মার্কিন প্রেসিডেন্টদের যত যৌন কেলেঙ্কারি


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০১৭, ০২:২৫ পিএম
মার্কিন প্রেসিডেন্টদের যত যৌন কেলেঙ্কারি

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের যৌন কেলেঙ্কারির কথা বললে প্রথমেই আসবে বিল ক্লিনটনের কথা। নব্বইয়ের দশকে ক্লিনটন-মনিকা লিউনস্কির যৌন কেলেঙ্কারির কাহিনী বিশ্ব গণমাধ্যমে বেশ আলোড়ন ফেলেছিল। এ কারণে বিল ক্লিনটনের পদত্যাগের জন্যও চাপ সৃষ্টি করেছিল বিরোধী রিপাবলিকান পার্টি। তবে ক্লিনটন ছাড়াও আরো বেশ কয়েকজন মার্কিন প্রেসিডেন্টের যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা রয়েছে। এক নজরে সেসব মার্কিন প্রেসিডেন্টের তালিকা দেখে নেয়া যাক:

জেমস বুকানন

যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র অবিবাহিত প্রেসিডেন্ট জেমস বুকানন। ১৮৫৭ থেকে ১৮৬১ সাল পর্যন্ত তিনি দেশটির পঞ্চদশ প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সমকামী ছিলেন বলে জনশ্রুতি ছিল। বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সমকামিতা স্বীকৃতি পেলেও সেসময় বিষয়টি নিষিদ্ধ ছিল। ফলে বুকাননের সমকামিতার এ বিষয়টি নিয়ে উপহাস করা হতো।

তিনি আলাবামার সিনেটর উইলিয়াম রুফাস কিংয়ের সঙ্গে ১৫ বছর বাস করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসন উইলিয়াম রুফাস কিংকে মজা করে ‘মিস ন্যান্সি’ বলে ডাকতেন। বুকানন এবং উইলিয়াম জুটিকে প্রেমিক-প্রেমিকা বলে মনে করতেন অনেকে। এমনকি বলা হয়ে থাকে, বুকাননের শাসনামলে মার্কিন পোস্টমাস্টার জেনারেল অ্যারন ভি ব্রাউন, উইলিয়াম কিংকে বুকাননের স্ত্রী হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।

থমাস জেফারসন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন থমাস জেফারসন। তিনি দেশটির তৃতীয় প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্যালি হেমিংস নামে একজন মিশ্র জাতিগত ক্রীতদাসের সঙ্গে জেফারসনের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। স্যালি জেফারসনের স্ত্রীর সৎবোন ছিলেন। স্যালির ছয় সন্তানের জনক ছিলেন মার্কিন এ প্রেসিডেন্ট। অবশ্য সেসময় ভার্জিনিয়ার ধনী বিপত্নীকদের ক্রীতদাসীদের উপপত্নী হিসেবে রাখা অস্বাভাবিক কিছু ছিল না।

জর্জ ডাব্লিউ বুশ

পিতা-পুত্র অর্থাৎ সিনিয়র এবং জুনিয়র দুই বুশের বিরুদ্ধেই বিবাহবহির্ভূত যৌন সম্পর্কের অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ৪১ তম প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে এবং প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরেও স্ত্রী ছাড়া অন্য নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার গুজব ছিল।

এদিকে সিনিয়র বুশের ছেলে ৪৩তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশের বিরুদ্ধে আগে থেকেই মাদকদ্রব্য সেবনের অভিযোগ ছিল। পরবর্তীকালে কয়েকটি যৌন কেলেঙ্কারির সঙ্গেও তার নাম জড়িয়ে পড়ে। মার্গি ডেনিস নামে টেক্সাসের একজন নারী তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ আনেন। পরবর্তীকালে মার্গি আত্মহত্যা করেন। অবশ্য দুই বুশই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং এ ঘটনাগুলো মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও ব্যর্থ হয়।

ওয়ারেন জি হার্ডিং 

২৯তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওয়ারেন জি হার্ডিংয়ের সঙ্গে ক্যারি ফুলটন ফিলিপস নামে এক নারীর ১৫ বছর ধরে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। ক্যারি ফুলটন প্রেসিডেন্টের বন্ধুর স্ত্রী ছিলেন। এছাড়া প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনকালে তার চেয়ে ৩০ বছরের ছোট ন্যান ব্রিটন নামে একজন তার উপপত্নী ছিলেন। ব্রিটনের কন্যা এলিজাবেথ অ্যানের বাবা ছিলেন প্রেসিডেন্ট হার্ডিং। ১৯২৩ সালে অপ্রত্যাশিতভাবে হার্ডিং মারা যান। অনেকেই বলে থাকেন, প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ফ্লোরেন্স বিষ প্রয়োগ করে তাকে মেরে ফেলেন।

ডোয়াইট ডি আইজেনহাওয়ার

৩৪তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেনহাওয়ারের সঙ্গে তার ড্রাইভারকে সামার্সবির যৌন সম্পর্ক ছিল। প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর ছয় বছর পরে তিনি (ড্রাইভার) একটি বইতে এ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু আইজেনহাওয়ারের জীবনীকার জাঁ অ্যাডওয়ার্ড স্মিথ জানান, সন্দেহাতীতভাবেই এ দুজন ভালোবাসার সম্পর্কে জড়িয়ে পরেন।

জন এফ কেনেডি

হলিউডের সাড়া জাগানো তারকা মেরিলিন মনরো এবং জন এফ কেনেডির প্রেম কাহিনী বিশ্বজুড়ে কম বেশি সবাই জানেন। এমনকি বলা হয়ে থাকে কেনেডির জন্যই মেরিলিন আত্মহত্যা করেন। তবে মেরিলিন ছাড়াও অ্যাঞ্জি ডিকিনসন, মারলিন ডিয়েত্রিচ এবং স্ত্রী জ্যাকির প্রেস সেক্রেটারি পামেলা টার্নারের সঙ্গেও ৩৫তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডির প্রেমের গুজব শুনা যায়।

ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট

মার্লিন যুক্তরাষ্ট্রের ৩২তম প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট সারাজীবন ধরে এমন একজন নারীর সঙ্গে জড়িয়ে পরেন, যিনি তার স্ত্রী এলেনর রুজভেল্টের সেক্রেটারি ছিলেন। লুসি মার্সার এবং রুজভেল্টের প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয় ১৯১৬ সালে। সেসময় এলেনর এবং সন্তানরা গ্রীষ্মের গরম থেকে বাঁচার জন্য ছুটি কাটাতে ওয়াশিংটনের বাইরে গিয়েছিলেন।

১৯১৮ সালে মার্সারের স্যুটকেসে এক প্যাকেট প্রেমপত্র পান রুজভেল্টের স্ত্রী। যদিও পরবর্তীকালে তিনি স্বামীকে বিবাহ বিচ্ছেদের প্রস্তাব করেন কিন্তু এ দম্পতি আর বিচ্ছেদের পথে যাননি। ফার্স্টলেডি হিসেবে এলেনর রুজভেল্ট সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। পরবর্তী মার্কিন ফার্স্টলেডিদের কাছে এলেনর রুজভেল্ট দৃষ্টান্তযোগ্য একজন ব্যক্তিত্বে পরিণত হন।

গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড 

১৮৮৪ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রচারণার সময় ডেমোক্রেটিক প্রার্থী গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের সঙ্গে বিক্রয়কর্মী মারিয়া হালপিনের প্রেমের খবর প্রকাশ করে একটি পত্রিকা। পরবর্তীকালে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণেরও অভিযোগ তোলা হয়। জনশ্রুতি আছে, হালপিনের সন্তান হলে তাকে অনাথ আশ্রমে পাঠানো এবং হালপিনকে মানসিক হাসপাতালে যেতে বাধ্য করেন তিনি। গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ২২ এবং ২৪তম প্রেসিডেন্ট ছিলেন।

বিল ক্লিনটন

মার্কিন প্রেসিডেন্টদের যৌন কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গে প্রথমেই বিল ক্লিনটনের কথা উল্লেখ করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম এ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে হোয়াইট হাউসের কর্মচারী মনিকা লিউনস্কিকে জড়িয়ে কেলেঙ্কারির কাহিনী জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়। মার্কিন ইতিহাসে এটাই ছিল প্রথম কোনো ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত যৌন কেলেঙ্কারির ফাঁস হয়ে যাওয়ার ঘটনা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাকে অভিসংশনের মুখোমুখি হতে হয়েছিলো। এছাড়া পলা জোন্স, জেনিফার ফ্লাওয়ার্স, ক্যাথলিন উইলি, এলিজাবেথ ওয়ার্ড গ্রাসেন এবং জুয়ানিতা ব্রোডড্রিকের সঙ্গেও ক্লিনটনের যৌন সম্পর্ক ছিল বলে জানা যায়।

এমনকি এখন যখন তার স্ত্রী হিলারি ক্লিনটন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে লড়াই করছেন, তখনো তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প হিলারিকে ধরাশায়ী করার জন্য বিল ক্লিনটনের যৌন কেলেঙ্কারির প্রসঙ্গ তুলে ধরছেন।

লিন্ডন বি জনসন  

৩৬তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট লিন্ডন বি জনসনের সঙ্গে অনেকেরই প্রেমের খবর পাওয়া যায়। মেডেলিন ব্রাউন নামে একজন নারীর সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্ক ছিল তার। প্রেসিডেন্ট তাকে আর্থিকভাবে সাহায্যও করেছিলেন বলে শুনা যায়।

লিন্ডনের জীবনীকার রবার্ট ডালেক বলেন, ‘যখন মানুষ কেনেডির অসংখ্য প্রেমের কথা বলে তখন জনসন টেবিলে আঘাত করে ঘোষণা দেন, তিনি দুর্ঘটনাক্রমে অসংখ্য নারীর সঙ্গে জড়িয়ে পরেন কিন্তু কেনেডি উদ্দেশ্যমূলকভাবে তা করেন।’

ডোনাল্ড ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামেও আছে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ। ২০১৬ সালে নির্বাচনের সময় এ বিষয়ে একটি ভিডিও প্রকাশ করে মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে এক টেলিভিশন বিতর্কের দুইদিন আগে ভিডিওটি প্রকাশিত হয়। তবে তার বিরুদ্ধে একটি দুটি নয়; প্রায় এক ডজন যৌন কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠে।

এদের একজন ক্যাথি হেলার বলেন, ২০ বছর আগে ট্রাম্প তাকে জড়িয়ে ধরে জোর করে চুমু খেয়েছিলেন। এছাড়া মডেল ক্রিশ্চিন এন্ডারসন বলেছেন, ‘১৯৯০ সালে নিউইয়র্ক কাবে ট্রাম্প আমার স্কার্টের নিচ দিয়ে হাত দিয়ে শরীর স্পর্শ করেন।’ সামার জারভস বলেন, ‘চাকরির সুযোগ দেয়ার কথা বলে ট্রাম্প আমাকে যৌন হয়রানি করেছিলেন।’ জেসিকা লিডস দাবি করেন, প্রায় তিন দশক আগে একটি ফাইটে তার শরীরের আপত্তিকর সব জায়গায় স্পর্শ করেন ট্রাম্প, জাপটে ধরেছিলেন অক্টোপাসের মতো।

অবশ্য ট্রাম্প এসব অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে অভিহিত করেন। তার ভাষায়, ‘এসব কেবলই কালিমালেপন। আমার সুনাম নষ্ট করাই উদ্দেশ্য। আমাকে থামানোর ভয়ঙ্কর অপচেষ্টা। আর যারা অভিযোগ করছেন, তারা মিথ্যুক ও রোগী।’ ক্ষমতায় গেলে তাদের দেখে নেবেন বলেও হুমকি দেন তিনি।

গো নিউজ২৪/ আরএস

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর