রাতের বেলায় কিছুটা শীত অনুভব হলেও দিনের বেলায় বাহিরে রোদ্রের তাপমাত্রা বেশি থাকার কারনে অনেক ক্লান্ত এবং পানির পিপাসায় কাতর হয়ে যায়, তবুও আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় রোজা রাখতে হয়। এভাবে চলছে আমাদের রোজা। কাজের জন্য মালিক পক্ষের চাপ থাকে বেশি, তাই ফোরম্যানও ছাড় দিচ্ছে না। 

নামাজ এবং ইফতারের ব্যাপারে তারা বলেন, রোজার জন্য ডিউটির কোন পরিবর্ত না থাকায় কিছুটা কষ্টে দিন পার করছি।

মরিশাসে বেশিরভাগ কোম্পানিতে বেসিক বেতন কম থাকার কারনে অতিরিক্ত কাজ করতে হয়। না করলে পরিবার পরিজন কষ্ট করবে। তাই সকল দু:খ কষ্ট ভুলে প্রিয়জনের মুখে হাঁসি ফোটানোর লক্ষে আমরা কাজ করি। কর্মকরাটাও একটা এবাদত তাই কাজের চাপে বিদেশে এসে নামাজ রোজা সঠিক সময়ে করতে পারি না সেটা আল্লাহ অবশ্যয় দেখেন। এভাবে কথাগুলো বলেন নির্মান শ্রমিক জোবায়ের হোসেন।

জোবায়ের আরো বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের তদারকি থাকলে অবশ্যই মালিক পক্ষ কিছুটা সুযোগ সুবিধা দিতো। কিন্তু দূতাবাসের তদারকি এখানে দেখা যায় না। তাই মালিকরা তাদের ইচ্ছে মত কাজ করিয়ে নিচ্ছে।

ইসলামের মূল পাঁচ স্তম্ভ বা ভিত্তির একটি হল রমজান মাসের রোজা। রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে প্রতি বছরের মত এবারও এসে শেষপ্রান্তে মুসলমানদের প্রিয় মাস মাহে রমজান।

মহান সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভের অন্যতম মাধ্যম এই রমজানের রোজা। তাই সকল মুমিন, মুসলমান এই মাসটির অপেক্ষায় থাকে। এবছর মরিশাসে রোজার সময় কাল ১২ ঘন্টা ২০ মি: পার করছে এখানকার মুসলমানদের।


গো নিউজ২৪/এএইচ

জাতীয় বিভাগের আরো খবর