চারুকলায় চলছে বাংলা নববর্ষের প্রস্তুতি


প্রকাশিত: এপ্রিল ৬, ২০১৬, ০৮:২০ এএম
চারুকলায় চলছে বাংলা নববর্ষের প্রস্তুতি

আর মাত্র কয়দিন বাকি। প্রাণের উৎসব বাংলা নববর্ষ কড়া নাড়ছে দুয়ারে। নানা আয়োজনে বাঙালির শত বছরের ঐতিহ্য বরণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে চলছে নানা প্রস্তুতি। ‘অন্তর মম বিকশিত কর অন্তর তর হে’ এ স্লোগানকে প্রতিপাদ্য করে জোরেসোরে কাজ শুরু করেছে চারুকলা বিভাগ।

বাংলা নববর্ষের অন্যতম আকর্ষণ মঙ্গল শোভাযাত্রা ১৯৯০ সাল থেকে প্রতি বছরই এ শোভাযাত্রার আয়োজন করে আসছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ। অতীতের মতো এবারো তার প্রস্তুতি চলছে।



সরেজমিনে মঙ্গলবার বিকেলে চারুকলা করিডোরে গিয়ে দেখা যায় মঙ্গলশোভা যাত্রার প্রস্তুতি পর্বের মহাযজ্ঞ চলছে। প্রায় শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী শোভা যাত্রার উপকরণ তৈরি করতে একযোগে কাজ করছেন। শিক্ষার্থীদের নিরলস শ্রম এবং মেধা ও মননের নিখুঁত সংমিশ্রণে তৈরি হচ্ছে নানা শিল্পকর্ম ও চিত্রকর্ম।

ভিন্ন ভিন্ন টেবিলের উপর চলছে পটচিত্র, জলরংয়ের চিত্রের কাজ। এ ছাড়া সারি সারি রাখা হয়েছে মাটির সরা। সেগুলোর ওপর রঙের প্রলেপ দিয়ে নানা অবয়ব ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত চারু শিক্ষার্থীরা। আর সে সব সরাচিত্রে উদ্ভাসিত হচ্ছে পল্লীবধূর মুখচ্ছবি, সাপুড়ে, কাকতাড়ুয়া, হরেক রকমের পাখি, হাতি, লক্ষ্মীপেঁচা, বিড়াল, বাঘসহ বৈচিত্র্যময় নানা লোকজ অনুষঙ্গ।



চারুকলা ইনস্টিটিউটের মাস্টার্স শেষ বর্ষের ছাত্র সাইফুল ইসলাম জনি জলরংয়ের পেইন্ট করছিলেন। তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে রাত ১০/১১ টা পর্যন্ত গ্রুপে গ্রুপে এসে বিভিন্ন কাজ করছেন তারা।

তিনি জানান, সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচশ ছাত্র-ছাত্রী নিয়মিত পালা করে কাজ করছেন। এর মধ্যে প্রায় দুইশ শিক্ষার্থী জোরালোভাবে অংশগ্রহণ করছেন। মাটির পুতুল, বাঘ, মাছ, কাঠের তৈরি গহনা, সুতোর তৈরি পুতুল ও কারুকার্যসহ নানাবিধ ভাস্কর্য তৈরি করছেন তারা। এ সব বিক্রি করে উৎসবের টাকার একটি অংশের যোগান দেন তারা জানান সাইফুল ইসলাম।

একই বর্ষের ছাত্র সুদীপ্ত সিকদার বলেন, তাদের কাছে যে সব জল রংয়ের পেইন্ট আছে তার মধ্যে পাঁচশ থেকে শুরু করে দুই লাখ টাকা মুল্যেরও আছে।



ভাস্কর্য বিভাগে কাজ করছিলেন ২০/২৫ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে চন্দ্র নাথ পাল জানান, মঙ্গলশোভাযাত্রা জন্য তারা বিভিন্ন ধরনের ভাস্কর্য তৈরি করছেন। এখন পর্যন্ত আটটি বড় ভাস্কর্যের কাজে হাত দিয়েছেন। প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে হাতি, ঘোড়া, টেপা পুতুল, নৌকা, মাছ, হরিণ, পাখি, মা ও শিশু বিষয়ক ভাস্কর্য রয়েছে।

দিনাজপুরের পটচিত্রশিল্পী পটুয়া নাজির হোসেন জানান, তিনি মূলত চারুকলার ছাত্র নয়। পড়াশোনা করেছেন দিনাজপুরে। কিন্তু সংস্কৃতির টানে ঐহিত্য লালনের নেশায় তিনি দীর্ঘ ১২ বছর পটচিত্র আঁকেন। এই ১২ বছর যাবৎই তিনি প্রতি বছর চারুকলায় স্বেচ্ছাশ্রমে পটচিত্র ও সরাচিত্র করেন।

এক প্রশ্নের উত্তরে জানান, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার জন্য তিনি এই কয়দিনে প্রায় ২০টি সরাচিত্র ও ১৫টি পটচিত্র এঁকেছেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ৬০ থেকে ৭০ টি চিত্র আঁকার চেষ্টা করবেন বলেও জানান।

পেপার ম্যাশ বিভাগে ব্যস্ত তুহিন দাশ জানান, রাজা-রানীসহ বিভিন্ন আকারের ৫০-৬০টি পেপার ম্যাশ তৈরির কাজ চলছে। এর মধ্যে রাজা-রানীর পেপার ম্যাশ জোড়ার মূল্য ধরা হয়েছে ২০ হাজার টাকা। অন্যগুলো ৪/৫ হাজার টাকা এবং ছোটগুলো পাঁচশ টাকায় বিক্রি হবে।



চারুকলা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, গত ১৭ মার্চ থেকে বর্ষবরণ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। তবে ২৬ মার্চ থেকে জোরেসোরে চলছে।

প্রস্তুতিকর্মের তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক শিশির ভট্টাচার্য বলেন, ‘জোরেসোরে প্রস্তুতি কাজ এগিয়ে চলছে। চারুকলার ছেলে-মেয়েরা বেশ মনোযোগ দিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। এবারের শোভাযাত্রা যথাসময়ে শুরু হবে বলে আশা করছি।’

 

গো নিউজ২৪/জা আ

সাহিত্য ও সংষ্কৃতি বিভাগের আরো খবর