শীতের আগেই করোনা থেকে পরিত্রাণের সম্ভাবনা আছে


নিউজ ডেস্ক প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০২০, ১২:১৫ পিএম
শীতের আগেই করোনা থেকে পরিত্রাণের সম্ভাবনা আছে

দেশে করোনাভাইরাসের গতিবিধি নিয়ে যারা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন, তাদের একজন ড. বিজন কুমার শীল। বিজ্ঞানী ও গবেষক ড. বিজন প্রথম আলোচনায় এসেছিলেন ছাগলের রোগ প্রতিরোধক টিকা আবিষ্কার করে। তিনি বিশ্বজুড়ে সাড়া ফেলেছিলেন ২০০৩ সালে সিঙ্গাপুরে ছড়ানো সার্স ভাইরাস শনাক্তের কিট উদ্ভাবন করে। এবার তার নেতৃত্বে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র করোনা শনাক্তে র‌্যাপিড ডট ব্লট কিট উদ্ভাবন করেছে।

তবে এখনও তা সরকারের অনুমোদন পায়নি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) তাদের কিটের সক্ষমতা যাচাই হলেও, তার ভিত্তিতে উৎপাদন, বাজারজাতকরণের অনুমতি দেয়নি সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর। তারা পুনরায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের উদ্ভাবিত কিটের সক্ষমতা যাচাইয়ের সুপারিশ করেছে।

তাদের উদ্ভাবিত কিট, দেশে করোনার গতিবিধির খুঁটিনাটি বিষয়ে দেশের একটি শীর্ষ অনলাইনের কাছে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন কিট উদ্ভাবক দলের প্রধান বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল।

দেশের করোনা পর্যবেক্ষণ নিয়ে ড. বিজন বলেন, করোনার সর্বোচ্চ সংক্রমণ কিংবা সর্বনিম্ন সংক্রমণ নির্ভর করবে এলাকাভিত্তিক। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে এক প্রদেশে পিক হচ্ছে, আরেক এলাকায় শুরু হচ্ছে। যার জন্য সারাদেশের সর্বোচ্চ সংক্রমণের চিত্র দিতে পারছে না তারা, তবে ইউরোপের দেশগুলো পেরেছিল। আমার মনে হয়, ঢাকা শহরে সর্বোচ্চ সংক্রমণ পার হয়ে গেছে। এখন সংক্রমণ কমার মধ্যে আছে। আমাদের সামান্য গবেষণায় পেয়েছি, অসংখ্য মানুষের মধ্যে ইমিউনিটি (করোনা প্রতিরোধ ক্ষমতা) এসেছে। যদি কোনো পরিবারের একজন করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকে, ওই পরিবারের বাকিদের মধ্যে হরাইজেন্টালি স্পিড (আনুভূমিক সংক্রমণ) করেছে। যেটাকে বলা হয়, মাইল ইনফেকশন (করোনার মৃদু উপসর্গ দেখা যাওয়া) হয়ে তাদের মধ্যে অ্যান্টিবডি ডেভেলপ করেছে। এ জাতীয় মানুষের সংখ্যা অসংখ্য।

তিনি বলেন, আপনি একটা হিসাব করে দেখবেন, এ যাবৎ কতগুলো কল এসেছে। করোনা সাসপেক্টেড (সন্দেহভাজন) বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হটলাইনে কল এসেছে। কত কোটি এসেছে। ওই কোটির সাথে আপনি চার দিয়ে গুণ দেন। তাহলে কত হয়, দেখেন। এটাই হচ্ছে মানুষের টোটাল এক্সপোজার (মোট আক্রান্ত)। তারা কিন্তু ইতোমধ্যে অ্যান্টিবডি ডেভেলপ করেছে। যে সময়টা মানুষের মধ্যে এই ধরনের সমস্যা হয়েছে, তাদের মধ্যে কম-বেশি সবার মধ্যে ইনফেকশন ছিল। আগে থেকেই যাদের শারীরিক সমস্যা ছিল, তাদের বেশি হয়েছে। যাদের সমস্যা ছিল না, তাদের খুব কম হয়েছে বা একেবারেই উপসর্গ দেখা যায়নি। পরিবারের একজনের হলে বাকিদের মধ্যে হরাইজেন্টালি ট্রান্সমিট (আনুভূমিক সংক্রমণ) করেছে। যার একবার হয়েছে, সে মাস্ক পরা শুরু করেছে। পরিবারের সবাই তখন মাস্ক পরা শুরু করেছে। তখন দেখা গেছে, ভাইরাসটা ট্রান্সমিশন হয়েছে, কিন্তু খুব কম, সামান্য পরিমাণে। কিন্তু সেটা আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে স্টিমুলেট (চাঙ্গা) করেছে এবং অ্যান্টিবডি বেরিয়ে এসেছে। সেটা কম হোক আর বেশি হোক, কিন্তু হইছে।

আমরা এটা পর্যবেক্ষণে পেয়েছি। গতকাল একটা পরিবারের স্যাম্পল দেখলাম- প্রথমে একজন পিসিআরে করোনা পজিটিভ ছিল, বাকি ৮ জনের মধ্যে অ্যান্টিবডি চলে এসেছে। হয়তো আপনি অনুভব করেন যে, মাথাব্যথা হচ্ছে বা একটু পেটে সমস্যা, সামান্য কাশি- পরে সেরে গেছে। এই সংখ্যা কিন্তু বাংলাদেশে এখন অনেক। তারা কিন্তু আমাদের দেশের ভাইরাসকে ইরাডিকেট (ধ্বংস) করতে সাহায্য করবে। কারণ এই মানুষগুলোর মধ্যে ভাইরাস আর গ্রো (টিকতে না পারা) করতে পারবে না। না করতে পারলে ভাইরাস কিন্তু আস্তে আস্তে বিলীন হয়ে যাবে।

সারাদেশে শূন্যের কাছাকাছি যেতে কত দিন লাগতে পারে? এমন প্রশ্নের জবাবে বিজন কুমার শীল বলেণ,  ঢাকায় পিক আসতে প্রায় চার মাস বা ১৮ সপ্তাহ সময় লেগেছে। নামতে প্রায় ১০ থেকে ১১ সপ্তাহ লাগবে। এটা হয়তো এক এলাকায়। আরেক এলাকায় হয়তো অন্যরকম চিত্র হতে পারে। তাই এটা সমন্বয় করতে পারবেন না। ঠিক যেমন যুক্তরাষ্ট্রে হচ্ছে। সেখানে একটা রাজ্যে হয়ে যাচ্ছে, পরে আরেকটা স্টেটে শুরু হচ্ছে। ওই রাজ্যকে বলতে হবে, কোনটা পিক আর কোনটা অফপিক। ফলে দেশের অন্যান্য অঞ্চলে বাড়তে পারে। ওইসব অঞ্চলও একসময় সর্বোচ্চে পৌঁছবে আবার নেমে আসবে। হার্ড ইমিউনিটি না আসা পর্যন্ত এটা চলতেই থাকবে। সুখবর এটাই যে, যারা এক্সপোজারে (সংক্রমণে) আসছে, কম পরিমাণে লক্ষণ হচ্ছে। অনেকে জানেও না, তার মধ্যে অ্যান্টিবডি এসেছে। এটা একটা ভালো দিক। এছাড়া আবার কিছু কিছু জায়গায় পিক হবে। সামনে ঈদ আসছে, এ সময় কিছু ভাইরাস ছড়াবে আবার। যেখানে করোনা হয়নি, সেখানে হবে। সবমিলিয়ে পিকে উঠতে যদি ১৮ সপ্তাহ লাগে, নামতেও প্রায় ১৫ সপ্তাহ লাগবে।

তিনি আরও বলেন, আমার মনে হয়, শীতের আগেই পরিত্রাণ পাওয়ার সম্ভাবনা আছে। মানে ওইরকম হবে না। নির্দিষ্ট এলাকায় থাকতে পারে, যে এলাকায় একেবারে করোনা হয়নি। তবে মোটামুটি মানবসমাজকে বিচ্ছিন্ন করে চলে যাবে করোনা- আমাদের দেশ হোক আর অন্য দেশ হোক। যেমন যুক্তরাষ্ট্রে একটা রাজ্য থেকে আরেকটা রাজ্য অনেক দূরত্ব। এই দূরত্ব অতিক্রম করতে তো সময় লেগেছে। ওই জায়গায় সংক্রমণের স্থায়িত্বকাল বেশি হবে। আমরা সেই সমস্যা হবে না, কারণ আমরা খুব কাছাকাছি বাস করি।

গোনিউজ২৪/এন

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর