ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ঋণ ৫৪ হাজার কোটি টাকা


অনলাইন ডেস্ক প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১২, ২০১৬, ০৮:০০ এএম
ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ঋণ ৫৪ হাজার কোটি টাকা

লাগামহীন দুর্নীতি ও সীমাহীন লুটপাটের কারণে ব্যাংকিং খাতে মন্দ ঋণের পরিমাণ বেড়েই যাচ্ছে। এজন্য পরিচালকদের ঋণ ভাগাভাগি, যাচাই-বাছাই ছাড়া ঋণ বিতরণ ও পুনর্গঠিত ঋণ বারবার খেলাপি হওয়ার বিষয়টি বেশি দায়ী বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

তাদের মতে, এভাবে চলতে থাকলে ব্যাংক খাত এক সময় অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন লাখ লাখ সাধারণ গ্রাহক। কেননা এসব অর্থের বেশির ভাগ অংশের মালিক তারা।

জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, দুর্নীতির মাধ্যমে যোগসাজশ করে যেসব ঋণ বিতরণ করা হয়েছে সেগুলো এখন খেলাপি। বিশেষ করে রাজনৈতিকভাবে প্রভাব খাটিয়ে এবং পরিচালকদের ভাগাভাগি করে নেয়া ঋণ আদায় হচ্ছে না। সাধারণত এ ধরনের ঋণ আর ফেরত আসে না। সে কারণে মন্দ বা ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ঋণ বাড়ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ৬৫ হাজার ৭৩১ কোটি ১১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ঋণ রয়েছে ৫৪ হাজার ১৭৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকে মন্দ ঋণ একদিনে হয়নি। কয়েক বছর ধরে ব্যাংকগুলো সঠিকভাবে ঋণ বিতরণ করেনি। দুর্নীতি ও বড়লোকদের যোগসাজশে দেয়া ঋণ বেশির ভাগই এখন ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপির তালিকায়। এসব ঋণ আর ফেরত আসবে না। তবে এ ধারা বন্ধ করতে হলে দুর্নীতি ও অদক্ষতা দূর করতে হবে।

এদিকে প্রাপ্ত তথ্যে আরও দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি ৬ ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ঋণ ২৫ হাজার ৩৫০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা মোট ঋণ বিতরণের ২১ দশমিক ২৯ শতাংশ। একইভাবে সরকারি বিশেষায়িত ২ ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ৪ হাজার ৭৪০ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ৩৯টি ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা, যা ৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ এবং বিদেশী ৯ ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৯৬ কোটি ১১ লাখ টাকা, যা ৮ দশমিক ১৭ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বেপরোয়াভাবে ঋণ নিচ্ছে কিছু লোক। কাউকে তোয়াক্কা করছে না। ঋণ ফেরত না দিলে কিছুই হবে না- এমন ধারণা থেকে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। কারণ এখন পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এর আগে জুন প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৬৩ হাজার ৩৬৫ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ঋণ রয়েছে ৫০ হাজার ৬৫৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা।

তথ্যে আরও দেখা যায়, জুন শেষে সরকারি ৬ ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ঋণ ছিল ২৪ হাজার ৯৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, যা মোট ঋণ বিতরণের ২০ দশমিক ৬২ শতাংশ। সরকারি বিশেষায়িত ২ ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ৪ হাজার ৭৪০ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা ২১ দশমিক ৩১ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ৩৯টি ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ১৯ হাজার ৮৫২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

বিদেশী ৯ ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৯৬৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। একইভাবে মার্চ প্রান্তিকে ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণ ছিল ৫৯ হাজার ৪১১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ঋণ রয়েছে ৪৭ হাজার ২৫৯ কোটি ৪৮ লাখ টাকা।

এর আগে মার্চ শেষে সরকারি ৬ ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ঋণ ছিল ২২ হাজার ৭৮২ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা মোট ঋণ বিতরণের ২০ দশমিক ২৬ শতাংশ। সরকারি বিশেষায়িত ২ ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ৩ হাজার ৯০৯ কোটি ৩ লাখ টাকা, যা ১৮ দশমিক ২৯ শতাংশ। বেসরকারি খাতের ৩৯টি ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ১৮ হাজার ৯৫৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকা, যা ৪ দশমিক ৩০ শতাংশ ও বিদেশী ৯ ব্যাংকের ঝুঁকিপূর্ণ খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৬১৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা, যা ৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ। সূত্র: যুগান্তর 

 

গো নিউজ২৪/জা আ 

অর্থনীতি বিভাগের আরো খবর