সন্তানের জন্ম দিলো ধর্ষণের শিকার ১০ বছরের সেই মেয়ে


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১৮, ২০১৭, ০৯:৩৪ এএম
সন্তানের জন্ম দিলো ধর্ষণের শিকার ১০ বছরের সেই মেয়ে

সন্তানের জন্ম দিয়েছে আত্মীয়ের হাতে ধর্ষণের শিকার ১০ বছর বয়সের ভারতীয় মেয়েটি। এর আগে তার গর্ভপাতের অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন জানালে দেশটির সর্বোচ্চ আদালত গত মাসে ওই আবেদন খারিজ করে দেয়। ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, বর্তমানে মা ও শিশু দুইজনই সুস্থ আছে। বাচ্চটির ওজন আড়াই কেজি। চণ্ডিগড়ের একটি সরকারি হাসপাতালে সিজারের মাধ্যমে মেয়েটির ডেলিভারি করানো হয়।

বৃহস্পতিবার সন্তান জন্ম দেয়ার আগ পর্যন্ত মেয়েটি জানতো না যে সে গর্ভবতী। তাকে বলা হয়েছিল, পেটের পাথর অপসারণের জন্যই তার অস্ত্রোপচার করানো হচ্ছে।

মেয়েটিকে তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে নিযুক্ত চিকিৎসক দাসারি হারিস বলেন, ‘মেয়েটি ভালো আছে এবং সে সুস্থ হয়ে উঠছে। আমরা আশা করি, আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে সে বাড়ি ফিরতে পারবে।’ শিশুটিকে লালন-পালনের দায়িত্ব নিয়েছে ভারতের একটি চাইল্ড কেয়ার সেন্টার। আগে মেয়েটির মা-বাবা জানিয়ে দিয়েছিল, ওই শিশু তারা নেবেন না।

এর আগে দুঃসম্পর্কের এক মামার হাতে বারবার ধর্ষণের শিকার হয় ১০ বছরের এই মেয়েটি। গর্ভধারণের ৩২ সপ্তাহ পরে জানা যায় সে গর্ভবতী। ধর্ষণকারীকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তার নামে চলছে মামলা। মেয়েটির গর্ভপাতের জন্য তার মা-বাবা সুপ্রিমকোর্টে আবেদন করলেও ‘অনেক দেরি হয়ে গেছে’ বলে গত ২৮ জুলাই তা খারিজ করে দেয় আদালত।

এ নিয়ে চিকিৎসকদের একটি প্যানেলও করা হয়েছিল। তারা আদালতে পরামর্শ দেয়, এই সময়ে মেয়েটির গর্ভপাত করা হবে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। তার গর্ভের ভ্রুণটি এখনো বেঁচে আছে এবং ভালো আছে। ভারতের আইন অনুসারে, গর্ভধারণের ২০ সপ্তাহ পরে মায়ের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ না হলে গর্ভপাত ঘটানো বেআইনি। এক্ষেত্রে শুধু চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক গর্ভপাত করাতে হবে।

১০ বছরের এই মেয়েটির ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। ৩২ সপ্তাহ পরে বোঝা গেছে যে সে গর্ভবতী। পেটে ব্যাথা অনুভবের পর মায়ের কাছে বলার পর মা তাকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যায়। এরপরই ধরা পড়ে, সে গর্ভবতী। মেয়েটির মা-বাবাও বুঝতে পারেনি কোনো লক্ষণ। কারণ তাদের বাচ্চা আগে থেকেই স্বাস্থ্যবান ছিল।

মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমি চাই, তাকে ভয়াবহ শাস্তি দেয়া হোক। তার মৃত্যুদণ্ড হোক বা সারা জীবন কারাগারে রেখে দেয়া হোক তাকে। সে তার অপরাধ স্বীকার করেছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত একবারও ক্ষমা চায়নি।’

প্রসঙ্গত, যৌন সহিংসতাসহ নারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের ঘটনায় ভারত অহরহ সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ- তা সরকারি হিসাবেই বোঝা যায়। সরকারি পরিসংখ্যান মতে, দেশটিতে প্রতি ১৫ মিনিটে একটি করে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। গড়ে প্রতিদিন ৯০টি ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়। ২০১২ সালে ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বাসের ভেতর ২৩ বছরের এক তরুণীকে ছয়জন মিলে ধর্ষণের ঘটনা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। ওই ঘটনায় তরুণীটি মারা যাওয়ার পর এ নিয়েও ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছিল।

এছাড়া শিশুদের ওপর যৌন নিপীড়নের দিক থেকেও বিশ্বের শীর্ষ দেশগুলোর একটি ভারত। ভারত সরকার এবং ইউনিসেফের প্রতিবেদন অনুসারে, দেশটিতে প্রতি ১৫৫ মিনিটে ধর্ষণের শিকার হয় ১৬ বছরের কম বয়সী একটি মেয়ে। আর প্রতি ১৩ ঘণ্টায় ধর্ষণের ১০ বছরের কম বয়সী একটি মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়।

২০১৫ সালে ১০ হাজারেরও বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে। দেশটিতে বসবাসরত নারীদের ২৪ কোটি নারীর বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগে। সরকারি জরিপে অংশ নেয়া শিশুদের ৫৩ দশমিক ২২ শতাংশ জানায়, তারা কোনো না কোনোভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। নিপীড়নকারীদের ৫০ শতাংশই হচ্ছে পরিচিত, যাদের ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করা হয় বা যাদের তত্ত্বাবধানে শিশুরা থাকে।

গো নিউজ২৪/ আরএস

এ সম্পর্কিত আরও সংবাদ


আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর