‘থানায় আটকে নির্যাতন, ৫০ লাখ না দিলে ক্রসফায়ার করমু’


নিজস্ব প্রতিনিধি: প্রকাশিত: অক্টোবর ১৩, ২০১৮, ০২:২৮ পিএম
‘থানায় আটকে নির্যাতন, ৫০ লাখ না দিলে ক্রসফায়ার করমু’

নারায়ণগঞ্জ: সোনারগাঁয়ে এক ব্যবসায়ীকে বাড়ি থেকে ধরে এনে থানায় আটকে রেখে শারীরিক নির্যাতন ও ক্রস ফায়ারের ভয় দেখিয়ে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোরশেদ আলম ও উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাধন বসাকের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন ওই ব্যবসায়ী।

গত বৃহস্পতিবার নির্যাতিত ঠিকাদার ব্যবসায়ী জাহিদুল ইসলাম স্বপন বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশোক কুমার দত্তের আদালতে এই মামলা দায়ের করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে স্বপন বলেন, মোস্তফার (শানিক বয়েল পলিমার লিমিটেডের মালিকের বড় ভাই)  সঙ্গে ওসি সাহেবের কন্ট্রাক্ট হইছে। ৭ তারিখে (অক্টোবর) বিকেল ৪টায় কন্ট্রাক্ট হইছে যে, আমাকে তারা এই বাড়ি থাইকা উঠায়া দিয়া মোস্তাফাকে বুঝায়া দিব। ৫০ লাখ টাকার কন্ট্রাক্ট হওয়ার পরে তারা রাত্রে আড়াইটা বাজে আমাকে আমার বাসা থেকে তুইলে নিয়ে যায় এবং আমাকে তারা এত অত্যাচার করার পরে আমাকে বলছে যে, তোরে ক্রসফায়ার করমু। যদি তুই ৫০ লাখ টাকা দেস, তাইলে তোরে ক্রসফায়ার দিমু না। আমি কইছি, স্যার আমার পক্ষে টাকা দেওয়া সম্ভব না।

স্বপন আরো বলেন, ওসি সাব প্রথমে আমার দুই হাতে তার রুল দিয়া অনেকগুলা বাড়ি দিছে।  এরপরে হাত-পা বাইনধা আমার পায়ের পাতায় প্রায় ১৫/২০টা বাড়ি দিছে। যখন আমি চিল্লাচিল্লি করি, তখন আবার এসআই সাধনরে বলে যে, এবার তুমি মারো। পরে এসআই সাধন আমার হাতে মারে, পায়ের তালুতে মারে। মাইরা যখন আমি অজ্ঞান হয়ে যাই, অজ্ঞান হইয়া গেলে পরে আমারে নিয়া যায় হাসপাতালে। আমি জ্ঞান ফিরলে দেখি  যে, আমি হাসপাতালের টুলে বইসা আছি।

আদালতে করা মামলায় স্বপন উল্লেখ করেন, সোনারগাঁও উপজেলার দত্তপাড়া এলাকায় প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের তার একটি জমি রয়েছে। জমি থেকে তাকে সরিয়ে দিতে চাইছে, মেঘনা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান শানিক বয়েল পলিমার লিমিটেডের মালিকপক্ষ। এটা নিয়েই তাদের সঙ্গে বিরোধ ছিল স্বপনের।

ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষ হয়ে গত ৭ অক্টোবর মধ্য রাতে সোনারগাঁ থানার ওসি মোরশেদ আলমের নেতৃত্বে একদল পুলিশ জাহিদুল ইসলাম স্বপনকে তার বাড়ি থেকে হাত-পা এবং চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যান। মামলার বর্ণনায় বলা হয়, পরে তাকে থানার একটি কক্ষে আটকে রেখে নির্যাতন চালান এই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। ওই সময় ওসি মোরশেদ আলম ও এসআই সাধন বসাক জমিটি ছেড়ে না দিলে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যার হুমকি দেন।

জাহিদুল ইসলাম স্বপন জানান, নির্যাতনের পরের দিন ৮ অক্টোবর বিকেলে পুলিশ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নুর জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেন।

পরে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে জাহিদুল ইসলাম স্বপন বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম আশোক কুমার দত্তের আদালতে মামলা করেন। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে জেলা পুলিশ সুপারকে তদন্ত করে আগামী ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।

গো নিউজ২৪/এমআর 

অপরাধ চিত্র বিভাগের আরো খবর