খাসোগির ১৫ ঘাতকের ছবি প্রকাশ


নিউজ ডেস্ক: প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০১৮, ০৫:০১ পিএম
খাসোগির ১৫ ঘাতকের ছবি প্রকাশ

ঢাকা : সাংবাদিক জামাল খাসোগি নিখোঁজ ও হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক সন্দেহভাজন খুনীর সঙ্গে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের (এমবিএস) ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমস।

এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদির প্রতাপশালী যুবরাজ এমবিএসের ঘনিষ্ঠ এক সহচরকে সাংবাদিক জামাল খাসোগির খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বলে দাবি করেছে তুরস্ক।

তুর্কি সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হযেছে, যুবরাজ সালমানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিশেষবাহিনীর আরো তিন সদস্য ও সৌদির উচু স্তরের এক ফরেনসিক চিকিৎসকও এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।

তুরস্কের সরকারি সূত্রগুলো বলছে, দেশটির পুলিশের ধারণা সৌদি ওই সাংবাদিককে কনস্যুলেট ভবনেই হত্যা করা হয়েছে। আর এই হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়ার জন্য সৌদি থেকে তুরস্কে উড়ে এসেছিল ১৫ সদস্যের বিশেষ কিলিং স্কোয়াড। ১৫ জনের কিলিং স্কোয়াডের মধ্যে অন্তত ৯ জন সৌদি নিরাপত্তাবাহিনী, সেনাবাহিনী অথবা দেশটির বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সদস্য।

মার্কিন এই সংবাদমাধ্যম বলছে, ফেস শনাক্তকারী সফটওয়্যার, সৌদি আরবের মোবাইল ফোন নম্বরের তথ্য-উপাত্ত ও ফাঁস হওয়া সৌদি বিভিন্ন নথি-পত্র, প্রত্যক্ষদর্শী ও গণমাধ্যমের সহায়তায় ঘাতকদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে তুরস্ক। 

সন্দেহভাজন ঘাতকদের একজন মাহের আব্দুল আজিজ মুতরেব। ২০০৭ সালে লন্ডনে নিযুক্ত সৌদি দূতাবাসে কূটনৈতিক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি। নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, সম্প্রতি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের মাদ্রিদ থেকে প্যারিস সফরের সময় তার বডিগার্ড হিসেবে দেখা গেছে মুতরেবকে। যুবরাজের সঙ্গে বিমানে উঠতে এবং নামতে দেখা যায় মুতরেব। এ ঘটনার ছবি আছে তাদের কাছে।

যুক্তরাষ্ট্রের হাস্টন, বোস্টন ও জাতিসংঘের সদর দফতরে সফরের সময়ও যুবরাজের পাশে দাঁড়িয়ে থাকে দেখা যায় মুতরেবকে।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, অন্য তিনি সন্দেহভাজন হলেন আব্দুল আজিজ মোহাম্মদ আল-হাসায়ি, থার গালিব আল-হার্বি ও মোহাম্মদ সাদ আলজাহরানি। এই তিনজনই সৌদি যুবরাজের নিরাপত্তায় নিয়োজিত বিশেষবাহিনীর সদস্য।

মার্কিন এই দৈনিক বলছে, সৌদি রয়্যাল গার্ডের সদস্য তালিকায় আল-হার্বি ও আলজাহরানির নাম পাওয়া গেছে। পঞ্চম সন্দেহভাজন হলেন, সৌদি আরবের ময়নাতদন্তকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সালাহ আল-তুবাইজি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে তার অ্যাকাউন্টে সৌদি সায়েন্টিফিক কাউন্সিল অব ফরেনসিকের প্রধান হিসেবে পরিচয় দেয়া আছে।

নিউইয়র্ক টাইমস বলছে, সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও দেশটির শীর্ষস্থানীয় মেডিক্যাল স্কুলগুলোর শীর্ষ পদেও আছেন এই চিকিৎসক।

এদিকে তুরস্কের একটি সূত্রের বরাত দিয়ে মার্কিন বার্তা সংস্থা সিএনএন ও আল-জাজিরা জানায়, সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে মাত্র সাত মিনিটেই হত্যা করা হয়। দুই সপ্তাহ আগে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতর খাসোগিকে হত্যার পর শরীর টুকরো টুকরো করা হয়।

ওই সূত্র আল-জাজিরাকে জানায়, খাসোগিকে হত্যা করতে মাত্র সাত মিনিট লেগেছে। পরে সৌদি ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ সালাহ আল-তুবাইজি খাসোগির মৃত দেহ টুকরো টুকরো করেন, এসময় তিনি তার সহকর্মীদের গান শুনতে বলেন।

একটি সূত্রের বরাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ডেইলি মেইল বলছে, সৌদি সাংবাদিককে জীবিত অবস্থায় টুকরো টুকরো করা হয়। এরপরও তিনি সাত মিনিট বেঁচেছিলেন। অবশেষে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি।

সূত্রটি বলছে, গত ২ অক্টোবর ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর খাসোগিকে টেনেহিঁচড়ে কনসাল জেনারেলের অফিস থেকে পাশের রুমের একটি টেবিলের কাছে নেয়া হয় এবং সেখানেই তাকে টুকরো টুকরো করা হয়। এসময় খাসোগির হাতে অ্যাপল ওয়াচের রেকর্ডিং চালু ছিল। মৃত্যুকালীন অ্যাপল ওয়াচের রেকর্ডকৃত কথোপকথন তাদের হাতে এসেছে। অডিও রেকর্ডে খাসোগির চিৎকার শোনা গেছে। তার চিৎকার বন্ধ করতে শরীরে চেতনানাশক ওষুধের ইনজেকশন দেয়া হয় এবং এর কিছুক্ষণ পর তিনি নীরব হয়ে যান।

গো নিউজ২৪/আই

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর