যৌনকর্মীর বদলে যৌনপল্লিতে বাড়ছে সেক্স ডলের চাহিদা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ২৩, ২০১৭, ০১:৫০ পিএম
যৌনকর্মীর বদলে যৌনপল্লিতে বাড়ছে সেক্স ডলের চাহিদা

সেক্স ডল বা সেক্স রোবট তৈরির কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ দেখিয়ে আসছিলেন মানবাধিকার কর্মীরা। এই রোবট যৌনকর্মীদের রোজগারে ভাগ বসাবে বলে আশঙ্কা ছিল তাদের। এবার তাদের সেই আশঙ্কাই সঠিক প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। প্রথম একটি সেক্স ডল জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর একই ধরনের দ্বিতীয় আরেকটি পুতুল ক্রয় করেছে অস্ট্রিয়ার একটি যৌনপল্লি।

ব্রিটিশ গণমাধ্যম মেট্রোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিয়েনার কন্টাকথফ যৌনপল্লিতে ‘ফ্যানি’ নামের ওই সেক্স ডল জনপ্রিয়তা পাওয়ার পরই নতুন করে আরেকটি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। যৌনপল্লিতে কাজ করা কর্মীদের চেয়ে এই পুতুল আরো বেশি সংখ্যক খদ্দেরের চাহিদা পূরণ করতে পারে।

অস্ট্রিয়ার দুটি যৌনপল্লির মালিক পিটার লাসকারিস জানান, দেখতে জীবন্ত পুতুলটি জাপান থেকে ৭ হাজার ইউরো দিয়ে কিনে এনেছেন তিনি। প্রতি ঘণ্টা ৮০ ইউরোতে এটি ভাড়া দেন পিটার। এর চাহিদা বাড়ায় এখন দ্বিতীয় একটি সেক্স ডল কেনার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইতিমধ্যে সেক্স রোবটের বিরুদ্ধে ‘দ্য ক্যাম্পেইন অ্যাগেইনস্ট সেক্স রোবট’ নামে একটি প্রচারণা অভিযান শুরু করেছে। মানুষ তার যৌন চাহিদা পূরণের জন্য যায় যৌনকর্মীদের কাছে। যৌনতার বিনিময়ে উপার্জন করে এ পেশায় নিয়োজিতরা। এ ধরনের রোবট যদি আবিষ্কৃত হয় তবে মানুষ আর যৌনকর্মীদের কাছে যাবে না বলে আশঙ্কা অ্যামনেস্টির। এতে তাদের আয় কমে যাবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।

প্রথম দিকে সেক্স রোবটের ভবিষ্যত অনিশ্চিত মনে করা হয়েছিল। একদিকে তৈরির উচ্চ ব্যয়, অন্যদিকে নানা জটিলতায় এটি বাজারে আসতে পারবে না বলেই ধারণা করেছিলেন সংশ্লিষ্ট অনেকে। তবে হাল ছাড়েনি অ্যাবাইস ক্রিয়েশনস। গত ২০ বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছে তারা। রিয়েল ডলকে তারা সেক্স রোবটে পরিণত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে তারা মেয়ে আকৃতির ‘হারমনি’ নামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি সেক্স রোবট নির্মাণ করেছে।

বর্তমানে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো ‘অ্যানড্রয়েড লাভ ডল’, ‘সেক্স বোট’ এবং ‘ট্রু কম্পেনিয়ন’ নামে বিভিন্ন ধরনের সেক্স রোবট নির্মাণ করছে। এর আগে এগুলো দেখতে মানুষের মতো করে তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে এসব রোবটকে চলাচলযোগ্য ও কথা বলার মতো করে তৈরি করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে এগিয়ে অ্যাবাইস ক্রিয়েশন্স। তারা ইতিমধ্যে ‘রিয়েল ডল’ নামের একটি সেক্স রোবট তৈরি করেছে এবং চলতি বছরের শেষের দিকে ‘হারমোনি’ নামের বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ওই সেক্স ডল উন্মুক্ত করবে। এটি মাথা এবং চোখ নাড়াতে পারে ও অ্যাপস ব্যবহার করে কথা বলতে পারে।

সেক্স রোবট বা সেক্স ডল নিয়ে অনেকদিন ধরেই নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়ে আসছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ ধরনের জিনিস শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়ন বাড়াবে।

গবেষক ও অধ্যাপক নোয়েল শার্কি বলেন, সব ধরনের সেক্স রোবটের প্রভাব সম্পর্কে পুরো সমাজকে ভেবে দেখতে হবে। এ বিষয়ে বেশকিছু পরামর্শও দিয়েছে তার ‘ফাউন্ডেশন রেসপন্সিবল ফর রোবটিকস’ নামের প্রতিষ্ঠান।

তিনি বলেন, বর্তমানে হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সেক্স রোবট তৈরি করছে। তবে আসন্ন রোবট বিপ্লব এই পরিস্থিতি পাল্টে দিতে পারে। ‘আওয়ার সেক্সুয়াল ফিউচার উইদ রোবট’ নামের ওই প্রতিবেদনে সেক্স রোবটের ভবিষ্যৎ সমস্যা সম্পর্কে অবহিত করা হয়েছে। তবে ঠিক কত মানুষ বর্তমানে সেক্স রোবট ব্যবহার করছে- সে সম্পর্কে সঠিক কোনও তথ্য দিতে পারেননি শার্কি। কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো এই সংখ্যা প্রকাশ করে না।

এই গবেষক বলেন, ভবিষ্যতে মানুষ এবং রোবটের যৌনতার ব্যাপারে সমাজকে জেগে ওঠার এটাই সময়। তার ভাষায়, ‘আমাদের এমন নীতি নির্ধারক দরকার, যারা এটার দেখভাল করতে পারবেন এবং সাধারণ জনগণের জন্য কতটুকু গ্রহণযোগ্য ও অনুমোদনযোগ্য- সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন। আমাদের ভেবে দেখতে হবে, আমরা আসলে কী করতে চাইছি। আমি কোনও সমাধান দিচ্ছি না, শুধু প্রশ্ন করছি।’

যুক্তরাজ্যের ডি মন্টফোর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবট এথিকস বিভাগের ড. ক্যাথলিন রিচার্ডসন শার্কির প্রতিবেদনের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বলেন, শিশু সেক্স রোবট নিষিদ্ধ করা উচিৎ। তবে সব ধরনের সেক্স রোবট নিষিদ্ধের দাবি তোলা ঠিক না। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে প্রধান সমস্যা রোবটগুলো নয়; সমস্যা যৌন বাণিজ্য। সেক্স রোবট আসলে এক ধরনের পর্নগ্রাফি।’ শিশু সেক্স রোবট দিয়ে শিশু পর্নগ্রাফি তৈরি হবে বলেও আশঙ্কা আছে।

তাছাড়া এ ধরনের রোবট মানুষের মধ্যে ‘সামাজিক বিচ্ছিন্নতা বাড়াবে’ বলেও মনে করেন এই নারী গবেষক। সেক্স রোবট হচ্ছে এমন রোবট যার সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন সম্ভব। এর ভেতর এমন ধরনের ডিভাইস স্থাপন করা আছে যার মাধ্যমে রোবটটি তার সঙ্গীর মধ্যে সত্যিকারের যৌন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন সম্পর্ক বিষয়ক গবেষক শেলি রোনেন জানান, রোবটটি যাতে মানুষের মধ্যে যৌন অনুভূতি সৃষ্টি করতে পারে সেজন্য অনেক কিছুই ইতিমধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে। এর মাধ্যমে হয়তো তাদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কও স্থাপন করা যেতে পারে।

কোনও জড়বস্তুর প্রতি দৈহিক আকর্ষণকে স্বাভাবিক মনে করেন না মনোবিজ্ঞানীরা। জড়বস্তুর প্রতি দৈহিক আকর্ষণ বা ভালোবাসা কিংবা অনুরাগকে এক ধরনের অটিজম হিসেবে দেখেন মনোবিজ্ঞানী এবং যৌন বিশেষজ্ঞরা। এই মানসিক সমস্যাকে তারা বলেন, ‘অবজেকটোফিলিয়া’। অনেক গবেষক একে বলেন- ‘অবজেক্ট সেক্সুয়ালিটি’ (Object sexuality)। তাদের মতে, কোনো জড়বস্তু, ভাস্কর্য বা মূর্তির প্রতি প্রেম, প্রীতি, ভালোবাসা, অনুরাগ বা শারীরিক আকর্ষণ- এর সবই অবজেকটোফিলিয়া।

গো নিউজ২৪/ আরএস

এ সম্পর্কিত আরও সংবাদ


আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর