তাজমহল কি আসলে শিবমন্দির?


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১১, ২০১৭, ০১:২৪ পিএম
তাজমহল কি আসলে শিবমন্দির?

ভারতে মুঘল সম্রাট শাহজাহানের অবিস্মরণীয় কীর্তি তাজমহলের ইতিহাসটা মোটামুটি সবারই জানা। স্ত্রী মমতাজ মহলের স্মৃতির উদ্দেশ্যেই তাজমহল নির্মাণ করেছিলেন তিনি। তবে এবার বিখ্যাত এই স্থাপত্য নিয়েও প্রশ্ন তুলতে ছাড়লো না মোদি সরকার। তাজমহল কি আসলেই মমতাজের স্মৃতির উদ্দেশ্যে নির্মিত, নাকি বিশ্বের এই অন্যতম আশ্চর্য স্থাপনাটি একটি শিব মন্দির- এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন (সিআইসি)।

বিভিন্ন ভারতীয় গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে তার অবস্থান স্পষ্ট করার নির্দেশ দিয়েছে সিআইসি। ইতিহাসে এই বিতর্কের সমর্থনে কোনো প্রমাণ না পাওয়া গেলেও তাজমহলকে আদতে শিবমন্দির দাবি করে আদালতেরও দ্বারস্থ হয়েছেন কেউ কেউ। তথ্য জানার অধিকার আইনে ভারতের কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের কাছে এ বিষয়ে আবেদন জমা পড়েছে। আর তাই এই বিতর্কের মীমাংসা চেয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে স্পষ্ট বক্তব্য রাখার কথা জানিয়েছেন দেশটির তথ্য কমিশনার শ্রীধর আচারিয়ালু।

সম্প্রতি বিকেএসআর আয়ানগর নামে এক ভারতীয় নাগরিক আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কাছে জানতে চায়, তাজমহলের আসল নাম তেজো মহালয়া কিনা, যা সম্রাট শাহজাহানকে রাজপুত রাজা মান সিং উপহার দিয়েছিলেন। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার কাছে এ বিষয়ে যা তথ্য আছে এবং এই সংক্রান্ত যত মামলা হয়েছে, তার এফিডেফিটও জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশন।

সতেরো শতকের নির্মাণ শিল্পের বিস্তারিত রিপোর্টও চাওয়া হয়েছে। তবে তার জন্য তাজমহলের যে কক্ষগুলো বন্ধ অবস্থায় রয়েছে, তা খোলা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তথ্য কমিশনার শ্রীধর আচারিয়ালু। তাজমহলের সুরক্ষিত অংশে অতীতে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার পক্ষে থেকে কোনো খননকাজ হয়ে থাকলে তার বিস্তারিত রিপোর্ট জমা দেয়ারও নির্দেশ দিয়েছে সিআইসি।

এর আগে রামমন্দির দাবি তুলে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর উত্তরপ্রদেশে মুঘল আমলের আরেক বিখ্যাত স্থাপনা বাবরি মসজিদ ধ্বংস করে দেয় মৌলবাদী হিন্দুরা। ভারতীয় হিন্দুদের একটি অংশ মনে করে, ওই জায়গাটি হচ্ছে তাদের দেবতা রামের জন্মভূমি। তাদের ধারণা, যেখানে মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছে, সেখানে আগে রাম মন্দির ছিল। এ নিয়ে প্রথমে ধর্মীয় বিতর্ক শুরু হলেও পরে তা রাজনৈতিক রূপ পায়। এ নিয়ে ভারতে হয় সম্প্রদায়িক দাঙ্গা। এতে নিহত হয় অন্তত ২ হাজার মানুষ। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ঘটনা মূলহোতা লালকৃষ্ণ আদভাণী,মন্ত্রী উমা ভারতী ও মুরলী মনোহরের মতো শীর্ষ বিজেপি নেতারা। বর্তমানে তাদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে।

প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরেই মুঘলসহ অন্য মুসলিম শাসকদের ভারতের ইতিহাস থেকে বাদ দেয়ার দাবি তুলে আসছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল বিজেপি ও মৌলবাদী সংগঠন আরএসএস। এর আগে মুঘল আমলের ইতিহাস বিকৃত করেছে রাজস্থান সরকার। বিজেপি শাসিত এই রাজ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হচ্ছে, ‘হলদিঘাটে যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলেন মেবারের রাণা প্রতাপ সিংহ। আর পরাজিত হয়েছিলেন মুঘল সম্রাট আকবর।’

অথচ ইতিহাসে দেখা যায়, ১৫৫৬ সাল থেকে ১৬০৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৪৯ বছর ভারতের সম্রাট ছিলেন আকবর। এই সময়ে মুঘল সাম্রাজ্য উত্তরে কাবুল ও কাশ্মীর থেকে পূর্বে বাংলাদেশ ও দক্ষিণে গোদাবরী নদী পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল। তার সময়ে রাজপুতদের হাতে রেখে রাষ্ট্র শাসন করতে চেয়েছিলেন আকবর। কিন্তু তাতে বাধা দেন মেবারের রাণা প্রতাপ সিংহ। ১৫৭৬ সালে হলদিঘাটের মাঠে আকবরের সঙ্গে তার যুদ্ধ হয় এবং প্রতাপের ক্ষুদে বাহিনী হেরে যায়।

কিছুদিন আগে উর্দু ভাষার বিখ্যাত কবি মির্জা গালিবের কবিতা পাঠ্যবই থেকে বাদ দেয়ার দাবি তুলেছে আরএসএস। দেশটির প্রখ্যাত ইতিহাস গবেষক কিশোর দারাক বলেন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ইচ্ছাকৃতভাবে ইতিহাসকে বিকৃত করা চেষ্টা করছে মহারাষ্ট্র সরকার। হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে মুসলিম শাসকদের ইতিহাস বিকৃত করতে চাইছে।

সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের অষ্টম ও নবম শ্রেণির ইতিহাস পাঠ্যবই সংশোধন করেছে তারা। সংশোধিত পাঠ্যবইয়ে মুঘল সাম্রাজ্য সম্পর্কে কার্যত কোনো তথ্যই নেই। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর ভারত শাসন করা এই রাজবংশটির ইতিহাস লেখার জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে কেবল তিনটি লাইন। মুঘল সাম্রাজ্যের বদলের ইতিহাসের পাঠ্যবইয়ে ঢোকানো হয়েছে মারাঠা সাম্রাজ্যের ইতিহাস। এছাড়া আলাউদ্দিন খিলজি, রাজিয়া সুলতানা আর শেরশাহের মতো ঐতিহাসিক চরিত্রগুলো বাদ দেয়া হয়েছে ইতিহাসের পাঠ্যবই থেকে।

গো নিউজ২৪/ আরএস

এ সম্পর্কিত আরও সংবাদ


আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর