‘তারা জানত আমি গর্ভবতী, কিন্তু তাতেও দমেনি তারা’


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ২৬, ২০১৭, ০৫:২২ পিএম
‘তারা জানত আমি গর্ভবতী, কিন্তু তাতেও দমেনি তারা’

রোহিঙ্গা মুসলিম নারী আয়মার বাগন। বার্তা সংস্থা এএফপির কাছে একটি স্বাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে তিনি জানান, ‘সন্তান প্রসবের মাত্র কয়েকদিন আগে আমাকে ধর্ষণ করা হয়। আমার তখন নয় মাস চলছিল। তারা জানত আমি গর্ভবতী, কিন্তু তাতেও দমেনি তারা,’ ছোট্ট একটি কন্যা শিশুকে কোলে নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন তিনি।

গতবছর নতুন করে শুরু হওয়া মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় ধর্ষণের শিকার হওয়া রোহিঙ্গা নারীরা যে নতুন সামাজিক সমস্যায় পড়েছেন- এই বক্তব্য সেদিকেই ইঙ্গিত করে। সেনা অভিযানের সময় পুরুষশুন্য হয়ে পড়া গ্রামগুলোতে ধর্ষণের শিকার হওয়া নারীদের অনেককেই পরিত্যাগ করেছে তাদের স্বামীরা। 

বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিনিধির বরাতে সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলা-এর এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রোহিঙ্গা নারীদের এই দুর্দশার চিত্র।

এতে বলা হয়, সম্প্রতি মিয়ানমারের সরকারের পরিচালিত একটি সফরে যাওয়া বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিনিধির কাছে এই অভিযোগ করেছেন রোহিঙ্গা নারীরা। রাখাইন রাজ্যে সাংবাদিক প্রবেশের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপের মধ্যে কয়েক দফায় নিজেদের ব্যবস্থাপনায় ওই রাজ্যে সাংবাদিকদের নিয়ে যায় মিয়ানমার সরকার। সরকারি লোকজনের চোখ এড়িয়ে ধর্ষণের শিকার এসব রোহিঙ্গা নারীর সঙ্গে কথা বলেন এএফপির ওই প্রতিনিধি। 

আয়মার বাগন নামে মুসলিম রোহিঙ্গা নারী ওই সাংবাদিককে বলেছেন, নয় মাসের গর্ভাবস্থায় সেনাসদস্যদের ধর্ষণের শিকার হন তিনি। পরে স্বামী ফিরে আসলে এই ঘটনা জেনে তাকে ছেড়ে চলে গেছেন। এখন অন্য গ্রামে গিয়ে আরেক নারীকে বিয়ে করে সংসার করছেন তার সাবেক স্বামী। রাখাইনের কায়ার গং টং নামে একটি গ্রামের বাসিন্দা ২০ বছর বয়সী আয়মার এখন অন্যের সাহায্যে জীবন-ধারণে বাধ্য হচ্ছেন। 

গতবছর মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে নতুন করে অভিযান শুরু করে মিয়ানমার সেনাবাহিনী। পরের কয়েকমাসে দেশটির ওই এলাকা থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অন্তত ৭০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। এই অভিযানকে মানবতাবিরোধী অপরাধের সমান বলে আখ্যা দেয় জাতিসংঘ। 

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অনেক রোহিঙ্গা নারী আন্তর্জাতিক তদন্ত দলগুলোর কাছে অভিযোগ করেছেন সেনা অভিযানের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন তারা। এবার মিয়ানমারে থেকে যাওয়া নারীদের কাছ থেকেও এমন অভিযোগ শুনতে পাচ্ছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।

আয়মার বাগনের মতো গত ডিসেম্বরে তিন সৈন্যের কাছে ধর্ষণের শিকার হন দুই সন্তানের মা হাসিন্নার বায়গন। এনিয়ে স্বামীর কাছ থেকে ত্যাগের হুমকির মধ্যে রয়েছেন তিনি।

অবশ্য আন্তর্জাতিক মহলের যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার সরকার। সেনাবাহিনীর এক তদন্ত রিপোর্টের বরাতে গত মে মাসে সেনা সদস্যদের রাখাইন রাজ্যে সব ধরনের হত্যা ও ধর্ষণের অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়।

গো নিউজ২৪/এএইচ

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর