নারী পুলিশের প্রেমের টোপ!


নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: জানুয়ারি ১২, ২০১৯, ০৯:১২ এএম
নারী পুলিশের প্রেমের টোপ!

নওগাঁ: অভিনব কায়দায় নওগাঁ সদর থানায় মূলহোতাসহ ডাকাত দলের ১২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

ঘটনার সূত্রপাত, ট্রাকচালক লিটন আলী (২৩)। বাড়ি চুয়াডাঙ্গা জেলার নুরনগর গ্রামে। গত বছরের ১২ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গা থেকে ট্রাকে করে ৫০০ বস্তা মুরগির ফিড নিয়ে রংপুরের উদ্দেশে রওয়ানা হন। নাটোর টু বগুড়া রোডে সিংড়া বাজার থেকে দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ১০ থেকে ১২ জনের অজ্ঞাত ডাকাত দল একটি মিনি ট্রাক দিয়ে তাদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই চার ডাকাত ট্রাকের কেবিনে ওঠে চালক ও চালকের সহযোগীকে ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে গামছা দিয়ে চোখ-মুখ ও রশি দিয়ে হাত পা বেঁধে ফেলে। সঙ্গে থাকা ১৩ হাজার টাকা ও দুইটি মোবাইল ফোনও কেড়ে নেয়া হয়।

এরপর ডাকাতদের মিনি ট্রাকে তাদের উঠিয়ে নেয়া হয় এবং অন্য ডাকাত সদস্যরা মালবাহী ট্রাক নিয়ে একই দিকে চলে যান। পরের দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে নওগাঁ শহরের বাইপাস বরুনকান্দি মোড়ে তাদের ফেলে দিয়ে চলে যাওয়া হয়। পরে নাইটগার্ড শমসের আলী তাদের উদ্ধার করেন এবং টহল পুলিশকে বিষয়টি অবগত করেন। ট্রাকচালক লিটন আলী বাদী হয়ে ওইদিন অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলা করেন।

মামলাটির দায়িত্ব পড়ে থানার পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন) এমএম ফয়সাল আহম্মেদের কাছে। শুক্রবার তিনি সংবাদকর্মীদের কাছে এই ডাকাত গ্রেফতারের কৌশলের কথা বর্ণনা দিয়ে বলেন, ডাকাত মেহেদী হাসানকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে গ্রেফতার করা হয়। তার বাড়ি বগুড়ার দুপচাচিয়া উপজেলার ইসলামপুরে। স্ত্রী ও সংসার আছে। এরপর তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিত্বে তার সহযোগীদের গ্রেফতার করা হয়।

পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সোর্সের মাধ্যমে মেহেদীর ফোন নম্বর সংগ্রহ করা হয়। এরপর তার নম্বরে একটা কল করা হয়। তারপর বেশ কয়েকদিন নম্বরটি বন্ধ থাকে। এরপর মেহেদীর নম্বরটি থানার এক নারী পুলিশ কনস্টেবলকে দেয়া হয়, তাকে ডায়াল করার জন্য। ডাকাত মেহেদীর ফোন নম্বরে রিং হতে থাকে। অবশ্য তিনি একটা আলাদা সিমও ওই নারী পুলিশকে দিয়েছিলেন। ওই নারী পুলিশ ডাকাতের সঙ্গে কলেজছাত্রীর পরিচয় দিয়ে প্রেমের অভিনয় শুরু করেন। এতে টোপ গিলে মেহেদী। নারী পুলিশ ওই ডাকাতকে জানান, তিনি পড়াশোনার পাশাপাশি টিউশনি করে নিজের খরচেই চলেন। টিউশনি করে ১২ হাজার টাকাও জমিয়েছেন। কয়েকদিনের এসব মিষ্টি কথায় নারী পুলিশের প্রেমে পড়েন ডাকাত মেহেদী। একে অপরকে না দেখেই বিয়ে করারও কথাও চলতে থাকে। এরপর প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে চান মেহেদী। ওই নারী পুলিশও তার সঙ্গে দেখা করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।

তিনি আরো বলেন, অবশেষে গত ২২ অক্টোবর ওই নারী পুলিশ বগুড়ার আদমদিঘী উপজেলা সদরে সিএনজিস্ট্যান্ডে ‌‘প্রেমিক’ ডাকাতের সঙ্গে দেখা করতে যান। বেচারা মেহেদী আগে থেকে সিএনজি ভাড়া করে বসে আছেন প্রেমিকাকে নিয়ে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবেন বলে। স্ট্যান্ডে দুজনের দেখা হয়। এরপর পুলিশ তাকে আটক করতে সক্ষম হয়।

মেহেদী দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে আরও ১২ জন ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। মেহেদীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলাও আছে।

গো নিউজ২৪/এমআর

অপরাধ চিত্র বিভাগের আরো খবর