‘পুত্র সন্তান কামনা’ দিন দিন কমছে


নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: জানুয়ারি ৩১, ২০২১, ০৪:৪০ পিএম
‘পুত্র সন্তান কামনা’ দিন দিন কমছে

কেন্ট ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, বাংলাদেশে সন্তান জন্মদানের ক্ষেত্রে ‘পুত্র সন্তান কামনা’ দিন দিন কমছে। সম্প্রতি সন্তান ধারণে সক্ষম প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের ওপর পরিচালিত গবেষণায় এ তথ্য জানায় তারা।

নারী আন্দোলনে যুক্ত অধিকারকর্মীরা বলছেন, কন্যাসন্তানের ক্ষেত্রে সম্পত্তি অন্যের হাতে চলে যাবে, এমন শঙ্কায় এখনও পুত্রসন্তানই কাঙ্ক্ষিত। গবেষণায় বা জরিপে নমুনা হিসেবে কারা কথা বলছেন সেটা বিবেচনায় নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন অনেকে। কেউ বলছেন, দুই পুত্রসন্তানের পর কন্যা হোক না হোক, দুই কন্যাসন্তানের অভিভাবকরা তৃতীয়টি ছেলে হোক সেটিই চান এখনও।

‘পুত্রসন্তানের প্রত্যাশা কি বাংলাদেশ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে?’ শীর্ষক কেন্ট ইউনিভার্সিটির গবেষণায় প্রাপ্তবয়স্ক নারীদের সন্তান কামনার বিষয়টি মূল্যায়ন করা হয়। গবেষণায় ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী নারীদের নমুনা হিসেবে নির্বাচন করা হয়।

গবেষণায় জড়িত ছিলেন ইউনিভার্সিটি অব মালয়-এর অধ্যাপক এম নিয়াজ আসাদুল্লাহ। গবেষণার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়া ও চীনে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম। নব্বইয়ের দশকে বিষয়টি প্রথম নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের গবেষণায় উঠে আসে। কিন্তু পেছনের দুই দশকে শিশু জন্মহার (ফার্টিলিটি রেট) দ্রুত কমায় বাংলাদেশের জনসংখ্যায় নারী-পুরুষের ভারসাম্য আসে। প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় এটি একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন এবং বাংলাদেশের সামাজিক উন্নয়নের প্রমাণপত্রও। আমাদের গবেষণায় মূলত এ বিষয়েই গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হয়েছে।’

গবেষণা প্রক্রিয়া সম্পর্কে তিনি বলেন, “প্রজননক্ষমতা আছে- দেশব্যাপী ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী এমন কয়েক হাজার নারীর ওপর জরিপ করি আমরা। যুক্তরাজ্যের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. জাকি ওয়াহাজ, আমি ও ঢাকাভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘ডাটা’ এ যৌথ জরিপ সম্পন্ন করি। অংশগ্রহণকারী নারীরা তাদের বিয়ে, প্রজনন, গর্ভধারণ, কাঙ্ক্ষিত শিশুসন্তানের সংখ্যা, কাঙ্ক্ষিত শিশুর লিঙ্গ, বর্তমান শিশুসন্তানের সংখ্যা ও লিঙ্গসহ বিভিন্ন বিষয়ে তথ্য দেন।”

অধ্যাপক আসাদুল্লাহ আরও বলেন, “জরিপের তথ্য-উপাত্ত ব্যবহার করে আমরা দেখিয়েছি, বাংলাদেশের নারীরা এখন কেবল দুটি সন্তানই চান এমন নয়, তাদের এই চাওয়ার মধ্যে লিঙ্গসমতাও এসেছে। যার একটি পুত্র আছে, সেই নারী আরও একটি পুত্রসন্তান হোক সেটি চান না। যাদের এখনও সন্তান হয়নি, তাদের মধ্যে ছেলে ও মেয়েসন্তানের প্রতি সমান আকাঙ্ক্ষা দেখা গেছে। এরপরও বলা যায়, এখন পর্যন্ত পুরোপুরি লিঙ্গসমতা আসেনি। গবেষণার বিস্তারিত ফলাফল আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘বিশ উন্নয়ন’-এ প্রকাশ হয়েছে।”

পুরোপুরি না হলেও শহুরে অভিভাবকদের মধ্যে লিঙ্গ বাছাইয়ের প্রবণতা কিছুটা কম দেখা যাচ্ছে বলে মনে করছেন নারী অধিকার নেত্রী ফৌজিয়া খন্দকার। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গবেষণাটা এখনও দেখিনি। তবে অভিজ্ঞতার আলোকে মনে হয় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে। শিক্ষিত যারা, তাদের অনেকের মধ্যেই কন্যাসন্তানের চাহিদা বেড়েছে বলে মনে হয়। শহরে যারা আছেন তাদের ভেতরও কন্যাসন্তানের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। কিন্তু গ্রামে, বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারে এখনও ছেলের চাহিদাই বেশি। ছেলেরা এখনও বাবা-মায়ের দায়িত্ব মেয়েদের চেয়ে বেশি বা পুরোটাই পালন করে বলে এসব পরিবারে মনে করা হয়। মেয়েরাও বাবা-মায়ের দায়িত্ব পালন করতে পারে, যতদিন এই বিশ্বাস না জন্মাবে, ততদিন পরিবর্তন আশা করা যায় না।’

তবে এই গবেষণা আমাদের সমাজের প্রকৃত প্রবণতার প্রতিফলন ঘটায় না বলে মনে করেন উই ক্যান-এর নির্বাহী সমন্বয়ক জিনাত আরা হক। তিনি বলেন, ‘গবেষণাটি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এখনও বাস্তবসম্মত নয়। আমাদের অভিজ্ঞতা বলছে, যখন একটি ছেলেসন্তান হয় তখন দম্পতি চায় তাদের আরেকটি মেয়ে হোক। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু দুটো ছেলে হলে, তখন ভাবে মেয়ে না হলেও চলে। দুটো মেয়ে হলে কিন্তু ছেলে চাই-ই। কেননা এক তৃতীয়াংশের বেশি সম্পত্তি তো মেয়ে পাবে না। ছেলেকে এখনও বংশধারার বাহন হিসেবে উল্লেখ করা হয়। মেয়ে চলে যাবে শ্বশুরবাড়ি, ভিটেমাটি কে দেখবে? মেয়ে হলে আশেপাশের মানুষও মনে করে সম্পত্তি সহজে দখল করা যাবে। ফলে যে গবেষণাটি তারা করেছেন, বাস্তব পরিস্থিতি এত সহজ সমীকরণ দিয়ে বোঝা যাবে না।’

লাইফস্টাইল বিভাগের আরো খবর