নগ্ন করে ও মলমূত্র খাইয়ে হত্যা!


আন্তর্জাতিক ডেস্ক প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০১৭, ০৪:১৫ পিএম
নগ্ন করে ও মলমূত্র খাইয়ে হত্যা!

ভারতের স্বাধীনতার ৭০ বছর। তার পরও দেশের কোনও না কোনও স্থানে নিত্যদিনই মহিলাদের উপর শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু রাজস্থানে সম্প্রতি এক নারীর উপর যেরকম পাশবিক অত্যাচার চালাল স্থানীয় খাপ পঞ্চায়েত, তার নজির মেলা ভার।

তুকতাকের অভিযোগে ৪০ বছরের এক নারীর উপর নৃশংস অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে রাজস্থানের আজমের জেলার কেকরি গ্রামে। নির্যাতিতার ১৫ বছরের সন্তান পুলিশকে যে বিবরণ দিয়েছে ওই অত্যাচারের, শুনে পুলিশকর্তারাও চমকে উঠেছেন। 

পাশবিক অত্যাচারের ২৪ ঘন্টার মধ্যে নির্যাতিতার মৃত্যু হয়। এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, কিন্তু মূল অভিযুক্ত খাপ পঞ্চায়েত সদস্যদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। নিহত ওই নারীর ১৫ বছরের ছেলে আতঙ্কে কাঁপতে কাঁপতে সেদিনের ঘটনার কথা পুলিশকে জানিয়েছে। তার অভিযোগ, ডাইনি সন্দেহে মায়ের উপর চড়াও হয় গ্রামের মোড়লরা। 

প্রথমে ওই নারীর কাছের একটি মাঠ থেকে গ্রামবাসীদেরই মল তুলে এনে খাওয়ানো হয়। পান করানো হয় মূত্র। সেই সঙ্গে নর্দমার নোংরা জল। পরে শুরু হয় গণপিটুনি। মোড়লদের দাবি, ওই মহিলার জন্যই নাকি গ্রামের কিশোরী, যুবতীদের উপর ‘প্রেতাত্মা’ ভর করছে। প্রেতাত্মা তাড়ানোর জন্য ‘ডাইনি’কে পিটিয়ে মারার নির্দেশ দেয় স্থানীয় এক ওঝা। 

সেইমতো গ্রামের ৮-১০ জন মাতব্বর ওই নারীকে বেদম পিটুনি দেয়, দাঁড় করিয়ে মহিলার চুল টেনে ছিঁড়ে নেওয়া হয়। ওই নারী বারবার হাতজোড় করে ক্ষমা চাইলেও কর্ণপাত করেনি দুর্বৃত্তরা। নগ্ন করিয়ে ওই মহিলাকে চলে মারধর। হাতে-পায়ে জ্বলন্ত কয়লা ঢেলে তুকতাক করার স্বীকারোক্তি চাওয়া হয়।

নির্যাতিতার উপর এই অত্যাচার দেখে হতভম্ব হয়ে পড়ে তার ১৫ বছরের পুত্র রাহুল। গ্রামবাসীদের হাতে-পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলেও তার কথা শোনেনি কেউ। পুলিশকে এই সব কথা বলতে বলতে বারবার কেঁদে ফেলছে অভিযোগকারী কিশোর। সদ্যই বাবাকে হারিয়েছে সে, এবার মা’র প্রাণও কেড়ে নিল খাপ পঞ্চায়েত। ওই কিশোরের বয়ান শুনে শিউরে উঠছেন পুলিশকর্তারাও।

নির্যাতিতার মৃত্যুর পর ছেলের সামনেই মায়ের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। যারা নির্যাতিতাকে পিটিয়ে মেরেছে, তাদের স্থানীয় একটি পুকুরে স্নান করে ‘পাপ’ ধুয়ে ফেলার নিদান দেয় খাপ পঞ্চায়েত।

নারকীয় এই হত্যালীলার পর মৃতার সন্তানের জন্যও বসে বিচারসভা। যারা ওই মহিলাকে পিটিয়ে মেরেছে, তাদের উপরেই রাহুলের দেখভালের দায়িত্ব পড়েছে। হত্যাকারীদের ২৫০০ টাকা জরিমানা করে রাহুলকে পুলিশের কাছে যেতে বারণ করা হয়। 

স্থানীয় ‘বাল এবং মহিলা চেতনা সমিতি’র চেয়ারপার্সন তারা আলুহওয়ালিয়া এই ঘটনা শুনে বলেন, ‘রাহুলের চোখের সামনে যা যা ঘটে গিয়েছে, কবে ওই একরত্তি ছেলে এই ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারবে জানি না।’ দোষীদের কড়া শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তিনি।

গো নিউজ২৪/এএইচ

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর