ফেসবুকে স্ট্যাটাস: সেই টিটুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি


স্টাফ করেসপন্ডেন্ট প্রকাশিত: নভেম্বর ২২, ২০১৭, ০৮:৪০ এএম
ফেসবুকে স্ট্যাটাস: সেই টিটুর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

রংপুর: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ‘ধর্ম অবমাননাকর’ ছবিসহ স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগে পুলিশী রিমান্ডে থাকা টিটু রায় ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকেল সাড়ে চারটায় রংপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আরিফুল ইসলামের আদালতে জবানবন্দি গ্রহণ শেষে তাকে কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী ও অতিরিক্ত গোপনীয়তার মধ্যে আদালতে টিটু রায়কে হাজির করা হয়।

এদিকে টিটুকে আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য ১০ জন আইনজীবী সকাল থেকে আদালত চত্ত্বরে উপস্থিত থাকলেও পুলিশ অতিরিক্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করায় তারা টিটু রায়কে আইনি সহায়তা দিতে পারেননি। টিটু রায়ের আদালতে হাজির ও জবানবন্দির ব্যাপারে সাংবাদিক ও আইনজীবীদের কিছু জানতে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে। ক্ষুব্ধ আইনজীবীরা বুধবার রংপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে ওকালতনামায় টিটু রায়ের স্বাক্ষর নেবেন বলে জানান।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই বাবুল ইসলাম জানান, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের মামলায় টিটু রায়কে দু'দফায় আট দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এর পর তাকে মঙ্গলবার রংপুরের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এ হাজির করা হয়। আদালত তাকে জেলহাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

তদন্ত কর্মকর্তা নিশ্চিত করেন, টিটু রায় আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে তিনি কোন ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দি দিয়েছেন, কী বলেছেন এ সব বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি এসআই বাবুল।

এদিকে মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে আদালতে হাজির করা হয় টিটু রায়কে। অত্যন্ত গোপনে সাদা রংয়ের একটি মাইক্রোবাসে করে টিটু রায়কে নিয়ে আসা হয়। তাকে আদালত ভবনের চার তলায় একটি কক্ষে রাখা হয়। বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে টিটু রায়কে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করে প্রিজন ভ্যানে করে নিয়ে যায় পুলিশ।

টিটু রায়ের আইনজীবী নরেশ চন্দ্র সরকার অভিযোগ করেছেন, টিটু রায়কে আদালতে হাজির করার ব্যাপারে পুলিশ অতিরিক্ত গোপনীয়তা অবলম্বন করায় তারা তার সঙ্গে দেখাই করতে পারেননি। ওকালতনামায় সই করাতে না পারায় আদালতে তার পক্ষে কোনও আইনি কার্যক্রমেও তারা অংশ নিতে পারেননি।

প্রসঙ্গত, মহানবী হযরত মুহাম্মদকে (সাঃ) নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি ও ধর্ম অবমাননাকর ছবিসহ স্ট্যাটাস দেয়ার অভিযোগ এনে গত ১০ নভেম্বর শুক্রবার টিটু রায়ের ঠাকুরপাড়া গ্রামে হামলার ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, জুমার নামাজের পর আশেপাশের ৬-৭টি গ্রামের প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার মানুষ ঠাকুরপাড়া গ্রামে হামলা চালায়।

এ সময় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষুদ্ধ জনতার সংঘর্ষ শুরু হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালালে ছয় জন আহত হন। পরে আহতদের মধ্যে হাবিব নামে এক যুবক মারা যান। ওইদিন ঠাকুরপাড়ার অন্তত ৮-১০টি হিন্দুবাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ভাঙচুর করা হয় আরো ২০টি ঘরবাড়ি। হামলাকারীরা হিন্দুদের বাড়িঘরের মালামাল, বাসনপত্র, গরু-ছাগলও লুট করে নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলো।

এঘটনার চারদিন পর ১৪ নভেম্বর ভোরে নীলফামারীর জলঢাকার গোলনা ইউনিয়নের চিড়াভিজা গোলনাগ্রাম থেকে টিটু রায়কে গ্রেপ্তারের পর গঙ্গাচড়া থানা থেকে টিটুর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

গোনিউজ২৪/কেআর

 

আইন-আদালত বিভাগের আরো খবর