পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি ‘আগ্রাসন’ ঠেকাতে দানা বাধছে আন্দোলন


নিউজ ডেস্ক: প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৯, ০৪:১০ পিএম
পশ্চিমবঙ্গে  হিন্দি ‘আগ্রাসন’ ঠেকাতে দানা বাধছে আন্দোলন

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে হিন্দি ভাষার ‘আগ্রাসন’ ঠেকাতে সব জায়গায় বাংলা ব্যবহারের একটি আন্দোলন ক্রমশই দানা বাধছে। আন্দোলরকারীদের দাবি, জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে তাদের এই প্রতিবাদ। আন্দোলনটি এমন সময় জোরদার হয়েছে, যখন ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন দল বিজেপি’র সভাপতি অমিত শাহ দেশের প্রধান ভাষা হিসাবে হিন্দিকে তুলে ধরার কথা বলেছেন।

দক্ষিণ ভারতের প্রায় সবকটি রাজ্যেই হিন্দির বিরুদ্ধে প্রবল জনমত রয়েছে দীর্ঘদিন ধরেই। ওইসব রাজ্যে খুব কম মানুষই হিন্দি বোঝেন, কিংবা বুঝলেও অনেকটা আদর্শগতভাবেই হিন্দি বলেন না। তাই তামিলনাডু, কেরালা বা কর্ণাটকের মতো রাজ্যগুলো থেকে যে হিন্দিকে প্রধান ভারতীয় ভাষা হিসাবে তুলে ধরার প্রচেষ্টার বিরোধীতা হবে, তা হয়তো স্বাভাবিক।

তবে নিজেদের ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে গর্ব থাকলেও পশ্চিমবঙ্গবাসীকে হিন্দি নিয়ে প্রতিবাদে সরব হতে খুব একটা দেখা যায়নি। বরং অনেক সময়েই দুই বাঙালিকে নিজেদের মধ্যে হিন্দিতে কথা বলতে শোনাও যায়।

কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এখন অনেকেই মনে করছেন হিন্দি ভাষার আগ্রাসন হচ্ছে এবং এর একটি রাজনৈতিক দিকও রয়েছে - ফলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলার পক্ষে ক্যাম্পেইন চলছে, আর প্রতিবাদ হচ্ছে রাস্তার বিক্ষোভ-জমায়েতে।

কলকাতার কলেজ স্ট্রিট কফি হাউসের সামনে কয়েকদিন আগে এরকমই একটা জমায়েত হয়েছিল ভাষা-সংস্কৃতি কর্মীদের, যেখানে জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দেয়া হয়েছে।

ওই জমায়েতের মূল সংগঠন অধ্যাপক ইমানুল হক দীর্ঘদিন ধরেই মাতৃভাষা নিয়ে আর বাংলার সংস্কৃতিকে ধরে রাখার জন্য অ্যাক্টিভিজম চালাচ্ছেন।

বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছিলেন, আমরা যদিও দীর্ঘদিন ধরেই মাতৃভাষা নিয়ে আন্দোলন করছি, কিন্তু এখন অনেকেই আমাদের মাতৃভাষার ওপরে কোনও রকম আঘাত এলেই যে সরব হচ্ছেন, তার একটা কারণ নিঃসন্দেহে আছে। দেশের অর্থনীতির যা অবস্থা, সেইরকম সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে মানুষ একটা কিছু আঁকড়ে ধরতে চাইছেন। সেই আবেগটাই প্রকাশিত হচ্ছে ইদানীং।

ফ্যাশন ডিজাইনার তন্বী দাস বাংলা ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে সামাজিক মাধ্যম আর রাস্তায় নেমে মুখর হওয়া - দুটোই করেন।

তিনি বলেন, নিজের ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে সচেতনতা আগেও ছিল। কিন্তু মানুষকে আগে এতটা মুখর হতে দেখেননি হয়ত এই কারণে যে এই প্রথম কেন্দ্রীয় সরকার হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার কথা খুব জোরালোভাবে বলছে। আমরা যে একটা জাতি, সেই জাত্যাভিমানের জায়গা থেকেই প্রতিবাদ এখন বেশি দেখা যাচ্ছে।

এই বাঙালি জাত্যাভিমানের আবেগেই ‘বাংলা পক্ষ’ নামে একটি সংগঠন তৈরি হয়েছে, যারা নিয়মিত ‘হিন্দি আগ্রাসনের’ বিরুদ্ধে সরব।

ফেসবুককে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই সংগঠনটি অবশ্য শুধুই সামাজিক মাধ্যমেই সীমাবদ্ধ নেই, তারা পথেও নেমেছে।

সংগঠনটির প্রধান অধ্যাপক গর্গ চ্যাটার্জীর বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে উর্দু সাম্রাজ্যবাদ প্রথমেই আগুনে বাঙালিদের ঝলসে দিয়েছিল, তাই সঙ্গে সঙ্গেই সেখানকার বাঙালি লাফিয়ে উঠেছিল। কিন্তু এখানে হিন্দি সাম্রাজ্যবাদ আমাদের ফুটন্ত জলে সেদ্ধ করেছে ধীরে ধীরে, যাতে একটা সময়ে আমরা স্থবির, বলহীন হয়ে পড়ি।

তিনি আরও বলেন, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা টের পেয়েছে যে জনসংখ্যার বিন্যাসে বদল ঘটিয়ে পুঁজি, বাজার, চাকরি আর জমিগুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে বহিরাগতদের দ্বারা, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছে বাঙালিদের। এই অবস্থাটা আটকাতেই আমাদের লড়াই।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

গো নিউজ২৪/আই

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর