৩ ডিমেই ১১৭ বছর!


প্রকাশিত: এপ্রিল ১৯, ২০১৭, ০১:০৪ পিএম
৩ ডিমেই ১১৭ বছর!

ঊনবিংশ শতাব্দীর একমাত্র প্রতিনিধি এমা মোরানো।  গত ৯০ বছর ধরে এমা প্রতিদিন তিনটে করে ডিম খেতেন। দু’টো কাঁচা, একটা ভাজা। আর এটাই তার দীর্ঘ জীবনের রহস্য ছিল বলে জানিয়েছেন এমা মোরানোর চিকিৎসকরা।   অবশেষে ১১৭ বছর পাঁচ মাস বয়সে মারা যান 

এমার জন্ম উত্তর ইতালির চিভিয়াস্কোতে। ১৮৯৯ সালের ২৮ নভেম্বর। আট ভাই-বোনের মধ্যে এমাই ছিলেন সবচেয়ে বড়। ভাই-বোনদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেঁচেছেন তিনি। ২০ বছর বয়সে ধরা পড়ে রক্ত স্বল্পতা। তখন চিকিৎসকরা জানান, প্রতিদিন খেতে হবে দু’টো করে কাঁচা ডিম। সেই থেকে ডিমে অগাধ ভরসা এমার। অন্তত ২৭ বছর ধরে সেই নিয়মের নড়চড় হতে দেখেননি চিকিৎসকরা। 

চিকিৎসক কার্লো বাভা বলেন, ‘আমি যখন ওকে প্রথম দেখি তখন থেকে তিনটে করে ডিম খেতেন দিনে। সকালে দু’টো কাঁচা। আর দুপুরে একটার ওমলেট। আর রাতে মুরগির মাংস। শাকপাতা বা ফল বিশেষ খেতে দেখিনি কখনও।’

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মৃত্যু হয় এমার প্রেমিকের। তারপর আর বিয়ের ইচ্ছে ছিল না তার। ২৬ বছরে তাকে রীতিমতো জোর করেই বিয়ে করেন এক জন। কিন্তু বিয়ের পর শুরু হয় অত্যাচার। সাত মাসের সন্তানের মৃত্যুর পর এমা ইতি টানেন সেই বিবাহিত জীবনে। ১৯৩৮ সালে স্বামীকে ছেড়ে চলে আসেন তিনি। তারপর আর বিয়ে করেননি। 

তাঁর কথায়, ‘আমি চাইনি কেউ আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমায় দিয়ে কিছু করাক।’ ১৯৭৮ সালে স্বামীর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত অবশ্য বিবাহ বিচ্ছেদও হয়নি তাদের। দীর্ঘ ৮০ বছর একাই কাটিয়েছেন এমা।

শেষ কুড়ি বছর থেকেছেন ভের্বানিয়ায়, লেক মাজোর-এর তীরে তার ছোট বাড়িটিতে। ৭৫ বছরে একটি বোর্ডিং স্কুলে রান্নার কাজ থেকে অবসর নেন। আট ভাই-বোনের মধ্যে সবচেয়ে দীর্ঘায়ু ছিলেন তিনিই। ফলে ধীরে ধীরে কমে আসতে থাকে আত্মীয়-স্বজনের সংখ্যা। কানে কম শোনা, চোখে কম দেখা থুত্থুড়ে বুড়ির বন্ধু-বান্ধবরা তখন বিদায় নিয়েছে।

বেঁচে থাকা কিছু স্বজন মিলেই গত বছর শেষ জন্মদিন পালন করেন এমা। কথায় কথায় উঠে আসে তার লম্বা জীবনের গল্প। দুই বিশ্বযুদ্ধ, পাটের কারখানায় তার ব্যাগ বানানোর দিনগুলো, অত্যাচারিত হয়ে স্বামীর থেকে আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্ত- সব। 

এমা জানিয়েছেন, দীর্ঘ জীবনের বীজ তার জিনেই। তার মা, মাসি এবং পরিবারের আরও অনেকেই ৯০ পেরিয়েছিলেন। তার এক বোন আঞ্জেলা মোরানো মারা যান ১০২ বছর বয়সে। গত মে মাসে নিউইয়র্কে সুসানা মুশাট জোনসের মৃত্যুর পর এমাই ছিলেন সরকারিভাবে সবচেয়ে প্রবীণ। তার মৃত্যুর পর এখন বেঁচে রইলেন জামাইকার ভায়োলেট ব্রাউন। এমার থেকে পাঁচ মাসের ছোট তিনি।

চিকিৎসক কার্লো জানিয়েছেন, গত শুক্রবারও এমার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। বাকি দিনগুলোর মতোই তিনি হাতটা জড়িয়ে ধরে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন ডাক্তারকে। এরপর ফের তাদের দেখা হয় শনিবার। বাড়ির আরাম কেদারায় তখন চিরঘুমে এমা।

গো নিউজ২৪/এএইচ

এক্সক্লুসিভ বিভাগের আরো খবর