পেঁয়াজের কেজি ২ টাকা


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ১২, ২০২৩, ১০:৩৬ পিএম
পেঁয়াজের কেজি ২ টাকা

ভারতের মহারাষ্ট্রে এবছর পেঁয়াজের অতিরিক্ত ফলন হয়েছে। তবে এতে খুশি হওয়ার বদলে বিপাকে পড়েছেন সেখানকার কৃষকরা। কারণ, বাড়তি ফলনের কারণে এ বছর খরচের অর্ধেকও দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। আর এতে ক্ষোভে-কষ্টে নিজের ক্ষেতের পেঁয়াজ পুড়িয়ে দিচ্ছেন কৃষকরা।

বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের দাম এতোটাই কমে গেছে যে কৃষকরা প্রতি কেজি মাত্র দু-তিন টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। এমন অবস্থায় অনেক কৃষক ক্ষেতেই তাদের ফসল নষ্ট করে দিচ্ছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- আলু, টমেটো সহ বিভিন্ন সবজির কৃষকরা এবছর ফসল নষ্ট করে ফেলছেন বাধ্য হয়ে।

মহারাষ্ট্রের নাসিক জেলার কৃষক কৃষ্ণ ডোংরে এবার সপরিবারে তার পেঁয়াজ চাষের জমিতে হোলিকা দহন ‘অনুষ্ঠান’ করেছিলেন। তার সেই ‘অনুষ্ঠান’-এর ছবিসহ খবর বেশ কিছু জাতীয় সংবাদপত্রে ছাপানো হয়েছে। সামাজিক মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছিল সেই ‘দহন’ এর ছবি।

একজন কৃষকের পারিবারিক ‘অনুষ্ঠান’ জাতীয় স্তরের সংবাদপত্রে এ কারণে উঠে আসার কারণ হচ্ছে, তিনি আসলে খড়কুটার বদলে ‘হোলিকা দহন’ করেছেন নিজের ক্ষেতের প্রায় ১৫ হাজার কেজি পেঁয়াজ পুড়িয়ে দিয়ে।

কৃষ্ণ ডোংরে বলেন, ‘পেঁয়াজের দামের যা অবস্থা তাতে হয়তো বা আত্মহত্যাই করতে হতো। সেটা করতে পারলাম না, তাই হাতে গড়া ফসলটাই শেষ করে দিলাম।’

এ বছর মহারাষ্ট্রে পেঁয়াজের ফলন এত বেশি হয়েছে, যে কৃষকরা প্রতি কেজি মাত্র দুই বা তিন টাকা দর পাচ্ছিলেন দু'দিন আগে পর্যন্তও। চাষের খরচ তো তাতে উঠছেই না, উল্টে আড়তে পৌঁছে দিতে গেলে তাদের লোকসানের বোঝা আরও বাড়বে। তাই ক্ষেতের পেঁয়াজ নষ্ট করে ফেলছেন কৃষকরা।

কৃষ্ণ ডোংরে যেমন পুড়িয়ে ফেলেছেন ক্ষেতের পেঁয়াজ, তেমনই ট্র্যাক্টর চালিয়ে ফসল নিজেই নষ্ট করে দিয়েছেন নাসিকের নাইপালা গ্রামের কৃষক রাজেন্দ্র বোঢ়গুঢ়ে।

বোঢ়গুঢ়ে বলেন, ‘তিন একর জমিতে পেঁয়াজ চাষ করেছিলাম এই মওসুমে। পেঁয়াজ মণ্ডিতে আড়ৎদারের কাছে পৌঁছিয়ে দেওয়া পর্যন্ত এক লাখ দশ হাজার টাকা মতো খরচ হয় প্রতি একরের ফসলে।এক একরে ১৫০ কুইন্টাল তো হয়, ভাল ফলন হলে ১৭০-৮০ কুইন্টালও হয়। সেই হিসাব যদি করেন, তাহলে এক একরের ফসল থেকে গড়ে আমি দাম পাচ্ছি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা, আমার খরচের অর্ধেক। তো সেই ফসল আড়ত-এ পৌঁছিয়ে দেওয়ার জন্য আরও বাড়তি খরচ করে লোকসানের বোঝা বাড়াবো নাকি আমি?’

কেন এই পরিস্থিতি?

ভারতের মহারাষ্ট্রই এক সময় ছিল পেঁয়াজ চাষের মূলকেন্দ্র। কিন্তু বেশ কয়েক বছর যাবত মধ্যপ্রদেশ আর গুজরাতেও পেঁয়াজ চাষ শুরু হয়েছে। তার ফলে মার খাচ্ছেন মহারাষ্ট্রের পেঁয়াজ চাষীরা।

মহারাষ্ট্রের নাসিকই সবচেয়ে বড় পেঁয়াজ বিপণন কেন্দ্র। সেখানেই পেঁয়াজের আড়ত হীরামন পরদেশির।

হীরামন পরদেশি বলেন, ‘আগে শুধু মহারাষ্ট্র আর অন্ধ্র প্রদেশেই পেঁয়াজের মূল চাষটা হতো। কিন্তু এখন মধ্যপ্রদেশ আর গুজরাতের চাষিরাও ভাল পেঁয়াজ চাষ করছেন। গুজরাতে তো পেঁয়াজ চাষীদের জন্য সেখানকার সরকার অনুদানও দিয়েছে এবার। আর আমাদের পেঁয়াজের যে বাজার ছিল, সেটা গুজরাত, মধ্যপ্রদেশ ধরে নিয়েছে অনেকটা। তাই এখানকার চাষীরা মার খাচ্ছে।’

তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে পর্যন্তও চাষিরা কুইন্টাল প্রতি (এক কুইন্টাল ১০০ কেজির সমান) তিনশত বা চারশত টাকা দাম পেয়েছেন। হোলির পরে বৃহস্পতিবার থেকে আবার বাজার খোলার পরে দাম সামান্য কিছুটা বেড়ে হয়েছে কুইন্টাল প্রতি প্রায় সাতশত টাকা। কিন্তু তাতেও চাষীদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচানো যাবে না।

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পেঁয়াজ উত্তর আর পূর্ব ভারতে চালান হতো বড় পরিমাণে। কিন্তু গুজরাত আর মধ্যপ্রদেশ থেকে উত্তরভারতের বিভিন্ন জায়গায় পেঁয়াজ পরিবহনের খরচ অনেকটাই কম লাগে দূরত্বের কারণে। তাই আমাদের থেকে কম দামে ওখানকার চাষিরা পেঁয়াজ সরবরাহ করতে পারছে।’

হীরামন পরদেশি বলেন, ‘এদিকে দুবাই হয়ে পাকিস্তানে যেত আমাদের পেঁয়াজ, শ্রীলঙ্কাতেও রপ্তানি হতো। কিন্তু ওই দুটো দেশের যা অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, সেখানে আর পেঁয়াজ পাঠানোর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না ব্যবসায়ীরা।’

আবার বাংলাদেশেও ভারতীয় পেঁয়াজের রপ্তানিও কমে গেছে। তাই সবমিলিয়ে চাষিরা ক্ষোভে-কষ্টে নিজের ফসল পুড়িয়ে ফেলছেন।

আন্তর্জাতিক বিভাগের আরো খবর