মহামারির হাত থেকে বেঁচে কর্মহীন ভারতীয়রা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ২১, ২০২১, ০১:১৩ পিএম
মহামারির হাত থেকে বেঁচে কর্মহীন ভারতীয়রা

স্বাস্থ্যগত ক্ষয়ক্ষতি হিসাব করলে করোনাভাইরাস মহামারির হাত থেকে বড় বাঁচা বেঁচে গেছে ভারত। যতটা আশঙ্কা করা হয়েছিল, ততটা খারাপ হয়নি। দেশটিতে করোনায় প্রাণ কেড়েছে যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের তুলনায় ১০ ভাগের এক ভাগেরও কম। তবে চাকরির দিক থেকে ভারতের ক্ষতি কয়েকগুণ বেশি। মহামারির মধ্যে সেখানে চাকরি হারিয়েছেন বা কম বেতনে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। সরকারি সাহায্যের ওপর নির্ভর করে কোনোরকমে দিন পার করছেন তারা। নিঃসন্দেহে এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে দরিদ্র শ্রেণির।

গত জানুয়ারিতে মুম্বাইয়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, আর্থ-সামাজিক অবস্থানে ওপরের দিকে থাকা সম্প্রদায়ে কাজ হারিয়েছেন নয় শতাংশ মানুষ। তাদের দৈনিক আয় ২২ দশমিক ৩০ ডলার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ দশমিক ৪০ ডলারে। তবে নিম্নশ্রেণিতে কাজ হারানোর হার ৪৭ শতাংশ। তাদের দৈনিক আয় ছয় ডলার থেকে প্রায় অর্ধেক কমে হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ৩৫ ডলার।

ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দুরবস্থা ভারতীয় নারীদের। মুম্বাইয়ের ওই জরিপেই দেখা গেছে, তিন-চতুর্থাংশ পুরুষ জানিয়েছেন, মহামারিতে তাদের কাজ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নারীদের মধ্যে এর হার ৮৯ শতাংশ। তাছাড়া, বেশিরভাগ পুরুষ ইতোমধ্যে পুরোনো চাকরিতে ফিরেছেন নাহয় নতুন কাজ জোগাড় করে নিয়েছেন। সেখানে নারীদের কর্মহীনতা শুধু দীর্ঘই হচ্ছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভারতীয় অর্থনীতি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের (সিএমআইই) তথ্যমতে, ২০১৯ সালে ভারতের শহরগুলোতে ৯ দশমিক ৭৮ শতাংশ প্রাপ্তবয়স্ক নারী শ্রমশক্তির অংশ হিসেবে বিবেচিত হতেন। করোনা মহামারির মধ্যে গত বসন্তে সেই সংখ্যা ৭ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে আসে। উদ্বেগ বাড়িয়ে গত নভেম্বরে এর হার আরও কমে দাঁড়ায় ৬ দশমিক ৯ শতাংশ।

ভারতজুড়ে ১ লাখ ৭০ হাজার বাড়িতে জরিপ চালিয়েছে সিএমআইই। এর ফলাফলে দেখা গেছে, চাকরিহারা নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে নতুন চাকরি জোগাড়ের হার অন্তত আটগুণ বেশি।

মহামারিতে নারী চাকরিজীবীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে, কর্মজীবনের শুরুতে কম মজুরির অনিশ্চিত চাকরিতে প্রবেশ। তাছাড়া অনেকেই শিক্ষকতায় যুক্ত ছিলেন। করোনা মহামারিতে ভারতের অন্তত সাড়ে চার লাখ বেসরকারি স্কুল বাধ্যতামূলক রয়েছে। জুনিয়র স্কুলের বেশিরভাগ শিক্ষককেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। অনেকেরই বেতন অর্ধেক কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।

আবার অনেক নারীই বাসায় সন্তানদের দেখভালের জন্য নিজেরাই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে, মহামারিতে চাহিদাবৃদ্ধি পাওয়া কাজগুলোতে সম্পৃক্ত হওয়াও নারীদের তুলনায় পুরুষদের জন্য কিছুটা সহজ দেখা গেছে। যেমন- পণ্য ডেলিভারি সেবা।

নারীদের কর্মক্ষেত্র কমে যাওয়ায় ভারতের শ্রমবাজারও সঙ্কুচিত হয়ে পড়েছে। সিএমআইই’র হিসাবে, ২০১৬ সালে এর আকার ছিল ৪২ কোটি, এখন তা ৪০ কোটির নিচে এসে দাঁড়িয়েছে। চীন বা ইন্দোনেশিয়ার মতো নারীদের অংশগ্রহণ থাকলে আজ ভারতে ৬০ কোটি মানুষের বিশাল শ্রমবাজার থাকত।

সিএমআইইর প্রধান মহেশ ব্যাসের মতে, ভারতের এই পরিস্থিতি খুব শিগগিরই বদলানোর সম্ভাবনা নেই। তার কথায়, মহামারির সময় বিনিয়োগ ও চাকরির ক্ষেত্র বৃদ্ধির লক্ষ্যে করপোরেট ট্যাক্স এবং সুদের হার কমানো হয়। তবে অনেক প্রতিষ্ঠানই শুধু লাভের পরিমাণ বাড়িয়ে ছাঁটাই অব্যাহত রেখেছে। একারণে বেকারত্ব বাড়ার সময়ও করপোরেট মুনাফা এবং শেয়ারের দাম রেকর্ড পর্যায়ে গেছে। সুতরাং, এটা মোটামুটি নিশ্চিত, ব্যবসার শর্তগুলো শ্রমিকবিরোধী পরিণত হয়েছে।

সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর