পদ্মার চরে হবে অলিম্পিক ভিলেজ!


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০১৬, ১০:৪১ এএম
পদ্মার চরে হবে অলিম্পিক ভিলেজ!

পদ্মা সেতু ঘিরে নানা ক্ষেত্রে উন্নয়নের স্বপ্ন জেগে উঠছে পদ্মার বিভিন্ন চরাঞ্চলে। আধুনিক জীবনের সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত সেখানকার নিম্ন আয়ের মানুষের চোখে এখন স্বপ্নের হাতছানি। প্রমত্তা পদ্মা নদী বেষ্টিত বিচ্ছিন্ন এক জনপদ মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার চরজানাজাত ইউনিয়নের মানুষও স্বপ্নের জাল বুনছেন।

এই স্বপ্ন দেখার উপলক্ষ পদ্মা সেতুর পাশাপাশি অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণের সম্ভাবনা। ইতিমধ্যে অবশ্য স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের কর্মযজ্ঞ চলছে। এই সেতুকে ঘিরে এলাকায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে এমন আশ্বাস পাওয়া গেছে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকেও। পদ্মা সেতু নির্মাণকে আশীর্বাদ হিসেবে হৃদয়ে লালন করছে এ এলাকার জনগণ। পদ্মা সেতুকে ঘিরেই এ অঞ্চলের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

গত কয়েক যুগ ধরে নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে চর জানাজাত ইউনিয়নটি। যোগাযোগ ব্যবস্থা, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ নানা অপ্রতুলতার কারণে জীবনযাত্রার মান বাড়ছে না পদ্মার এই চরে। এ এলাকার ৮০ ভাগ মানুষই ভূমিহীন। গ্রামগুলো ২৫ থেকে ৪০টি বাড়ি নিয়ে যেন এক একটি ছোট দ্বীপ। আট বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এ চরের ৬৫টি গ্রামে প্রায় ৩৬ হাজার মানুষের বাস। কৃষিকাজ, গবাদি পশুপালন, মাছ শিকার ও কাওড়াকান্দি, শিমুলিয়া ঘাট এলাকায় হকারি করে জীবন ধারণ করা অধিকাংশ মানুষের এই চরাঞ্চলে বইছে উন্নয়নের আভাস।

গত মাসের (নভেম্বর) ১২ তারিখে অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য শিবচরের চর জানাজাত ইউনিয়নের চরাঞ্চল এলাকা পরিদর্শনে আসেন সেনাপ্রধান আবু বেলাল মাহমুদ শফিকুল হক এবং বিওএর মহাসচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।

বিশাল চরাচঞ্চলের জনবসতিহীন অংশকে ঘিরে রয়েছে নানা পরিকল্পনা। কর্তাব্যক্তিদের পদচারণে উন্নয়নের দৃশ্য কল্পনায় দেখে আনন্দজলে চোখ চিকচিক করছে এ এলাকার বয়স্কদের!

অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণের সম্ভাবতা যাচাইয়ের ব্যাপারে তখন মাদারীপুর জেলা প্রশাসক মো. কামাল উদ্দিন বিশ্বাস সেনাবাহিনী-প্রধানের বরাত দিয়ে বলেন, ‘তারা এখানে অলিম্পিক ভিলেজ ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভ্যবতা যাচাই করার জন্যই মূলত এসেছেন। চরের জায়গা দেখে তারা সন্তোষ প্রকাশও করেছেন। পদ্মার ভাঙন ও ভৌগোলিক কারণগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে এখানে অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণ করা যায় কি না।’

পরিদর্শনের সময় বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব, ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
পদ্মা সেতুর সঙ্গে সঙ্গে পদ্মাপারের এ অঞ্চলজুড়ে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে এমনটা এখন স্বাভাবিক ধারণা সাধারণ মানুষের মাঝে।

চরাঞ্চলের এসব মানুষের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতু হয়ে গেলেই পদ্মার পারসহ এ অঞ্চলের উন্নয়নে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। গত তিন বছরের বিভিন্ন সময়ে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ নানাবিধ উন্নয়নকাজে বিশাল এই চরাঞ্চল কাজে লাগানো যায় কি না তা দেখতে মন্ত্রীসহ সরকারের কর্তাব্যক্তিরা এ এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

সাধারণ মানুষ জানান, এ থেকেই বোঝা যায় অবহেলিত এ চর এলাকাকে ঘিরে উন্নয়নের জন্য সরকারের নানাবিধ পরিকল্পনা রয়েছে।
চরে বসবাসরত ষাটোর্র্ধ্ব আলীম মিয়া জানান, মূল ভূখণ্ডে যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা। কৃষিকাজ, পশুপালন, মাছ শিকার এখানের মানুষের অন্যতম পেশা। তবে তাদের আশা পদ্মা সেতুকে ঘিরে এই এলাকায় নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলে কর্মসংস্থান হবে এখানে। স্কুল-কলেজ গড়ে উঠবে। তখন চর আর চর থাকবে না। এক আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে উঠবে এ এলাকা। 

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমরান আহমেদ জানান, পদ্মা সেতু সামনে রেখে এ এলাকায় অভূতপূর্ব উন্নয়ন হবে ধাপে ধাপে। পদ্মার চর এলাকায় আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর এবং অলিম্পিক ভিলেজ নির্মাণ করা যায় কি না তা নিয়ে ভাবছে সরকার। সে লক্ষ্যেই ইতোমধ্যে সেনাপ্রধানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ এলাকা পরিদর্শন করেছেন। এ এলাকার ভৌগোলিক অবস্থা বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেয়া হবে।

 

গো নিউজ২৪/জা আ 

জাতীয় বিভাগের আরো খবর