ঐতিহ্যবাহী ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি বন্ধের পথে!


নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৭, ২০২১, ১০:২৩ এএম
ঐতিহ্যবাহী ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি বন্ধের পথে!

মহামারি করোনার সঙ্গে যুদ্ধ করেই আস্তে আস্তে স্বাভাবিকের দিকে ফিরে আসছে জীবনের গতি। তবে ফকরুদ্দিন বিরিয়ানির জন্য নয়। উৎযাপন ও উৎসবের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবেভাবে জড়িত এ প্রতিষ্ঠানটির গতি থেমে যাচ্ছে মহামারির আঘাতে।  

মহামারির প্রবল আঘাত প্রতিষ্ঠানটির জন্য এতটাই নৃশংস হয়ে পড়েছে যে তাদের টিকে থাকাই এখন প্রশ্নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। ৫৪ বছরের পুরোনো এই সংস্থাটি, যাদের মূলধন বিবাহ এবং অন্যান্য বড় বড় সামাজিক জমায়েতের খাবার সরবরাহ থেকে আসে, করোনাভাইরাসের ফলে তাদের নয়টি শাখার মধ্যে চারটি শাখাই বন্ধ হয়ে গেছে।  

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের পর থেকেই অর্ডার হ্রাস পেতে থাকে, যা দুই সপ্তাহ পরে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। কেননা ২৬ মার্চ থেকে দেশব্যাপী সামাজিক দূরত্ব মানতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।  

যদিও ৩০ মে সাধারণ ছুটি প্রত্যাহার করা হয়, তারপরেও এক সময়ে দিনে ১০ হাজার জনের খাবার প্রস্তুতকারক ফখরুদ্দিন বিরিয়ানি ডিসেম্বরের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।  

“এত খারাপ দিন কোনো দিন আসে নি,’’ বলছিলেন ১৯৭০ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে থাকা প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার আবদুর রাজ্জাক।

তিনি আরও বলেন, "সাধারণত ডিসেম্বরকে বিয়ের মৌসুম ধরা হয়। তাই ডিসেম্বরে অর্ডার পূরণ করতে হিমসিম খেতে হয়। কিন্তু এ বছর নয়।" 

যদিও মহামারীর মধ্যেও বিয়ের অনুষ্ঠান হচ্ছে, তবে যে পরিমাণ অর্ডার আসছে তাতে ব্যয়ের হিসাব মিটাতেই কষ্ট হচ্ছে। ডিসেম্বর মাসে প্রতিষ্ঠানটিকে তাদের ব্যয় মেটাতে অতিরিক্ত ৭ লাখ টাকা খরচ করছে। এ বাদেও আছে রান্নার ৭৫জন কর্মীসহ সংশ্লিষ্টদের বেতন।  

এ বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল খালেক বলেন, "আজকালকার অনুষ্ঠানে ৮০-১০০ জনের জন্য খাবারের অর্ডার পাচ্ছি। আগে প্রতিটি অনুষ্ঠানের জন্য আমাদের ৫০০-৭০০ কিংবা আরও বেশি খাবার সরবরাহ করা লাগতো। বর্তমানে সপ্তাহে একটি বা দু'টি অর্ডার পেলেও খুব সীমিত পরিমাণে অর্ডারগুলো আসছে যেখানে মহামারীর পূর্বে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে দিনে তিনটি অর্ডার আসত।"  

প্রতিষ্ঠানটি তাদের খাবারের মূল্যও কমিয়ে এনেছে। জনপ্রতি বিরিয়ানির মূল্য ৬৫০ টাকা থেকে কমিয়ে ৫৮০-৬০০ টাকা নির্ধারণ করেছে। এমনকি বড় অর্ডারের ক্ষেত্রে মুরগির রোস্ট এবং খাসির রেজালাও ফ্রি দেবার অফার দিয়েছে।  

তবে এমন অফারও তাদের কাজে লাগতে ব্যর্থ হচ্ছে করোনাভাইরাস আতঙ্কে। ফলে সামাজিক সমাবেশগুলোও যতটা সম্ভব সামান্যই রাখা হচ্ছে।  

“পরিস্থিতি খুবই খারাপ। অর্থোপার্জন ভুলে আমরা সংস্থাটি চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য মূলধনে হাত দিয়েছি," বলছিলেন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান মালিক ফখরুদ্দিন।  

তিনি বলছিলেন কীভাবে তার বাবা হাজী মোহাম্মদ রফিক ও তার ভাই তার দাদা বাবুর্চি ফখরুদ্দিন মুন্সির রেখে যাওয়া ক্যাটারিংয়ের ব্যবসায়টিকে রন্ধন সাম্রাজ্যে পরিণত করেছিলেন।  

“আমি জানি না এই মাস এবং পরবর্তী মাসে আমাদের কতটা অতিরিক্ত খরচ যুক্ত করতে হবে। আমরা জানি না যে আমরা কীভাবে এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসব," বলছিলেন খালেক যিনি তিন ভাইয়ের সঙ্গে এখন তাদের বাবা এবং দাদার পিছনে ফেলে আসা এ প্রতিষ্ঠানটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।  

খালেক মনে করেন এই বছর যদি জীবন স্বাভাবিকভাবে না ফিরে আসে তাহলে তাদের পুরোপুরি ব্যবসা বন্ধ করতে হবে। 

"হয়তো বাকি পাঁচটি শাখাও বন্ধ করতে হবে। ইতোমধ্যে ৪৫জন কর্মীকে বিদায় দিতে হয়েছে। এখন আর লাভ-ক্ষতির পরিমাপ না আমাদের বেঁচে থাকা প্রশ্নবিদ্ধ।"  

খালেক সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, "ক্যাটারিং সেক্টরই সম্ভবত মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ। হাজার হাজার মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। সরকার যদি অন্যান্য খাতগুলোর মতো আমাদের জন্যও তহবিলের ব্যবস্থা করেন তবেই আমরা বাঁচতে পারি।"

লাইফস্টাইল বিভাগের আরো খবর