এক কিশোরীর অন্ধকার জগতের গল্প


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ২০, ২০১৭, ০৬:২৮ পিএম
এক কিশোরীর অন্ধকার জগতের গল্প

স্বাভাবিক জীবনযাপনের বাইরের একটি অন্ধকার জগৎ হচ্ছে পতিতাবৃত্তির দুনিয়া। যেখানে প্রতিদিন বিক্রি হয় কিশোরী, বয়স্ক নারী কিংবা রোগাক্রান্ত তরুণীর শরীর; যেখানে এসব কিছুই কোনো ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় না। 

পতিতালয়ে অনেকে তরুণীর আশ্রয় হয় অপহরণের শিকার হওয়ার পর, অর্থের লোভে পরিবার থেকে বিক্রি কিংবা অন্ধকার এ জগতের ভেতরেই জন্ম হওয়ার কারণে। অধিকাংশের জন্য তাদের পূর্ববর্তী জীবন, পিতা-মাতার স্মৃতি কিংবা তাদের বন্ধুত্ব, প্রেম সবকিছুই অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে।

দক্ষিণ এশিয়ায় রয়েছে সবচেয়ে বৃহত্তম পতিতাবৃত্তির নেটওয়ার্ক। এটা যেমন আছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের সোনাগাছিতে তেমনি আছে বাংলাদেশের ফরিদপুরে অথবা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশে। 

স্থান ভিন্ন হলেও এই পতিতালয়ের যৌনকর্মী, শিশু পাচার ও নিপীড়নের গল্প প্রায় একই। বাংলাদেশি কিশোরী যৌনকর্মী আফসানার এ গল্প আপনাকে দেবে তার দুঃষহ জীবনের অভিজ্ঞতা। রোববার প্রখ্যাত আলোকচিত্রী জেএমবি আকাশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেয়া এক স্ট্যাটাসে তুলে ধরেছেন আফসানার জীবনের গল্প।

সেখানে তিনি তুলে ধরেছেন আফসানার চির-সবুজ মাঠ দেখার স্বপ্ন, বন্দিদশা থেকে মুক্তি ও স্বাধীনভাবে মন খুলে কথা বলার আকাঙ্ক্ষা।

আফসানা বলেন, ‘পতিতালয়ের বন্ধ দরজার আড়ালে তার দম বন্ধ হয়ে আসে। সবুজ মাঠে নির্মল নিঃশ্বাস নিতে চান তিনি। এ চাওয়াকে নিজের রোগ হিসেবে উল্লেখ করেন ওই কিশোরী।’

কিশোরী এই যৌনকর্মী বলেন, ‘আমার হাসির মাঝে কান্না চলে আসে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। এটা আমাদের মায়ের জন্য অনেক সমস্যা তৈরি করে। আমাদের মা হলেন, আমাদের ম্যাডাম। আমি তাকে আশ্বস্ত করি, শিগগিরই সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। আমি শুধুই হাসব, কখনও কান্না করব না।’

‘কীভাবে আমি এই পতিতালয়ে এসেছিলাম, আমার কোনো ধারণা নেই; আমি অনেক ছোট ছিলাম। কিছুই মনে পড়ে না। তবে আমার একমাত্র সমস্যা হলো, এখানে বেঁচে থাকা অনেক কঠিন।’ তবে আফসানা এখানও স্বপ্ন দেখেন তার হারানো পরিবারকে ফিরে পাবেন। তখন আর নিজেকে কখনোই একাকী মনে হবে না।

পরিবারের কারও চেহারাই আর মনে করতে পারেন না আফসানা। ‘আমি চোখ বন্ধ করলে কাউকে দেখতে পাই না। সবসময় নিজেকে একাকী মনে হয়। তবে আফসানার সঙ্গীরা তাকে বলেন, তাদেরও কেউ নেই। কিন্তু আমি বলি, আমার কেউ না কেউ অবশ্যই থাকা উচিত; তা হতে পারে একজন মা, বাবা অথবা হারানো একটি পরিবার।’

আফসানা বলেন, ‘আমি কাউকে কখনও স্মরণ করতে পারি না। একটি মুখ মনে করার জন্য আমি অনেক চেষ্টা করি; মাত্র একটি মুখ। কিন্তু কাউকে মনে করতে পারি না। আমার বন্ধু প্রিয়াঙ্কা; আমার চোখের জলে মেকআপ নষ্ট হওয়ার আগে তা (আমার চোখের জল) মুছে দেয়। সে সবসময় আমাকে মনে করিয়ে দেয়, আমার চোখের জলের চেয়ে মেকআপের দাম অনেক বেশি। ’

সে আমাকে বলে, ‘একদিন আমরা সবুজ মাঠে যাব। সে আমাকে সবুজ মাঠে নিয়ে যাবে। সেখানে যত ইচ্ছা আমি মুক্ত নিঃশ্বাস নেব। আমার একটাই আশা, ওইদিন আমি কাউকে দেখতে পাব; যেদিন আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসবে। জীবনে একবারের জন্য হলেও, আমি অনুভব করতে চাই যে, আমি একা নই।’

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর