শাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগের মূল ঘটনা অবশেষে জানা গেল


বিনোদন ডেস্ক প্রকাশিত: মার্চ ২১, ২০২৩, ০৭:১৩ পিএম
শাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগের মূল ঘটনা অবশেষে জানা গেল

ঘটনার ৭ বছর পর গত ১৫ মার্চ ‘অপারেশন অগ্নিপথ’-এর অন্যতম প্রযোজক রহমত উল্ল্যাহ লিখিত আকারে শাকিব খানের বিরুদ্ধে ধর্ষণসহ গুরুতর অভিযোগ জমা দেন প্রযোজক-পরিবেশক, পরিচালক, শিল্পী সমিতি ও ক্যামেরাম্যান সমিতিতে।

এরপর জলঘোলা কম হলো না। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলছে গত ৬ দিন ধরে। যেখানে রহমত-শাকিবের বাইরেও কথা বলেছেন নায়িকা শবনম বুবলী, শাকিবের অস্ট্রেলিয়ান আইনজীবীসহ ঢালিউডের নানা ব্যক্তি। প্রযোজক প্রকাশ করেছেন অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ অফিসের মামলার বিবরণী, শাকিব খানের হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন দেশটিতে নিযুক্ত আইনজীবী।

এত কিছুর পরও যেন সঠিক তথ্যের তল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিলে না। অবশেষে সেই তলের খোঁজ দেওয়ার চেষ্টা করলেন নির্মাতা আশিকুর রহমান। যিনি ‘অপারেশন অগ্নিপথ’-এর চিত্রনাট্যকার ও নির্মাতা। আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণের ৬ দিন পর এই নির্মাতা জানান মূল ঘটনার সচিত্র গল্প।   

তার বয়ানে, ‘২০১৮ সালে শাকিব খান ও অন্য কলাকুশলীরা যখন হোটেল হলিডে ইন-এ অবস্থান করছিলেন, তখন অস্ট্রেলিয়া পুলিশের দুজন তদন্ত কর্মকর্তা তার রুমে যান। প্রায় ২০-৩০ মিনিটের অবস্থান শেষে তারা অন্যদের আরও কিছু সাধারণ প্রশ্ন করে চলে যান। এই ঘটনা ছাড়া শাকিব খানের সঙ্গে পুলিশের আর কোনও ইন্টারেকশন আমার জানা নেই।’

জানা না থাকলেও অস্ট্রেলিয়ান পুলিশের সঙ্গে আবারও রফাদফা হয় শাকিব খানের। যা আশিকুর রহমানের বয়ানে স্পষ্ট। তিনি বলেন, ‘হোটেলে এসে জিজ্ঞাসাবাদের একদিন পর, আমি, রবিউল রবি ও শাকিব খানের আরেকজন লিগ্যাল প্রতিনিধি কোগরা পুলিশ স্টেশনে যাই, উক্ত ঘটনার বিস্তারিত জানার জন্য। শাকিব খানের প্রতিনিধি পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন কাগজপত্র নিয়ে আলাদা একটি রুমে বসেন। প্রায় ১ ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার আলোচনা শেষে, তদন্ত কর্মকর্তা আমাদের জানান, জনাব শাকিব খানের বিরুদ্ধে করা অভিযোগের সত্যতার প্রমাণ পাননি তারা। এরপর তিনি শাকিব খানের সঙ্গে সরাসরি ফোনে কথা বলেন এবং তাকে নিশ্চিন্তে সিডনিতে শুটিং করতে বলেন।’

তার নির্মিতব্য ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ চলচ্চিত্রটির সূত্র নিয়ে বিগত কয়েক দিনে যে আলাপ-আলোচনা চলছে, সেসব বিশ্লেষণ করেই পরিচালক হিসাবে আশিকুর রহমান তার অবস্থান ও বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন মঙ্গলবার (২১ মার্চ) নিজের ফেসবুক দেয়ালে।

তার মতে, শাকিব খানের নামে যে অভিযোগগুলো এসেছে, সেগুলো ত্রুটিপূর্ণ ও বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তার ভাষ্যে, ‘আমি উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনেছি। আমার মনে হয়েছে, অভিযোগ করার মাধ্যমে কী লক্ষ্য অর্জন করতে যাচ্ছে- এটা অভিযোগকারীর কাছেই পরিষ্কার নয়। যদি অনৈতিক কোনও কাজ কেউ সংঘটন করে থাকে, তবে তা যেকোনও দেশের আইনে অপরাধ। এবং আমাদের সবার সেটার বিচার চাওয়া উচিত। কিন্তু ঘটনার বদলে টাকা বা অন্য কোনও সুবিধা চাওয়াটা পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। তবে অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগ পর্যন্ত যেকোনও অভিযোগকে সত্যি বলা যায় না। এবং অপরাধ প্রমাণের দায়িত্ব একমাত্র পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর।’

এ নির্মাতা মনে করেন, একটি চলচ্চিত্রের ঘাড়ে বন্দুক রেখে, ব্যক্তিগত রোষানলের বিষয়ে সমাধান করা অগ্রহণযোগ্য।

জানান, শাকিব খান ২০১৬ ও ২০১৮ সালে দুইবার অস্ট্রেলিয়াতে শুটিং করতে গেছেন। এরমধ্যে ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় ৭-৮ দিনের শুটিং করেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে একই নির্মাতার ‘সুপার হিরো’ চলচ্চিত্রের শুটিং করতে যান। নির্মাতার জবানিতে, ‘শাকিব খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়, তিনি নাকি পালিয়ে গেছেন অস্ট্রেলিয়া থেকে, যেটা বাস্তবে কখনও সম্ভব না। এই দেশে কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আসলে, তা খতিয়ে শেষ না দেখা পর্যন্ত, তাকে দেশ ত্যাগ বা প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। ২০১৬ এবং ২০১৮ সালে এই দুই চলচ্চিত্রের সব কলাকুশলী সম্মান ও আতিথেয়তা সহকারে অস্ট্রেলিয়া আগমন ও ত্যাগ করেন।’

তার মানে এই নয়, যে জল্পনা উঠেছে বাজারে তার সত্যতা একদমই নেই। সেই রেশ মিলেছে আশিকুর রহমানের কণ্ঠেও। তিনি বলেন, ‘যেকোনও কাজ করার সময় ছোটখাটো অনেক ত্রুটি হয়। সেগুলোকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করাটা মোটেও সমীচীন নয়। খাবার-দাবারসহ যেসব অনর্থক অভিযোগ এসেছে, সেগুলো আসলে অনভিপ্রেত ও ক্ষুদ্র মানসিকতার পরিচয় দেয়। শাকিব খান এবং আমরা যতক্ষণ একসঙ্গে শুটিং করেছি, কখনও আপত্তিকর কিছু চোখে পড়েনি। এছাড়া কাজের বাইরে কারও ব্যক্তিগত বিষয়ে আমি কখনও আগ্রহ দেখাইনি। আমি যে কয়বার অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশে ব্যক্তিগতভাবে শুধু এই মুভির (অপারেশন অগ্নিপথ) জন্য গিয়েছি, তার খরচ এই মুভিতে আমার পারিশ্রমিকের থেকে বেশি। এই মুভিতে কাহিনিকার ও পরিচালক হিসাবে আমি যে সময় ও শ্রম দিয়েছি, তা টাকার অঙ্কে মূল্যায়ন করা সম্ভব নয়।’

‘অপারেশন অগ্নিপথ’ চলচ্চিত্রটি অস্ট্রেলিয়া ও বাংলাদেশ মিলিয়ে শুট করার একটাই উদ্দেশ্য ছিল নির্মাতার, সেটা হলো- অনিন্দ্য সুন্দর অস্ট্রেলিয়াকে বাংলাদেশের সিনেমার পর্দায় তুলে ধরা। তার ভাষায়, ‘কিছু স্বার্থান্বেষী ও ঈর্ষাকাতর মানুষের কারণে অসাধারণ একটি গল্প পর্দায় আনতে পারিনি। এই মুভিটি পর্দায় এলে বাংলা ভাষায় দর্শকরা অসাধারণ একটি স্পাই থ্রিলার উপভোগ করতে পারতো। আমরা সবাই এখনও চাই এই মুভির কাজ শেষ করতে। সময় বলে দেবে, এই চাওয়াটা কতটুকু পাওয়া সম্ভব। তবে, মাত্র ৮ দিনের শুটিং আর দুই মিনিটের টিজারে যে ঘটনার জন্ম দিয়েছে, আমার মনে হয় না বিগত কয়েক বছরে কোনও চলচ্চিত্র এতটা আলোচনা ও সমালোচনার  জন্ম দিয়েছে।’

তবু নির্মাতা আশিকুর রহমান স্বপ্ন দেখেন ‘অপারেশন অগ্নিপথ’ মুভিটি সত্যিকারের অগ্নিপথ পাড়ি দিয়ে একদিন সোনালি পর্দায় মুক্তি পাবে!

প্রসঙ্গত, ‘অপারেশন অগ্নিপথ’র শুটিং সুবাদে অস্ট্রেলিয়ায় শাকিব খানের সঙ্গে অ্যানি সাবরিনের প্রথম দেখা হয় ২০১৬ সালের ৩১ আগস্ট। এরপর থেকে অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়া শাকিব খানের নিয়মিত ট্রান্সপোর্ট, হোটেল, খাওয়া-দাওয়া ও যাবতীয় বিষয়াদি দেখাশোনা করতেন অ্যানি। মূলত সেই সূত্রেই ধর্ষণের ঘটনা ঘটে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিনোদন বিভাগের আরো খবর