সাগর উত্তাল, কক্সবাজারে সাইরেন বাজিয়ে সরানো হচ্ছে লোকজনকে


স্টাফ রিপোর্টার প্রকাশিত: মে ২৯, ২০১৭, ০৯:২১ পিএম
সাগর উত্তাল, কক্সবাজারে সাইরেন বাজিয়ে সরানো হচ্ছে লোকজনকে

কক্সবাজার উপকূলের লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। দুপুর থেকে সাইক্লোন শেল্টারে চলে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হলেও তেমন সাড়া মিলেনি। সন্ধ্যা ৬টার পর ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত প্রচারের পর সেচ্ছাসেবকেরা মাইকিংয়ের সাথে আসন্ন বিপদের সাইরেন বাজিয়ে লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় ‘মোরা’র প্রভাবে সোমবার বিকেল থেকে কক্সবাজারে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। সন্ধ্যার পর থেকে দমকা হাওয়ার সাথে বৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে কক্সবাজার উপকূলে সাগর উত্তাল হয়ে উঠেছে। এ কারণে আজ সোমবার জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ৩ ফুট উচুঁতে উপকূলে উপচে পড়েছে। এতে তলিয়ে গেছে নিম্নাঞ্চল।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় পাঁচ কিলোমিটার ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে ২০টির বেশি গ্রাম। এসব গ্রামের কয়েক শ' ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। সন্ধ্যার দিকে ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত ঘোষণার পর নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে এলাকায় ব্যাপক মাইকিং চলছে। কিন্তু এতে আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। তবে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে শহরতলীর সমিতিপাড়া কুতুবদিয়া পাড়া থেকে কিছু কিছু লোক আশ্রয় কেন্দ্র ছুটে যাচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র মতে জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া,টেকনাফ ও কক্সবাজার সদর উপজেলার পাউবোর ৫৯৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে আড়াই কিলোমিটার, মহেশখালীর ধলঘাটা ইউনিয়নে দেড় কিলোমিটার, মাতারবাড়ি ইউনিয়নে ১০০ মিটার ও কক্সবাজার সদর উপজেলার পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলীতে ৮০ মিটারসহ পাঁচ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণভাবে ভেঙে গেছে।

এ ছাড়া জেলার পেকুয়া, কুতুবদিয়া উপজেলায় আরও সাত কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। জলোচ্ছাসে এসব বেড়িবাঁধ তলিয়ে গিয়ে ব্যাপক এলাকা পানির নিচে গিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাউবো কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবিবুর রহমান বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোরার প্রভাবে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে পাঁচ-ছয় ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পেয়ে উপকূলে আঘাত হানছে। বিশেষ করে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি ঢুকে কয়েকটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।


টেকনাফ উপজেলার পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শফিক মিয়া বলেন, মোরার প্রভাবে শাহপরীর দ্বীপের পশ্চিম অংশের ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানিতে সয়লাব হয়েছে আটটির বেশি গ্রাম। এখানে কোনো প্রতিরক্ষা বেড়িবাঁধ নেই। এ এলাকার ভাঙা বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য সরকার গত বছর ১০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও এ পর্যন্ত কাজ শুরু হয়নি। অন্যদিকে জোয়ারের সাথে প্রচন্ড ঢেউয়ের ধাক্কায় উপজেলার খুরেরমুখ, সাবরাং, আছারবনিয়াপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় আরও কয়েক কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুল হাসান বলেন,জোয়ারের পানিতে ধলঘাটা ইউনিয়নের অন্তত শতাধিক ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। ইউনিয়নের প্রায় তিন কিলোমিটার ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে জোয়ার-ভাটা চলছে।জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধ নিয়ে উপকূলের লাখো মানুষ আতঙ্কে আছেন। বিশেষ করে ঘূর্ণিঝড় মোরা এই আতঙ্ক আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত হানার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রস্থলে সরিয়ে আনা হচ্ছে।

জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রমতে, ই মুহূর্তে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে জেলায় ২৪টি উপকূলীয় ইউনিয়নকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, সেন্ট মার্টিন, বাহারছড়া, কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলন্ডী,পোকখালী ও খুরুশকুল,কক্সবাজার পৌরসভার সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা, কুতুবজোম,মাতারবাড়ি,কুতুবদিয়া উপজেলার আলীআকবরডেইল, উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, পেকুয়া উপজেলার মগনামা, রাজাখালী ও উজানটিয়া। এদিকে কক্সবাজারের ৮টি উপজেলার সাধারণ মানুষের কাছে দ্রুত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জামসহ মেডিকেল টিম গঠনসহ সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সব চিকিৎসক ও সরকারি কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল করেছে প্রশাসন। গঠন করা হয়েছে ৮৮টি মেডিকেল টিম। খোলা হয়েছে উপজেলা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ।

গো নিউজ ২৪/ এস কে 

জাতীয় বিভাগের আরো খবর