বৈধ চালকের অভাবে গণপরিবহন সংকট, ধর্মঘটের কূটচাল


নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: নভেম্বর ২০, ২০১৯, ০৩:৫০ পিএম
বৈধ চালকের অভাবে গণপরিবহন সংকট, ধর্মঘটের কূটচাল

সড়কের নতুন আইন সংশোধনের দাবিতে ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন বন্ধ। পরিবহন সংকটে দুর্ভোগে পড়েছেন রাজধানীর বাসিন্দারা। বুধবার সকাল থেকেই রাজধানীর বাসস্ট্যান্ডে, সড়কের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীদের বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। অনেকে রিকশায়, ভ্যানে বা বিকল্প পন্থায় কর্মস্থলে গেছেন। অবশ্য বিকেলের দিকে অল্প সংখ্যক বাস চলতে শুরু করেছে।

পরিবহন শ্রমিকরা বলছেন, নতুন সড়ক আইনের প্রতিবাদে ধর্মঘট চলছে। শুধু মাত্র ট্রাক এবং কাভার্ট ভ্যানে পণ্য পরিবহনে ধর্মঘটের ঘোষণা থাকলেও গণপরিবহন ধর্মঘটের নির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা নেই। তবুও চলছে না বাস। এর কারণ কি?

সাধারণ জ্ঞানে যেটা মনে হচ্ছে, বৈধ চালক এবং সকল বাসের সঠিক কাগজপত্র না থাকায় সড়কে বাস নামাতে পারছেন না মালিকরা। বিষয়টিকে অঘোষিত ধর্মঘট হিসেবে চালানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

আরো পড়ুন<<>>সড়কে কার্যকর নতুন আইন, কোন অপরাধে কেমন সাজা?

সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, দেশে এ মুহূর্তে চলাচল করা বাস, মিনিবাস ও হিউম্যান হলারসহ মোট নিবন্ধিত যানবাহনের সংখ্যা ৩১ লাখ ৪৯ হাজার ৩৭৯। এর বিপরীতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত চালক আছে প্রায় ২০ লাখ। আর বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে বাংলাদেশে ট্রাক-বাস-মিনিবাসসহ যানবাহন চলছে ৪০ লাখের ওপরে। তাদের বক্তব্য, মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনিবন্ধিত গাড়ির হিসাব দেশের কোনো সংস্থার কাছেই নেই। ৪০ লক্ষাধিক যানবাহন রাস্তায় চালাতে প্রতিটি গাড়ির জন্য একাধিক চালক প্রয়োজন। সেই হিসাবে এসব যানবাহন চালাতে অন্তত ৮০ লাখ চালক প্রয়োজন। বৈধ ২০ লাখের মধ্যে অনেকেই মারা গেছে। আবার অনেকে এখন আর গাড়ি চালান না। 

এরই প্রভাব পড়েছে সড়কে। আর ভুগছে সাধারণ মানুষ। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য বলছে, ঢাকা মহানগরীতে ২০ লাখ নিবন্ধিত মোটরযানের বিপরীতে চালক রয়েছেন মাত্র ১৪ লাখ। একইভাবে লক্ষাধিক ভারী মোটরযানের বিপরীতে এগুলোর লাইসেন্সধারী চালক রয়েছেন মাত্র ২১ হাজার। অন্যদিকে সাড়ে ৫ লাখ হাল্কা মোটরযানের বিপরীতে লাইসেন্সধারী চালকের সংখ্যা ৪ লাখের সামান্য বেশি।

এতদিন রাস্তায় অনেক গাড়িই চালাছিলেন হেলপাররা। যাদের বেশির ভাগের বয়স ১৫ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে। অথচ আইন অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে একজন পেশাদার চালকের বয়স হতে হয় কমপক্ষে ২০ বছর। যার কোনোটি না থাকা সত্ত্বেও গাড়িভর্তি যাত্রী নিয়ে চলছে এসব কিশোর চালক। 

কিন্তু বর্তমান আইনে এসকল অদক্ষ-অবৈধ চলক দিয়ে গাড়ি চালাতে গেলে বড় ধরণের জরিমানায় পড়তে হবে। সেজন্য সড়কে গাড়ি নামাতে চাচ্ছেন না মালিকরা। যা কিনা ধর্মঘটের রূপ নিয়েছে। 

এই সমস্যা স্বল্প সময়ে সমাধান হবার নয়। এজন্য বিআরটিএ-কে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। লাইসেন্স প্রাপ্তিতে দীর্ঘসূত্রিতা কমাতে হবে সেইসঙ্গে যে সকল গণপরিবহনের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে তাদেরকে বাড়তি কোনো সুবিধা দেয়া যায় কি না সেটা ভেবে দেখতে হবে। 

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর