বিচারকদের অফিস ফাঁকি চলবে না: সিনহা


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২৫, ২০১৬, ০৭:৩৭ পিএম
বিচারকদের অফিস ফাঁকি চলবে না: সিনহা

বিচারকদের অফিস সময়ের পুরোটা সময় বিচার কাজ করতে বলেছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তিনি বলেছেন, অনেক বিচারকই এটা করেন না। ছুটির আগের দিন বাড়ি যাওয়ার জন্য দুপুরের পর অফিস করেন না। কোনো কোনো বিচারক সরকারি গাড়ি নিয়েও অনিয়ম করেন।

জাতীয় বিচার বিভাগীয় সম্মেলন এর দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে রবিবার প্রধান বিচারপতি এসব কথা বলেন। জেলা জজদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে দ্বিতীয় এই অধিবেশন চলছে।

প্রধান বিচারপতি বলেন, আদালতের পুরো সময়কে বিচার কাজে ব্যয় করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি শুনতে পাই কোনো কোনো জেলা জজ মধ্যাহ্ন বিরতির পরে আদৌ বিচার কাজে বসেন না। এটা আদৌ গ্রহণযোগ্য নয়। কজলিস্টে এমনভাবে ও এরকম সংখ্যায় মামলা রাখতে হবে যেন পুরো বিচারিক সময়ে আদালত কার্যরত থাকতে পারে।’

প্রধান বিচারপতি বলে, ‘কোনো কোনো জেলা জজের ও তার অধীনস্থ বিচারকের পরিবার ঢাকায় থাকেন। তাদের মধ্যেকার কতিপয় জজ ও তার অধীনস্থ বিচারক বৃহস্পতিবার দুপুরের পর ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা হন, রবিবার দুপুরে ফিরে যান কর্মস্থলে।’

জেলা জজ নিজে সঠিক সময়ে আদালতে আসবেন উল্লেখ করে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, ‘পুরো বিচারিক সময় বিচার কাজে ব্যাপৃত থাকবেন এবং অন্য বিচারকদের একইভাবে নিয়মানুবর্তী ও সময়নিষ্ঠ হতে সহায়তা করবেন এটাই প্রত্যাশা।’

বিচারকরা গাড়ি নিয়েও অনিয়ম করেন বলে মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, ‘কোনো কোনো জেলা জজ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ব্যতিরেকে সরকারি গাড়ি নিয়ে জেলার বাইরে ভ্রমণ করেন। কোনো কোনো জেলা জজ নিজের গাড়ি না নিয়ে এ কাজে অন্য আদালতের গাড়ি ব্যবহার করেন। ঢাকার বাইরে কর্মরত কোনো কোনো জেলা জজের গাড়ি প্রায়ই ঢাকা শহরে দৃশ্যমান হয়। এগুলো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি ব্যথিত হয়েছি যে, কোনো কোনো জেলার জেলা জজ ও চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত কারণে অনাকাঙ্ক্ষিত বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এটি জেলার সামগ্রিক বিচার ব্যবস্থার ওপর অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব ফেলছে। জ্যৈষ্ঠ ও দায়িত্ববান কর্মকর্তা হওয়ার কারণে সংশ্লিষ্ট জেলা জজ তাঁর প্রজ্ঞা ও সুবিবেচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।’

বিচারকের পদটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, একজন বিচারক নিশ্চিতভাবে বিচার কর্মের জন্য সৃষ্টিকর্তার নিকট থেকে স্বীকৃতি, প্রশংসা ও পুরষ্কার পাবেন। রাষ্ট্র এবং এর জনগণ বিচারককে অবশ্যই সম্মানের আসনে সমাসীন হিসেবে দেখতে চায়। আপনাদের মর্যাদার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনায় রয়েছে।

আইনসম্মত সুবিচার প্রাপ্তি প্রত্যেক নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার জানিয়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেছেন, এক্ষেত্রে কোনো সীমাবদ্ধতাই অজুহাত হতে পারে না।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমি অবগত আছি যে, মানসম্পন্ন সু-বিচার প্রাপ্তির ক্রমবর্ধমান জনআকাঙ্খার বিপরীতে অবকাঠামোগত ঘাটতিসহ বহুবিধ সীমাবদ্ধতার মাঝে আপনাদের কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, বিনা বিলম্বে, স্বল্পব্যয়ে ও প্রকাশ্য বিচারের মাধ্যমে আইন সম্মত সুবিচার প্রাপ্তি প্রতিটি নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। আমরা নাগরিকগণের মানসম্মত সুবিচার নিশ্চিতকরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। এক্ষেত্রে কোন সীমাবদ্ধতাই অজুহাত হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়।’

দ্বিতীয় দিনের অধিবেশনে সভাপতিত্ব করছেন আপিল বিভাগের বিচারপতি আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। আজকের এ কর্ম অধিবেশনে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০ বাস্তবায়নে সমস্যা ও সমাধান, আদালত প্রশাসনের দক্ষতা বৃদ্ধিতে করণীয়, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের করণীয়, আধুনিক বিচার ব্যবস্থায় বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) পদ্ধতি প্রয়োগের অপরিহার্যতা বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে এবং উক্ত আইন প্রয়োগে বাস্তব সমস্যাসমূহ চিহ্নিত হবে।

 

গো নিউজ২৪/জা আ 

আইন-আদালত বিভাগের আরো খবর