১০ হাজার পৃষ্ঠার রায় পড়তে সময় লাগবে কয়েক দিন


নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশিত: নভেম্বর ২৬, ২০১৭, ০৪:৫৩ পিএম
১০ হাজার পৃষ্ঠার রায় পড়তে সময় লাগবে কয়েক দিন

পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলার ডেথ রেফারেন্স ও হাইকোর্টে আপিলের রায় আজ সকাল থেকেই পড়ছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. শওকত হোসেনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ এ রায় পড়া শুরু করলেও আজ আর পড়ে শেষ করতে পারেননি।  আজকের মতো রায় পড়া মুলতবি ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। 

আগামীকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি বহাল থাকবে। এদিকে ১০ হাজার পৃষ্ঠার এ রায় পড়তে কয়েক দিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ের সার সংক্ষেপ পড়ার সময় আদালত একথা জানান।

আদালত বলেন, ‘রায়ে প্রায় এক হাজার পৃষ্ঠার বেশি অবজারভেশন (পর্যবেক্ষণ) দেবো। রায়টি সবমিলিয়ে ১০ হাজার পৃষ্ঠার বেশি। রায় পুরো পড়বো না। তবে পুরো পর্যবেক্ষণটি আমরা পড়ে শুনাবো। পূর্ণ পর্যবেক্ষণ শেষে আমরা সামারিলি জাজমেন্ট (সংক্ষিপ্ত রায়) দেবো। সেখানে রায়ের ফাউন্ডেশন (মূল ভিত্তি) অংশেকে কোন কারণে কী সাজা পেয়েছেন তা আমরা উল্লেখ করবো। এ কারণে কয়েকদিন সময় লাগতে পারে।’

এর আগে মামলার পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, এ ঘটনা ছিল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব ও স্থিতিশীলতা নষ্টের ষড়যন্ত্র। এটাকে মাস কিলিং হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন আদালত।  পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সংঘটিত এ ধরণের হত্যার ঘটনা প্রসঙ্গ টেনে তিনি আরো বলেন, একসঙ্গে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তার হত্যার ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যায় না।

বিডিআর বিদ্রোহের মূল লক্ষ্য ছিল সেনা কর্মকর্তাদের জিম্মি করে দাবি আদায় করা। ভবিষ্যতে সেনা কর্মকর্তাদের বিডিআরের প্রেষণে কাজ করতে নিরুৎসাহিত করা।

 আবু জাফর সিদ্দিকী আরো বলেন, দেশের আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিডিআর জওয়ানরা এ নারকীয় হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে। এ কলঙ্ক চিহ্ন তাদের বহুদিন তাদের বয়ে বেড়াতে হবে। মাত্র ২০ ঘন্টার বিদ্রোহে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যার ঘটনা ছিল বর্বরচিত নজিরবিহীন। 

প্রথমে রায়ের কিছু অংশ পড়ে শোনান বিচারপতি মো.শওকত হোসেন। এর আগে গত ১৩ই এপ্রিল এ মামলার বিচারিক কার্যক্রম শেষে যেকোনো দিন রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট। গত ৯ই নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য দিন ধার্য করা হয়।

এর আগে ২০১৫ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় বিচারিক আদালতে মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানির জন্য বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করা হয়।

উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬শে ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআরের সদর দপ্তরে পিলখানা ট্র্যাজেডিতে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। ওই বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি লালবাগ থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। পরে মামলা দুটি নিউমার্কেট থানায় স্থানান্তরিত হয়।

ওই রায়ে বিডিআরের সাবেক ডিএডি তৌহিদসহ ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। এ ছাড়া বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু (প্রয়াত) ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীসহ ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস দেয়া হয় ২৭৭ জনকে।

রায়ের পর ডেথ রেফারেন্স তথা মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের অনুমতি চেয়ে আবেদন হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে দণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা তাদের সাজা বাতিল চেয়ে বিভিন্ন সময়ে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিল শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ ব্যবস্থায় সর্বমোট ৩৭ হাজার পৃষ্ঠার পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এ জন্য মোট ১২ লাখ ৯৫ হাজার পৃষ্ঠার ৩৫ কপি ও অতিরিক্ত দুই কপি পেপারবুক প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যে ৬৯ জনকে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করেন। গুরুত্বপূর্ণ এ মামলার শুনানির জন্য সুপ্রিম কোর্ট বিশেষ উদ্যোগ নেন।

গো নিউজ২৪/এবি

আইন-আদালত বিভাগের আরো খবর