করোনার দ্বিতীয় আঘাতের নির্মমতা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময়


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২১, ২০২০, ০৮:৫১ পিএম
করোনার দ্বিতীয় আঘাতের নির্মমতা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময়

আক্রান্তের সংখ্যা তিন কোটি পেরিয়ে এবং মৃত্যুর সংখ্যা দশ লক্ষ স্পর্শ করার প্রেক্ষাপটে করোনা মহামারির দ্বিতীয় আঘাতের নির্মমতা ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বময়। চীনে উদ্ভূত হওয়ার ৮/৯ মাসের মধ্যে বৈশ্বিক তাণ্ডব শেষে কিছুটা স্থিমিত হলেও পুনরায় ফুঁসে উঠছে করোনা।

যেসব দেশ একবার আক্রান্ত হয়েছিল, সেসব দেশ নতুন করে পর্যদুস্ত হচ্ছে করোনায় ভয়ঙ্কর থাবায়। ইরান থেকে মহামারির পুনঃবিস্তারের খবর পাওয়া গেছে। উৎপত্তিস্থল খোদ চীনেও নতুন সংক্রমণ হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্বনেতৃবৃন্দের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের পূর্বাভাস। বলা হচ্ছে, আসন্ন শীতে করোনা পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ এবং এজন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি নিতে হবে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়-প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে।

বিশেষজ্ঞরা সবচেয়ে বেশি চিন্তিত মাইগ্রেন্ট ওয়ার্কার্স বা অভিবাসী শ্রমিক শ্রেণি ও শরণার্থীদের নিয়ে, যারা বিশ্বের দেশে দেশে নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বসবাস করছেন। পরিসংখ্যান বলছে, এমন জনগোষ্ঠী এখন পৃথিবীর দেশে দেশে অবস্থান করছে। সংখ্যায় যারা বিপুল। করোনার আঘাত এসব মানুষকে আরো বিপদগ্রস্ত করবে।

বিশ্বের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষজন বিদেশের বাজারে শ্রম দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। পুরো মধ্যপ্রাচ্য গিজগিজ করছে বাইরের শ্রমিকে। মালয়েশিয়া, ইউরোপ, আমেরিকাতেও অভিবাসী শ্রমিকের কমতি নেই। সংশ্লিষ্ট দেশের নাগরিকত্ব না পেয়ে কষ্টে ও নূন্যতম মানবিক সুযোগের মধ্যে কাটছে তাদের জীবন। নাগরিক না হওয়ায় সোশ্যাল সিকিউরিটি, হেলথ সার্ভিস ইত্যাদিতে অন্তর্ভূক্ত নন অভিবাসী শ্রমিকগণ। ফলে কোনো ধরনের সেবা ও চিকিৎসা পাওয়ার ক্ষেত্র এরা বলতে গেলে অধিকারহীন।    

শরণার্থীদের বিষয়েও বিশেষজ্ঞরা সাবধানবাণী উচ্চারণ করেছেন। বিশ্বের প্রায়-সর্বত্র, বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো লক্ষ লক্ষ শরণার্থী বসবাস করছে অনমানবিক পরিস্থিতিতে। খাদ্য, বাসস্থান চিকিৎসার সামান্য সুযোগও তারা পাচ্ছে না। করোনার আঘাতে এই ছিন্নমূল মানুষগুলোর জীবনে ঘোরতর বিপদ নেমে আসার আশঙ্কাও করা হচ্ছে।

আমাদের দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলেও বিভিন্ন শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী, শিবিরবাসী, ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক লক্ষ লক্ষ মানুষ আছেন। তাদের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে  ঘোষিত বা অঘোষিত নীতি-নির্দেশও আছে। কিন্তু এই প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ভাগ্য বিপন্নই শুধু নয়, বিশ্ব সম্প্রদায়ের সদিচ্ছার উপরেই নির্ভরশীল। বিশেষত, বাংলাদেশে চট্টগ্রামের কক্সবাজার জেলায় আছেন মায়ানমার থেকে আসা বিশাল সংখ্যক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে এঁদের সংখ্যা ছিল ৯ লক্ষ ১৪ হাজার, যার ৬০ শতাংশই শিশু। দিনে দিনে এই সংখ্যা বাড়ছে এবং শরণার্থী শিবিরেও জন্ম নিচ্ছে হাজার হাজার শিশু। 

 শরণার্থী ত্রাণ প্রত্যাবাসন কমিশনার, ইউএন এজেন্সির মতো আন্তর্জাতিক সংগঠন এবং কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার বিদেশি বিনিয়োগে ত্রাণের ব্যবস্থা করেছে সেখানে। কিন্তু রোহিঙ্গা শিবিরে এক কিলোমিটারের মধ্যে অন্তত ৪০০টি পরিবারের বাস। ত্রাণকাজে যুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের লোকজনও কোভিডের খবরের পর ক্যাম্পে ঢুকতে ভয় পাচ্ছেন। যদিও জনঘনত্বের তুলনায় কোভিড রোগী এখনও বেশ কম। সদর হাসপাতাল ছাড়া রামু, চাকারিয়া, উখিয়া ও টেকনাফে রোগীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানেও রয়েছে টেস্ট কিটের অপ্রতুলতা।

করোনার আবার ফুঁসে উঠলে যে প্রলয়ঙ্কারী মানব বিপর্যয় ও ক্ষতি হবে, তাতে আমজনতার পাশাপাশি সমাজের প্রান্তিক মানুষ, খেটে-খাওয়া জনতা, ছিন্নমূল ও শরণার্থীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নাজুক সমস্যার মধ্যে নিপতিত হবে। এজন্য অবিলম্বে যথোপযুক্ত প্রস্তুতির বিকল্প নেই।

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর