ভারত-পাকিস্তান : সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?


নিউজ ডেস্ক: প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯, ১০:৩৭ পিএম
ভারত-পাকিস্তান : সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে?

গত কয়েকদিন ধরে কাশ্মির ইস্যুকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজ করছে ভারত এবং পাকিস্তানের মধ্যে। কাশ্মীরের পুলওয়ামায় হামলা চালিয়ে ভারতের বিশেষায়িত বাহিনী সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) ৪৪ সদস্য হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক।

ঘটনার পর একদিকে ভারতের সেনাবাহিনীকে প্রয়োজনে যে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলে দিয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। অন্যদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারতের প্রত্যাঘাত ঠেকানোর নানা প্রস্তুতি পাকিস্তান নিয়ে রেখেছে। 

তাহলে কী যুদ্ধ আসন্ন? যদি তাই হয় তবে কী পরিণতি হবে ?

এমন অবস্থায় দেশ দুটির বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যের উপর ভিত্তি করে পাঠকদের জন্য ভারত-পাকিস্তানের সামরিক শক্তির তুলনা তুলে ধরা হল।

ভারতের লোক সংখ্যা প্রায় ১২৫ কোটি। এ বিশাল জনসংখ্যার মধ্যে তাদের সামরিক বাহিনীতে নিয়মিত সেনা রয়েছে সোয়া ১৩ লাখ। সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল রয়েছে আরো ২১ লাখ ৪৩ হাজার।

অন্যদিকে পাকিস্তানের লোকসংখ্যা প্রায় ২০ কোটি। নিয়মিত সেনা রয়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার। সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনবল রয়েছে আরো ৫ লাখ ১৫ হাজার।

সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে

ভারতের সর্বমোট বিমান রয়েছে দুই হাজার ৮৬টি। এছাড়াও দেশটির রয়েছে ৬৪৬টি হেলিকপ্টার, ১৯টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার, ৮০৯টি নির্ধারিত পাখাযুক্ত অ্যাটাক বিমান, ৬৭৯টি যুদ্ধ বিমান, ৩১৮টি প্রশিক্ষণ বিমান এবং ৮৫৭টি ট্রান্সপোর্ট বিমান। দেশটির ৩৪৬টি ব্যবহারযোগ্য বিমানবন্দর রয়েছে।

অন্যদিকে পাকিস্তানের সব মিলিয়ে ৯২৩টি বিমান রয়েছে। এছাড়াও দেশটির ৩০৬টি হেলিকপ্টার, ৫২টি অ্যাটাক হেলিকপ্টার, ৩৯৪টি নির্ধারিত পাখাযুক্ত অ্যাটাক বিমান, ৩০৪টি যুদ্ধ বিমান, ১৭০টি প্রশিক্ষণ বিমান এবং ২৬১টি ট্রান্সপোর্ট বিমান রয়েছে। দেশটির ১৫১টি ব্যবহার যোগ্য বিমানবন্দর রয়েছে।

ভারতের হাতে রয়েছে ছয় হাজার ৪৬৪টি ট্যাংক, ছয় হাজার ৭০৪টি আর্মার্ড ফাইটার ভেহিক্যাল, ২৯০টি সেল্ফ প্রপেল্ড গান, সাত হাজার ৪১৪টি টানা কামান এবং ২৯২টি মাল্টিপল লাঞ্চার রকেট সিস্টেম।

পাকিস্তানের হাতে রয়েছে দুই হাজার ৯২৪টি ট্যাংক, দুই হাজার ৮২৮টি আর্মার্ড ফাইটার ভেহিক্যাল, ৪৬৫টি সেল্ফ প্রপেল্ড গান, তিন হাজার ২৭৮টি টানা কামান এবং ১৩৪টি মাল্টিপল লাঞ্চার রকেট সিস্টেম।

ভারতের ৩৪০টি মার্চেন্ট মেরিন জাহাজ রয়েছে। প্রধান সমুদ্রবন্দর রয়েছে সাতটি। এছাড়া দুটি বিমানবাহী ক্যারিয়ার, ১৪টি সাবমেরিন, ১৪টি ফ্রিগেট, ১০টি ডেস্ট্রয়ার, ২৬টি কর্ভাটি, ছয়টি মাইন ওয়ারফেয়ার ক্রাফ্ট এবং ১৩৫টি পেট্রোল ক্রাফট রয়েছে।

পাকিস্তানের রয়েছে ১১টি মার্চেন্ট মেরিন জাহাজ। প্রধান সমুদ্রবন্দর রয়েছে দুটি। এছাড়া পাঁচটি সাবমেরিন, ১০টি ফ্রিগেট, তিনটি মাইন ওয়ারফেয়ার ক্রাফ্ট এবং ১৩৫টি পেট্রোল ক্রাফট।

এদিকে পাকিস্তান পারমাণবিক ক্ষেত্রে ক্রমাগত এগিয়ে যাচ্ছে। গত বছরের শেষ দিকে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ কথা বলেছে।

প্রায় একই সময়ে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, চাইলে এখনই ২০০০ পরমাণু বোমা বানাতে পারে ভারত! সঙ্গে ইতোমধ্যেই প্রস্তুত দূরপাল্লা এবং মাঝারি পাল্লার অগুনিত ভয়ঙ্কর ক্ষেপণাস্ত্র। ভারতের হাতে পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রায় এক টন প্লুটোনিয়াম রয়েছে। রিঅ্যাক্টর গ্রেড প্লুটোনিয়াম রয়েছে আরও ১৫ টন। পারমাণবিক অস্ত্র ভাণ্ডার বিপুল হারে বাড়ানোর জন্যই ভারত এত প্লুটোনিয়াম মজুত করেছে বলে আশঙ্কা পাকিস্তানের।

কিছু দিন আগে প্রকাশিত একটি মার্কিন রিপোর্ট অনুযায়ী, পাকিস্তান যে ভাবে পরমাণু অস্ত্র বানাচ্ছে, তাতে ১০ বছরের মধ্যেই তাদের পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার হয়ে উঠবে বিশ্বে তৃতীয় বৃহত্তম।

সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে

পাকিস্তানের ১২০টিরও বেশি পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। এ হারে পারমাণবিক অস্ত্র বানানো বাড়তে থাকলে দেশটি আগামী এক দশকের মধ্যে পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হিসেবে বিশ্বে তৃতীয় স্থান অধিকার করবে। এই অবস্থা যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়াকে অতিক্রম করতে না পারলেও চীন, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনকে ছাড়িয়ে যাবে। বর্তমানে পাকিস্তানের কাছে যে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে, তা ভারতের চেয়েও বেশি।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ‘দ্য কার্নেগি এনডোমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস এবং দ্য স্টিমসন সেন্টার’ এর বরাত দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট জানিয়েছে, ভারতকে পরোয়া না করেই পাকিস্তান পারমাণবিক বোমার উন্নয়ন কাজে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটি প্রতিবছর ২০টি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে সক্ষম।

এদিকে বিশ্লেষকদের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এক হিসাবে পাকিস্তানের এখন ১২০টি ওয়্যারহেড আছে, আর ভারতের আছে ১০০টির কাছাকাছি। প্রকৃতপক্ষে পারমাণবিক শক্তিতে পাকিস্তান ভারতকে ছাড়িয়ে যাওয়ার কারণ পাকিস্তানের আছে ইউরেনিয়ামের সমৃদ্ধ মজুত। পাকিস্তানের তুলনায় ভারতের অনেক বেশি প্লুটোনিয়ামের মজুত থাকলেও এর বেশিরভাগ অংশই ব্যয় হয় দেশটির অভ্যন্তরীণ বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজে।

উৎক্ষেপণ প্রযুক্তির অগ্রগতি, চারটি চলমান প্লুটোনিয়াম রিএ্যাক্টর ও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ অব্যাহত থাকায় আগামী ১০ বছরে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রের পরিমাণ আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হয়েছে।

সামরিক শক্তিতে কে এগিয়ে

বিভিন্ন পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নির্মাণে স্বনির্ভরতা অর্জনে ভারত সরকার ১৯৮৩ সালে সুসংহত নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেয়। এই কর্মসূচির আওতায় দেশটির নির্মিত প্রথম ক্ষেপণাস্ত্র হল ‘পৃথ্বী’। সামরিক ক্ষেপণাস্ত্র বলে পৃথ্বী পারমাণবিক ওয়ারহেডও বহন করতে সক্ষম।

প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার পাল্লার বিধ্বংসী পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে ভারত। ‘অগ্নি’ সিরিজের এই ক্ষেপণাস্ত্র হবে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়াবহ পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লায় চলে আসবে মার্কিন মুলুকের অর্ধেকেরও বেশি অংশ। চীন, রাশিয়া-সহ গোটা এশিয়া মহাদেশ এবং ইউরোপের সিংহভাগ ইতোমধ্যেই ভারতের অগ্নি-৫ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মধ্যে রয়েছে। অগ্নি-৬ মিসাইলের পাল্লা হবে তার চেয়েও দ্বিগুণ। ৫,৮০০ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে অগ্নি-৫ নির্ভুল আঘাত হানতে পারে।

অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে রয়েছে বর্তমানে পরমাণু অস্ত্র বহনে সক্ষম ছয় ধরনের ব্যালাস্টিক মিসাইল। এছাড়া স্বল্পপাল্লার শাহীন-১ ও মাঝারিপাল্লার শাহীন-৩ নির্মাণাধীন রয়েছে। দেশটি স্থলভূমিতে ক্ষেপণযোগ্য বাবুর (হাতফ-৭) ও আকাশসীমায় ক্ষেপণযোগ্য রাদ (হাতফ-৮) নামে দুটি ক্রুজ মিসাইল নির্মাণ করছে।

গো নিউজ২৪/আই

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর